গোলাম মোস্তফা : জেলার তাড়াশ উপজেলার সীমান্তবর্তী নওগাঁ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত নওগাঁ এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়ানোর ব্রত নিয়ে ১৯৫৮ সালে এফতেদায়ী শিক্ষা দিয়ে নওগাঁ শরীফিয়া ফাজিল মাদ্রাসার যাত্রা শুরু। সেই সময় নওগাঁ শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ.) মাজার কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বনের বেড়া আর টিনের চালের এ মাদ্রাসাটিতে তিনটি কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করা হত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অত্র এলাকার সাধারণ লোকজনের দান-অনুদানে বনের বেড়া আর টিনের চালের মাদ্রাসার জায়গায় একটি পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে ফ্যাসেলিটিজ ডিপার্টমেন্ট ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো একটি তিন কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করে দেয়। তবুও মাদ্রাসাটিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট চরমে।
বর্তমানে এ মাদ্রাসায় এফতেদায়ী প্রথম শ্রেণি থেকে দাখিল পর্যন্ত (প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে) পড়া-লেখা করছে ৪শ’ ৯৫ জন ছাত্র-ছাত্রী। অধ্যক্ষসহ শূন্য পদের তিনজনকে বাদ দিয়ে শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন ২৫ জন। শ্রেণিকক্ষ সংকটে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্মিত সেই জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ দান করা হচ্ছে। একই কক্ষে দুই দিক করে বসিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চলছে। এরপরও শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীদের আবাসিক রুমে এমনকি লাইব্রেরিতেও পাঠদান করা হয়ে থাকে। বেশি মুশকিলে পড়েছে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোন শ্রেণিকক্ষ নাই। মাঝে-মধ্যে মাদ্রাসার সাথে মসজিদের ভেতরেও পাঠদান করা হয়।
এদিকে ফ্যাসিালিটিজ ডিপার্টমেন্টের নির্মাণ করে দেওয়া ভবনটির শ্রেণিকক্ষে এক ব্রেঞ্চে পাঁচ-ছয় জনকে গাদাগাদি বসতে হচ্ছে। একটি কক্ষে মাদ্রাসার লাইব্রেরি এবং অফিস করা হয়েছে। সেখানে সঙ্কুচিত হয়েও একসাথে ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী বসতে পারেন না। কয়েকজন অফিস কক্ষে বসেন আর নিরুপায় হয়ে অন্যরা মাদ্রাসার সামনে মাজার প্রাঙ্গনে আম গাছের নিচে বসে থাকেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মাদ, মো. নাছিম, নুরজাহান খাতুন, সুমাইয়া খাতুন, তাছলিমা জানায়, তাদের পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের ছাদ এবং দেয়ালের পলেস্তারা নষ্ট হয়ে সিমেন্ট, বালু ও ইট-খোয়া খসে ড়ড বেড়িয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ কক্ষে ক্লাস করার সময় প্রায়শই ছাদ ও দেয়াল থেকে ইট-খোয়া খসে পড়ে। আতঙ্কে তারা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে পারেনা। সিমেন্ট, বালু ও ইট-খোয়ায় তাদের বই-খাতা আর পরনের পোশাক ময়লা লেগে নষ্ট হয়ে যায়। আর এক ব্রেঞ্চে গাদাগাদি বসে গরমে ঘেমে ঠান্ডা-কাশিতে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।