কে,এম আব্দুস সালাম
তাড়াশ আমার জন্মস্থান, তাড়াশকে ভালোবাসি আমি। আর সে কারণেই হয়তোবা অনেক দূরে থেকেও কোনো মুখে তাড়াশের নামটি শুনলেই আমার ভেতরে এক আলাদা ভালো লাগা কাজ করে। চোখে ভেসে উঠে হেমন্তের সোনালী মাঠ, বর্ষার বিল।
ক’দিন আগে একরকমই একটা অনুভূতি আমাকে নিয়ে যায় বিলের প্রান্তে।
ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার। ঢাকা শহরের বৃহৎ কাঁচা বাজার। অফিসের ব্যস্ততার কারণে খুব একটা যাওয়া হয় না বাজারে। এই ঝামেলাটা আমার স্ত্রীই বহন করছেন দক্ষতার সাথে। আমিও সুকৌশলে চাপিয়ে দিয়েছি তাঁর উপর এই কঠিন দায়িত্ব।
মাঝে মাঝে ছুটির দিনে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য বাজারে যাই। দেখি মানুষের ভীড়, ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে দাম নিয়ে রশি টানাটানি। এর মাঝেও মানুষের উপচে পড়া ভীড়। ডালার উপর রুপচাঁদা মাছের সাজানো দেখে মনে হয় এক অদ্ভুত শিল্পকর্ম।
একটা মাছের দোকানের সামনে দাঁড়াই। বেশ বড়ো বড়ো রুই কাতলা মাছের সাড়ি। সেখান থেকেই একটা মাছ কিনে কাটতে বলি। বিক্রেতা মাছ টুকরো করতে থাকে।
আমি জিজ্ঞেস করি, “কোথাকার মাছ?”
“সিরাজগঞ্জের,” জবাব দেয় দোকানি।
আবার জিগ্যেস করি, ” সিরাজগঞ্জের কোথা থেকে আসে?”
“মহিশলুটি”।
আমি চমকে উঠি! মহিশলুটি আমার তাড়াশেরই একটা মাছের বড়ো আড়ৎ। সেই আড়ৎ থেকে ঢাকার বাজারে তাড়াশের মাছ! আমি ফিরে যাই যমুনার ওপাড়ে প্রিয় তাড়াশে। তাড়াশের মৎস্যজীবী মানুষকে আমার বড়ো আপন মনে হয়। এই মাছকে মনে হয় সেইসব মানুষেরই পাঠানো এক উপহার ঢাকাবাসীর কাছে।
তাড়াশের সেইসব মানুষের কাছে আবারও খুব ঋণী মনে হয় নিজেকে। মনের গভীরে ভেসে উঠে তাড়াশ, আমার তাড়াশ!