জর্জিয়াস মিলন রুবেল
প্রাক কথন :
প্রথমেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে, জাতীয় চার নেতাসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্ববলিদানকারী ৩০ লাখ শহীদ, ৩ লাখ মা বোনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন ১৯৪৯ইং সালে ১১ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চলনবিল অধ্যুষিত মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়াবিনোদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৮১৮৯৮৪৯৫০২৫৭, এফ এফ নম্বর (ভারত) ৩০৩৫ , মুক্তি বার্তা নম্বর ০৩১২০৯০০০, জাতীয় তালিকা নম্বর ৩৯, মুক্তিযোদ্ধা আইডি নম্বর ০৫০৮৮০০০১, গেজেট নম্বর ১২৫৭। তার পিতার নাম মৃত কবি ম.ম. আব্দুর রহমান বিনোদী, মাতার নামঃ মৃত অছিরন নেছা। মিলনের সহধর্মীনি মীর হোসনেয়ারা ডেইজি মিলন তাড়াশ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে ব্যবসা ও সমাজ সেবার ক্ষেত্রে স্ব-স্ব ভাবে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও বড় মেয়ে হোসনেআরা পারভীন লাভলী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একজন মহিলা সদস্য, সিরাজগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড তাড়াশ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও একজন এনজিও ব্যক্তিত্ব। বড় ছেলে ম,ম, জাকির হোসেন জুয়েল বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ছোট ছেলে ম,ম, জর্জিয়াস মিলন রুবেল মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মলীগ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ ঃ
গাজী আমজাদ হোসেন মিলন তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নররত অবস্থায় রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভবে জড়িয়ে পড়েন ষাটের দশকে।। ১৯৬৯ সালে তাড়াশ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় পাকিস্তান স্বৈরশাসকের শোষণ-নিপীড়ণের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজ এলাকায় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মাতৃভূমি রক্ষার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের পানিঘাটা ক্যাম্প (৭নং সেক্টরের অধীনে) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা, গোলাবারুদ ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্রসহ বাংলদেশে প্রবেশ করে আব্দুল লতিফ মির্জা পরিচালিত পলাশডঙ্গা যুব শিবিরে যোগদান এবং ৬০০ জন মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে গঠিত ঐ ক্যাম্পে সহ-সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন রনাঙ্গণে কৃতিত্বের সাথে যুদ্ধ করে এবং উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ যুদ্ধ তাড়াশের নওগাঁয় অলিকুলের শিরোমনি তাপস হযরত শাহ শরীফ জিন্দানী (রঃ) এর পুণ্যভূমিতে ১১ই নভেম্বর সকাল ৭টা হইতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে ১৫০জন পাকহানাদার বাহিনী সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয় এবং ক্যাপ্টেন সেলিম সহ ৯জন পাক আর্মিকে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেন। সেই সাথে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ১৬ ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর অল্পদিনের মধ্যেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৎকালীন স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর নিকট সিরাজগঞ্জ বিএ কলেজ মাঠে জনাব আব্দুল লতিফ মির্জার নেতৃত্বে হস্তান্তর করা হয়। এরপর নাটোর জেলাধীন গুরুদাসপুর কলেজে থেকে এইচ,এস,সি কৃতিত্বের সহিত পাশ করেন আমজাদ হোসেন মিলন। এরপর জনগনের পুনর্বাসনের কাজে নিয়োজিত হওয়ায় তার লেখাপড়া আর সম্ভব হয় নাই।
উনি(বঙ্গবন্ধু) মিলনকে ধমক দিয়ে বললেন, “তুই চাকরী করবি কেন ? তাড়াশে আমার দল চালাবে কে ? তুইতো একদিন এমপি হবি, মন্ত্রী হবি।”
যুদ্ধকালিন সময়ে তার পরিবারের অবস্থান ঃ
