জিটিবি নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার ‘বৃত্তের বাইরে’ গিয়েও কাজ করবেন জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)। তিনদিনের সম্মেলন শেষে এমন অঙ্গীকার নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন তারা। ২৮ থেকে ৩০ জুলাইয়ের ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৫’ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
সাংবাদিকদের একটি কাগজ দেখান তিনি। সেখানে দুটি বৃত্ত আঁকা রয়েছে। ছোট বৃত্তটি ডিসিদের কাজের পরিধি বোঝাচ্ছে। আর দ্বিতীয় ও বড় বৃত্তটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পরিধি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছেন, নিজেদের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে সচিব ডিসি সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তুগুলো তুলে ধরেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে আশরাফের নির্দেশনা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ বলেন, জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নির্দেশনা দিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রী কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। কতটুকু ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হবে, সেটি সম্পর্কে বলেছেন। বিকেন্দ্রীকরণ কার্যক্রম সময়সাপেক্ষ। যেমন- অস্ত্র চালানো জানে কিনা, সেটি না জেনে কারো হাতে অস্ত্র যেমন তুলে দেওয়া যায় না, ক্ষমতার ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। এ ক্ষেত্রে ভালো দিক-নির্দেশনা পেয়েছি আমরা মন্ত্রীর কাছ থেকে। একটি হলো- রাজনীতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। আর স্থানীয় কার্যালয়গুলো থেকে হবে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ।
উদ্বিগ্ন নন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগত জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) কোনো উদ্বেগের কথা জানাননি। একান্ত আলোচনায়ও হয়েছে তাদের সঙ্গে। কিন্তু তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ের কোনো ইস্যুও উত্থাপন করেননি। এতে বলা যায়- প্রশাসনে সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে।
সমন্বয় হচ্ছে ৫৩৪ প্রস্তাব
সচিব বলেন, জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৫-এ মোট ২২টি কার্য-অধিবেশন ছিল। এ ছাড়া চারটি আলাদা অধিবেশনও হয়। ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় এসেছে ৩১টি প্রস্তাব। তিনি বলেন, সম্মেলনের আগে জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলাম ২৫৩টি। এ তিনদিনে আরো ২৮১টি যোগ হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রস্তাব নিয়ে বসবো আমরা। তখন হয়তো কিছু প্রস্তাব ওভারলেপিং পাওয়া যাবে। তখন কমে আসবে। আরো কিছু হয়তো পাওয়া যাবে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। সেগুলো আবার বাদ যাবে। তবে তেমন প্রস্তাব নিশ্চয়ই কমই থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ ভূইঞা বলেন, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি প্রস্তাবে বেশ জোর দিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সে সব অনুসরণ করবেন। সচিব বলেন, বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। সেসব মাথায় রেখে কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত একটি পণ্য রফতানির উদ্যোগ, সবার জন্য ঘর, যাতে কেউ গৃহহীন না থাকেন; তেমনি কেউ যেন নিরক্ষর না থাকেন, সে লক্ষ্যে সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ করতে হবে। এছাড়া নৌপথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া, জলাধার সংরক্ষণ- প্রভৃতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বাস্তবায়ন মনিটরিং করবে মন্ত্রিপরিষদ
সচিব বলেন, আমরা চেয়েছি, অধিবেশনগুলো যেন অংশগ্রহণমূলক হয়। সবাই প্রশ্ন করবেন, সবাই জবাব দেবেন। তাই, সময় বেশি লেগেছে। বাস্তবায়ন হবে কিছু মন্ত্রণালয় পর্যায়ে, কিছু সংগঠন ও কিছু স্থানীয় পর্যায়ে হবে। সামগ্রিকভাবে যে বাস্তবায়ন, সেগুলো কেবিনেট থেকে মনিটরিং হবে নিয়মিত। সর্বাধিক প্রস্তাব শিক্ষা বিষয়ে মোশাররাফ বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব এসেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্তি সবচেয়ে বেশি রয়েছে।
