হাদিউল হৃদয়
চলছে ভোটের হাওয়া। এই হাওয়ায় দুলছে ভোটার, ভোটের কর্মী, প্রার্থী এমনকি যারা ভোটার হয়নি তারাও। প্রত্যেকের মাঝে চলছে ভোট নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড়। নির্বাচনকে ঘিরে তাদের কত শত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মিশে আছে এই ভোটের মাঝে। মনে হয়, ভোটাভুটি নিয়ে আমরাই হয়তো সবচেয়ে বেশি মাতামাতি করি। তাই তো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার অলিগলিতে এখন একটি আলোচনা। শুধু অলি-গলি নয়, পাড়া-মহল্লার চা দোকানে, মফম্বলের হাটেবাজারে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পুরোটাই ভোটকেন্দ্রিক। কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে দলভিত্তিক কোথায় কে পেতে যাচ্ছেন কোন দলের মনোনয়ন।
ইতিহাস কথা বলে, বাস্তবতা না থাকলেই অঘটনা। এদেশে ইতিহাসে গণতন্ত্রের বার বার অকালমৃত্যু ঘটেছে। ১৯৪৬ ও ১৯৭০ সালে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল নির্দিষ্ট ইস্যুর ওপর। তবে নতুন শাসন ব্যবস্থা মানুষের দেওয়া রায়কে সম্মান দেখাতে পারেনি। তাই গণতন্ত্রের আবারও অপমৃত্যু হয়। কিন্তু বাংলার মানুষ অধিকার আদায়ের শপথে দীপ্ত। তারা আবার তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে শিখেছে। আবারও প্রমাণ করেছে ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়ে তাদের নানা আন্দোলন। তবে ১৯৮৬ সালে ভোটের বাক্স নিয়ে অভিযোগ ছিল। ভোটের রাজনীতি বড়ই বিচিত্র এবং জটিল। ভোটে বাস্তবতা থাকতে হয়। আবার ১৯৯১ সালের ভোট ছিলো বিচারপতি সাহাব্দ্দুীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে সময় ভোটের আগেই জয় ঘোষণা করে দেয় আওয়ামীলীগ। ১৯৯৬ সালে ত্যাগ করেছিল আওয়ামী লীগ। মানুষের হৃদয় জয় করার কারণেই ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল বিএনপি। কিন্তু ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াতের সারা দেশে তা-বলীলা আর তাদের অনেক নিষ্ঠুরতার জবাবেই প্রথম ওয়ান-ইলেভেন হয়। পরে মানুষের বিশাল সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় অত:পর ২০০৭ সালে গণতন্ত্র । সাময়িক সময়ের জন্যে পথ হারানোর পর ২০০৮ সালে জনগণের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় গণতন্ত্রের সঠিক পথে ফিরে এলেও ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন আবার গণতন্ত্রের অকালমৃত্যু ঘটায়।
দীর্ঘ ১০ বছর গণতন্ত্রের অকালমৃত্যু ঘটার কারণেই বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রকামী জনগণ জেগে উঠেছে। তারা অধিকার চায়। ভোটার চায় ভোট দিতে, কিন্তু অনেকেই ভোট দিতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ইতিহাস সাক্ষী, পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনও হয়নি, আর কোনদিন হবে বলেও মনে হয় না। এই কথাটি সাম্প্রতিককালে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেই ফেলেছেন যে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রতিটি ভোট কেন্দ্র কঠোর নিরাপত্তা থাকার পরেও বিভিন্ন কেন্দ্র হট্টগোল, মারামারি, ভোট চুরি, বাক্স ছিনতাই চলে ভোটের সময়। এই কালচার থেকে বের না হতে পারলে আমাদের গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে আরো সময় লাগবে।
মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার একটা অন্যতম সফল ব্যবস্থা গণতন্ত্র। অবশ্য নির্বাচন গণতন্ত্র অনুশীলনের একটা উপায় মাত্র, এটাই গণতন্ত্রের সবটুকু র্চ্চা নয়। তবে ব্যবস্থার পরিচালনা অনেক সময় খামখেয়ালিতে চলে যায়। যার ফলে বাংলাদেশে বার বার হানাহানি ,রক্তাক্ত হয়েছে। আমরা চাই- আর সহিংসতা সংঘর্ষ নয় । গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে। ভবিষ্যতে আর কোন অশুভশক্তি আমাদের গণতন্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেবে না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে- এ আশা আজ সমগ্র জাতির হৃদয়ে দোল খাচ্ছে।
সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারগন , আপনাদের সৌভাগ্য বলেই মনে করি। কারণ দেশের এই সময় কঠিন পরিস্থিতে আপনাদের উপর যে মহান দায়িত্ব পরেছে। দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আশা করে এবং আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে একটি অবাধ নিরেপক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত দেখার জন্য। তাই এটা জাতির জন্য একটা ক্রান্তিকাল এবং কমিশনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ বটে। তার সাথে এও মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অন্তরে একটুও আল্লাহ্ ভীতি থাকলে, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সত্যকার সচেষ্ট থাকবেন। কেননা, এই দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতা তাদের কাছে বিরাট আমানতস্বরূপ যা পালনে ব্যর্থতার কোন অবকাশ নাই। এই ন্যায়নিরপেক্ষ যুদ্ধে তাদের জয়ী হতেই হবে। এবং প্রমাণ করে দিবেন, আপনারাই যোগ্য আর ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তা নাহলে ইতিহাস কখনও কমিশনকে ক্ষমা করবে না।
লেখক: কবি-সম্পাদক। যধফরঁষৎরফড়ু@মসধরষ.পড়স