নাটোরে মাতৃত্বকালিন ভাতা কার্ডের জন্য প্রতারণার শিকার ১৩২ নারী

Spread the love

আবুল কালাম আজাদ।।

নাটোরে মাতৃত্ব কালীন ভাতা কার্ডের জন্য মেডিকেল রিপোর্ট আনতে গিয়ে সদর উপজেলার লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের   স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর  প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক সন্তানসম্ভাবা নারী।
উপজেলার ভুক্ত ভোগীদের অভিযোগ,উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের নির্দেশ মোতাবেক মাতৃত্বকালিন কার্ড করার জন্য  মেডিকেল রিপোর্ট আনতে লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিদর্শিকা সুইটি বেগমের কাছে গেলে সুইটি  তাদের পাঠিয়ে দেন ‘হেলথ কেয়ার ’নামে শহরের চকরাম পুর এলাকার একটি ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে। সেখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই আলট্রাসনোগ্রাফির পাশাপাশি এক গাদা পরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে গরীব অসহায় নারীর প্রায় ৫ লাখ টাকা।
সদর উপজেলার গাজিপুর বিল এলাকার ভূক্তভোগি জরিনা খাতুনের জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের আবেদনের প্রয়োজনে মেডিকেল রিপোর্টের জন্য কিছু দিন আগেই উনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর কাছে গেলে  সুইটি রানী তাকে পাঠিয়ে দেন ‘হেলথ কেয়ার’ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাফির পাশাপাশি  চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করে নেয়া হয় ১৬শ টাকা। একই অভিযোগ করেন,পাশ্ববর্তী আটঘরিয়া গ্রামের  শাহিদা। তিনি জানান, বনপাড়ার জাহেদা হাসপাতাল থেকে তিনি আলট্রাসনোগ্রাফি করান। সেই রিপোর্ট নিয়ে সুইটি রানীর কাছে গেলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগের কাগজপত্র চলবেনা বলে জানান । পরে হেলথ কেয়ারে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয় ২৫শ টাকা। পুরো ইউনিয়নে সাথী, পাপিয়া, জেসমিন, আঁখি, লাইলি, আলেয়াসহ ১৩২ জন নারীর সাথে একই ঘটনা ঘটেছে দাবী করে ঘটনাটি সুষ্ঠুতদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসি। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় জানান, একজন নারী সন্তান সম্ভাবা কিনা তা জানার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এতো গুলো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধু মাত্র ইউরিন টেস্টের মাধ্যমেই বিষয়টি জানা যায়। আরেকটু নিশ্চত হবার জন্য বড়জোড় আলট্রাসনোগ্রাফিকরা যেতে পারে।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া স্বাস্থ্য পরিক্ষা করারও বিধান নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এতোগুলো পরীক্ষা কেন করানো হলো? সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি হেলথ কেয়ার ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইসমাইল হুসাইনের কাছে। তবে সুইটি রানীর সাথে সংখ্যতার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন তিনি।

ডা. ইসমাইল হুসাইন জানান, রোগীরা এসে  যা যা পরীক্ষা করতে বলেছেন,  আমরা শুধু সেই পরীক্ষা গুলোই করেছি। সুইটি রানী স্বাস্থ্য সেক্টরে একজন সরকারি কর্মকর্তা। এই হিসাবে তাঁর সাথে আমাদের একটা সু সম্পর্ক রয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে অনেক সময় তার পরিচিত জনকে আমাদের এখানে চিকিৎসার জন্য পাঠান।

তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্য ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমুলকবলে দাবি করে সুইটি বলেন, কাউকে হেলথ কেয়ার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠাননি তিনি ।
লক্ষীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু জানান, ইতি মধ্যে ঘটনাটির সমাধান চেয়ে তার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। ঘটনাটি পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনা করে কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দেয়া মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতেই মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের আবেদন করা যায়। গরীব অসহায় দুঃস্থ গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুইটি রানী। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবী জানান তিনি।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোসাঃ মাহফুজা খানম জানান, এর ইতিমধ্যে তিনি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুইটি রানীর বিষয়ে নানা অভিযোগ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।###

#আবুল কালাম আজাদ, গুরুদাসপুর, নাটোর, ০১৭২৪ ০৮৪৯৭৩# ২৮ /৫/২৩#

 

 

 

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD