প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। খাদ্যে ভেজাল দেয়াও এক ধরনের দুর্নীতি, এর বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। খাদ্যে ভেজাল রোধে দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশেষ ল্যাবরেটরি (পরীক্ষাগার) প্রতিষ্ঠা করা হবে। সব বিভাগীয় শহরে এর শাখা থাকবে। যাতে করে যে কোন জায়গায় যে কোন ভেজাল খাবার যেন সাথে সাথে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি। কারণ বিষ খেয়ে আমাদের দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা চাই না।’
নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে গতকাল রবিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণ যদি সচেতন থাকে, তবে কেউ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারবে না। তাই অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি এ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।’
একগাদা ভাত খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করে বেশি করে শাক-সবজি, পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের যে অভ্যাসটা, সেই অভ্যাসটা একটু পরিবর্তন করা দরকার। সুষম খাবার হলেই পুষ্টি নিশ্চয়তা থাকে। আমিষ জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করা হচ্ছে। এখন তো মাছ উত্পাদনেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
তাঁর সরকার নতুন করে দেশজুড়ে সাইলো তৈরি করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল দেওয়াটা মনে হয় কিছু মানুষের একটি চরিত্রগত বদঅভ্যাস। এটা বন্ধ করতে হবে। এই ভেজাল খাদ্য খেলেতো মানুষের উপকার নয়, অপকারই হয়। দেশে ভেজাল খাদ্য বিরোধী অভিযান চলছে এবং এটিকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি এবং তাদের লোকবলের যে সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা আমরা দূর করে দেব। হাটে, মাঠে, ঘাটে সর্বত্রই যেন এই ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও নেব। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভেজাল বা বাসি খাবার বা পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। এখানে নাগরিক সচেতনতা একান্তভাবে দরকার।
তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা একটু লাভ যদি নিতে চান লাভ নেন কিন্তু ভাল জিনিসটা দেন, ভেজাল কেন দেবেন? খারাপভাবে মানুষকে ঠকিয়ে, মানুষের জীবন ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে চলবে। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন, আস্থা রেখেছেন। আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এবারের নিরাপদ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ-সবল জাতি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’। এই প্রতিপাদ্যের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ক, খ ও গ বিভাগে যথাক্রমে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রতিটি বিভাগে প্রথম তিনজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উদ্বোধন শেষে কেআইবি প্রাঙ্গণে নিরাপদ খাদ্য মেলা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।