আলী আক্কাছ, গুরুদাসপুর
চারিদিকে লিচুর বাগান। গাছে গাছে ধরেছে মুকুল। চারপাশে মিষ্টি সুগন্ধ। লিচুর উৎপাদন বাড়াতে বাগানে বাগানে চাষিরা মৌমাছির ‘মৌ বাক্স’ স্থাপন করেছেন। সেখান থেকে দলে দলে মৌমাছির ঝাঁক বসছে লিচুর মুকুলে। ধানের পরেই লিচুর আবাদে খ্যাতি রয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার। লিচুর বাগানে মৌমাছি চাষে মৌ খামারি ও লিচুচাষি দুপক্ষই লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, চাপিলা, ধারাবারিষা ইউনিয়নসহ উপজেলাজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে মোজাফ্ফর, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি জাতের লিচুর আবাদ হয়ে থাকে। গাছে গাছে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে মুকুল। আর গাছের নিচে ৭০ থেকে ৮০টি করে মৌ বাক্স বসিয়েছেন খামারিরা। মৌমাছির দল গাছে গাছে বসেছে। আবার উড়ে এসে বসছে মৌ বাক্সে।
মৌ চাষী সাইদুল ইসলাম, আব্দুল করিম, শাহিন আলম, সোহেল সরকার বলেন- বাগানে তারা শতাধিক ছোটবড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রানি মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নিজ নিজ মৌচাকে এনে জমা করে।
খামারিরা বলেন, সরিষার মধুর দাম বেশি। লিচুর মধু বাড়তি উপার্জন তাঁদের। স্থানীয় চাষি ছাড়াও সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পাবনাসহ দেশের অনেক জেলা থেকেও মৌচাষিরা আসেন মধু সংগ্রহে। ছোটবড় নানা আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন তারা।
নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচু চাষী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০০০ সালের দিকে নাজিরপুর ইউনিয়নে স্বল্প পরিসরে লিচুর আবাদ শুরু হয়েছিল। এখন উপজেলাজুড়েই বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে লিচু চাষে সফলতা পাচ্ছেন তাঁরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, লিচুর মুকুলে মৌমাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর ফলন বাড়ে। উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ৩ শতাধিক বাগান রয়েছে। বাগান গুলোতে ১০০ জন খামারি ৭ হাজার মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন। উপজেলায় ৩০ মে.টন লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা।#