মিলন বাবার একমাত্র সন্তান। যুদ্ধে যাওয়ার মাত্র ৮ মাস পূর্বে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নববধু শ্বশুর বাড়ি রেখেই ভারতে চলে যান। বৃদ্ধ বাবা ও মা এলাকা ছেড়ে অন্য থানায় আত্মীয় বাড়ীতে আতঙ্কে ও কষ্টের সহিত জীবন যাপন করেন। তাদের বাসার সাথেই তারর মামাতো ভাই (সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি) মাহতাব উদ্দিনকে মিলনের যুদ্ধে যাবার কারণে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তার লাশ পাওয়া যায় নাই এবং রাজাকাররা মিলনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
দেশ গঠন ও রাজনৈতিক পরিচয় ঃ
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে দেশগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন গাজী মিলন। স্বাধীনতাত্তোর কালে তাড়াশ উপজেলার ৪নং মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদে দুই-দুইবার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন (একবার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায়) তিনি। পরবর্তীকালে সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি থানার সমবায়ীদের প্রত্যক্ষ ভোটে সিরাজগঞ্জ সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন থেকেই সুদীর্ঘ ১৮ বছর তাড়াশ থানা আওয়ামীলীগের পর্যায়ক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন । এ কারণে শাসকগৌষ্ঠির রোষানলে পড়ে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে। ১৯৯০ সালে আওয়ামীলীগের পদপ্রার্থী হিসেবে তাড়াশ উপজেলা পরিষদের বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালে পুনরায় তাড়াশ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সময় রাজশাহী বিভাগীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামিলীগের একবার কৃষি বিষয়ক সম্পাদক, আরেকবার ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। একবার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে এবং তিনবার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাড়াশ উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সৌভাগ্য হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ ঃ
দেশ গড়ার কাজে ব্যস্ততার মধ্যে তৎকালিন জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব রওশনুল হক মতি মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সহিত সাক্ষাত করতে যান। বঙ্গবন্ধুকে সালাম দেওযার পরপরই বঙ্গবন্ধু কাছে নিয়ে বলেন “মিলন, কেমন আছিস; তাড়াশের জনগন কেমন আছে?” কি জন্য এসেছিস? এখানে উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পূর্বে সিরাজগঞ্জ বি,এ কলেজ মাঠে জনসভা করেন। সেখানেই বঙ্গবন্ধুর সহিত আমজাদ হোসেন মিলনের পরিচয় ঘটে। ওখানে উপস্থিত ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী, ন্যাপ এর পংকজ বাবু (বউভাতের দাওয়াপত্র দিতে এসেছিলেন) আরো অনেকে যাদের সবাইকে তিনি চিনতেন না। মিলন পাঁচখানা আবেদনপত্র বঙ্গবন্ধুর সামনে তুলে ধরেন। তার দাবীগুলি ছিল (১) তাড়াশ সাব পোষ্ট অফিস (২) সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস (৩) টেলিফোন একচেঞ্জ। (৪) সিও রেভিনিউ অফিস (৫) তাড়াশ সলঙ্গা রাস্তা পাকাকরণ। তৎক্ষনাৎ বঙ্গবন্ধু শহীদ এম মনসুর আলী এবং ফনী ভূষণ মজুমদারকে ডেকে পাঠান এবং উনাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “মিলনের এই কাজগুলি জরুরী ভিত্তিতে করে দাও”। তখন ফনিভূষণ মজুমদার মহোদয় বলেন,আবেদনগুলি আপনিই স্বাক্ষর করে দেন। বঙ্গবন্ধু পাঁচটি আবেদনই স্বাক্ষর করেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তাড়াশে এই কাজগুলি বাস্তবায়ন হয়েছে। এরপর মিলনকে ডেকে বঙ্গবন্ধু বললেন, তোর সবইতো করে দিলাম, এখন দেশে গিয়ে পুনর্বাসনের কাজ কর। তখন মিলন বললেন, বঙ্গবন্ধু পুলিশের এস আই পদে লোক নিচ্ছে, আমি চাকুরী করব। আপনি ব্যবস্থা করে দিন। উনি মিলনকে ধমক দিয়ে বললেন, তুই চাকরী করবি কেন? তাড়াশে আমার দল চালাবে কে ? তুইতো একদিন এমপি হবি, মন্ত্রী হবি। এই বলে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ৫০০ টাকার চারখানা নোট আমার হাতে দিয়ে বললেন, তুই এখন চলে যা।