স্বজন-প্রীতি ও মোটা অংকের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ

Spread the love

ইউএনও’র স্থগিত আর্দেশ অমান্য করে নিয়োগ পরীক্ষা

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গোন্তা আলিম মাদ্রাসায় স্বজন-প্রীতি ও মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ টি আর মো. আব্দুল মান্নান ও সভাপতি আব্দুর রহিম’র বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর এমন অভিযোগে গত ৪ ডিসেম্বর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে ৬ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা নেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি। এ সময় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বিদুৎসাহী মো. ইসহাক আলী সাংবাদিকদের নিউজটি না করার ঘুষ দিচ্ছেন এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গোন্তা আলিম মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, গবেষনাগার/ল্যাব সহকারী এবং দপ্তরী পদে ৪টি শূন্যপদে ২০২৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগের কথা পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ওই পদে যথাযথ নিয়মে আবেদন করেন অনেকেই। শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ১ম বার বিজ্ঞপ্তি দিলেও গত ২০২৫ সালের ২৪ অক্টোবর দৈনিক কলম সৈনিক পত্রিকায় ২য় বার বিজ্ঞপ্তি লিখে প্রকাশ করেন। এরপর ২০২৫ সালের ৩ ডিসেম্বর উক্ত দুটি বিজ্ঞপ্তির ৫টি পদের মধ্যে ৩টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করা হয়।
এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর ২০২৫ সালের ৮ অক্টোবর পূর্ণঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেন গোন্তা গ্রামের মো. আইয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তি।এছাড়াও মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী পদে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বিদুৎসাহী মো. ইসহাক আলীর ছেলে ফিরোজ আহমেদ কে, গবেষণাগার পদে কাউছার হোসেন কে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এরই প্রেক্ষিতে গত ৪ ডিসেম্বর তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। কিন্তু ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মজুমদার ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি পরীক্ষা নেন। এ সময় সাংবাদিক প্রশ্নে করলে তিনি জানান, ইউএনও’র এ নিয়োগ স্থগিত করার কোন নিয়ম নাই। উনার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। পাঁচটি পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিন পদের পরীক্ষা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি।  অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী পদে আবেদন কারী আরমান সরকার জানান, বিদুৎসাহী মো. ইসহাক আলীর ছেলে ফিরোজ আহমেদ কে আগেই নিয়েছে, তাই পরীক্ষা দিতে যাইনি।
একই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী জামাল ও খাইরুল ইসলাম জানান, আমাদের সামনেই একজন শিক্ষক বললেন ফিরোজ ও কাউছার কে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়েছে। এ অনিয়ম ও জালিয়াতি পরীক্ষার বিরুদ্ধে আমরা আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অপরদিকে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদন করা হাদিউল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই। অথচ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। তখন ২ হাজার ব্যাংক ড্রাফট করে আবেদন করেছিলাম। এখন যে ওই পদ স্থগিত করা হয়েছে সেটি আমাকে জানানো হয়নি। যেখানে ল্যাব নেই, সরকারিভাবে অনুমতি নেই। সে পদে চাকরি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া কি জালিয়াতি নয়।
অবশ্য, ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে গোন্তা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ টি আর মো. আব্দুল মান্নান বলেন, নিয়োগ বোর্ড ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির নির্দেশে তিন পদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর বিদুৎসাহী মো. ইসহাক আলীর ছেলে ফিরোজ আহমেদ কে অফিস সহকারী কাম-হিসাব সহকারী পদে চাকরি দিচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু পরীক্ষা হয়েছে কিন্তু নেওয়া হয়নি। ডিজির প্রতিনিধি উপস্থিত সকলের লিখিত পরীক্ষার খাতা নিয়ে গেছেন। যে পরীক্ষায় ভালো করেছে তাই নিয়োগ দেওয়া হবে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত জানান বলেন, আমার অফিস থেকে গত ৪ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য চিঠি দিয়েছি এবং ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পরীক্ষা নিবেন না এমনটাই আমাকে জানিয়েছিলেন। তারপরও নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছেন বিষয়টি জেনে তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মজুমদার জানান, ইউএনও নিয়োগ স্থগিত করেছেন এটা আমার জানা ছিল না। আবার উনি এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতও করতে পারেন না।  আর পরীক্ষার নেওয়া হয়েছে আমি সকলের কাগজপত্র নিয়ে যাচ্ছি। সকল কিছু আমাদের চেয়ারম্যান স্যারকে জানানো হবে। পরবর্তী উনি সিধান্ত জানাবেন।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD