৩৬ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙ্গিয়ে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-এর মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত ৩০শে জুন এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমপ্রসারণ-১ শাখা। পাঁচজন নিয়মিত পরিচালক দায়িত্ব পালনের পরও একজন উপ-পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাকে (অতিরিক্ত পরিচালক, চলতি দায়িত্ব) ডিজি করায় ডিএই-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। কোন কোন কর্মকর্তার মধ্যে মুখ দেখাদেখি কার্যত বন্ধ রয়েছে। তারা বলছেন, শেষ বয়সে এসে অসম্মান নিয়ে চাকরি করার কোন মানে হয় না। কোন ধরনের কাজ ছাড়া আগামী ছয় মাস কাটিয়ে দেয়া যাবে। তাই জুনিয়র ডিজির সামনে বসে তার তোয়াজ করলে আখেরে কোন লাভ হবে না। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডিএইতে সর্বশেষ মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন এ জেড এম মমতাজুল করিম। গত ১লা জুলাই তিনি অবসরে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী নতুন ডিজি হওয়ার কথা ছিল পরিচালক সুনিল চন্দ্র ধরের। তার অবসরে যাওয়ার কথা আগামী ৩০শে ডিসেম্বর। কিন্তু ডিএই’র সবপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হতাশ করে গ্রেডেশন অনুযায়ী ৩৭ নম্বরে নাম থাকা মো. হামিদুর রহমানকে মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ করা হয়। এদের মধ্যে ৩১ জনই নতুন নিয়োগ পাওয়ার ডিজির চেয়ে সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তা। পাঁচ জন তার ব্যাচমেট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিজি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর হামিদুর রহমানের চেয়ে সিনিয়র কোন কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানাননি। শুধু তাই নয়, গত ১৭ই রমজান অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে ডিজি হামিদুর সব কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে টেবিলে টেবিলে যান। পরিচালকরা যে টেবিলে বসেছিলেন ওই টেবিলে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডিজি গেলেও তাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাজ নিয়ে ডিজির সঙ্গে পরিচালকদের খুব বেশি কথাও হচ্ছে না। ফলে কাজ কর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে এসব মানতে নারাজ বর্তমান ডিজি মো. হামিদুর রহমান। তিনি মানবজমিনকে জানান, এতদিন কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের সুনাম, সুখ্যাতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। এক মাস বা দুই মাসের নেতৃত্বের কারণে প্রতিষ্ঠানটি গতিশীল হচ্ছিল না। বিষয়টি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের ভাবিয়ে তোলে। এসব কারণেই সুপারসিড করে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জেনেছি। ডিএই’র ডিজি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে চেয়ে সব কিছু পাওয়া যায় না। কারণ মন্ত্রণালয়ের সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে সিনিয়র স্যারদের সঙ্গে আমি মিলেমিশেই কাজ করছি। আমাদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স। ওই কথা এরই মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়ে দিয়ে বলেছি, অতীতে কে কি করেছেন সেটা জানার দরকার নেই। এখন থেকে ভালভাবে কাজ করতে হবে। এদিকে ডিএইতে সাবেক ডিজির শেষ সময়ে দেদার বদলি বাণিজ্য হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন শাখার কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সিন্ডিকেট তাদের সুযোগ সুবিধা মতো এসব বদলি করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন শাখা মাঠ প্রশাসনের দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেছেন। এসব বদলি নিয়ে রয়েছে নানা কানাঘুষা। ডিএই’র এক কর্মকর্তা জানালেন, ডিএইতে প্রশাসন শাখায় কর্মরত আছেন দুই উপ-পরিচালক। অথচ অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হয়েও জোর করে উপ-পরিচালক (প্রশাসন)- এর হয়ে স্বাক্ষর করেছেন এক বিতর্কিত কর্মকর্তা। বদলি আদেশে উপ-পরিচালক (প্রশাসন)- এর পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে কারও কোন মাথাব্যথা নেই। কেউ কোন বাধাও দিচ্ছেন না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নাম ভাঙ্গিয়ে চলছেন ওই কর্মকর্তা। নিজেকে ডিএই’র নতুন ডিজির কাছের লোক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ডিএইতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসন শাখায় বিশেষ ওই কর্মকর্তাটি যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক কর্মচারীকে বদলি করেছেন। টাকার বিনিময়ে এসব বদলি করার জোর অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা জানান সিলেট, কুমিল্লা ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে। এসব জেলায় মূল পদের ১০ ভাগ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে ঢাকা ও বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় বদলি করে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। ওই কর্মকর্তাটি জানান, বদলি বাণিজ্যের এসব চিত্র নথি ঘাটলেই ধরা পড়বে। ওই কর্মকর্তাটি বদলি বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রভাব খাটিয়ে বিদেশও যাচ্ছেন। যখন তখন মন্ত্রীর দোহাই দিয়ে চলছেন। ওই বিশেষ কর্মকর্তাকে কেউ কিছু বলতে গেলেই দম্ভের সঙ্গে বলেন, মন্ত্রী আমাকে বসিয়েছেন খামারবাড়ি ঠিক করার জন্য। মন্ত্রীর পিএস শাহজালাল ও আমি মিলে দুই জনে মিলিতভাবে কাজ করছি।