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরের ঘটনাঃ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যার একদিন পরেই মিলনের বাড়ীতে পুলিশ হানা দেয়। তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ পিতাকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে। একদিন পরে ছেড়ে দেয়। মিলন তিন মাস পালিয়ে বেড়ানোর পর আটক হন। তাকে অমানষিক নির্যাতন করে এমন কি লোহার রড পুড়িয়ে তার শরীরে ছেকা দেয়। আজও সেই ক্ষত নিয়ে তিনি বেঁচে আছেন। ঐ সময় কারাগারের সেলে ২৪ ঘন্টা ১০০০ পাওয়ারের বাল্ব জলিয়ে রাখার ফলে তার দুটি চোখের দারুন ক্ষতি হয়। জিয়াউর রহমান সরকার, এরশাদ সরকার, খলেদা জিয়ার সরকার তাকে বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে এমন কি ১৫ই আগষ্ট পালন করা এবং কালো পতাকা উত্তোলনের কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে (মোট ৩০ জন) আটক করে। ২০০১ সালে আওয়ামীলীগ পরাজিত হলে মিলনের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা দায়ের হয়। দীর্ঘ নয়মাস কারাগারে থাকতে হয়। তারপর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
তাড়াশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আগমনঃ
স্বাধীনতাত্তোর তাড়াশে প্রথম হেলিকাপ্টার যোগে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে নিয়ে আসেন মিলন। ঐদিনই তিনি তাড়াশ সলঙ্গা রাস্তা পাকাকরণের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল আজিজ মকুলকে তাড়াশে নিয়ে এসে জনসভা করেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বিরোধী দলীয়নেতা জনাব আছাদুজ্জামান এবং ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধূরীকে পরবর্তীতে জনাব আব্দুল মালেক উকিল মহোদয়কে নিয়ে এসে তাড়াশে জনসভা করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ বেগম সাজেদা চৌধুরী, জনাব আমির হোসেন আমু, জনাব তোফায়েল আহমেদ, জনাব মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, জনাব আব্দুল মান্নান মহোদয়কে নিয়ে এসে তাড়াশে জনসভা করেন এবং এই মিলনের বাসায় আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তী সময়ে জনাব মোহাম্মদ নাসিম বারবার তাড়াশে এসে জনসভা করেছেন। পুনরায় জনাব তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী জনাব আব্দুল কুদ্দুস, সাবেক মৎস্য মন্ত্রী জনাব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথসহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এসে তাড়াশে তিনি জনসভা করেন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। এখানে উল্লেখ্য, স্বাধীনতাত্তোর তাড়াশ উপজেলায় সংসদ নির্বাচনে কোন সময় আওয়ামীলীগের নৌকা পরাজিত হয় নাই।
নিজ প্রচেষ্টার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহঃ
সংগ্রামী রাজনীতিক মিলনের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে স্বাধীনতাত্তোর তাড়াশ ডিগ্রী কলেজ, বোয়ালিয়া আমজাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, তাড়াশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাগুড়া বিনোদ বিএম দাখিল মাদ্রাসা, গুল্টা বাজার শহীদ এম মনছুর আলী ডিগ্রী কলেজ ও নওগাঁ জিন্দানী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় কর্মরত স্বনামধন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন “নারী ও শিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা, তাড়াশ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, উন্নয়ন সংগঠন হার্ডস এর প্রতিষ্ঠাতা, আদিবাসীদের জন্য নির্মিত আদিবাসী একাডেমিক ভবন নির্মাণে একজন অন্যতম উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন মিলন।
জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সাংগঠনিক তৎপড়তাঃ
অতঃপর ২০১৪ সালে ৬৪ সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিবেচনায় নিয়ে, মিলনকে মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেন যা ছিল তাড়াশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এরপর তিনি ভূমি মন্ত্রনলায়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পরই শক্তহাতে সংগঠনের হাল ধরে দীর্ঘদিন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক, কৃষকলীগ ও মহিলা আওয়মীলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়া তৃণমূল সংগঠনগুলির কাউন্সিল করে দলের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনেন। বিশেষ করে রায়গঞ্জ উপজেলা যুবলীগের ১৬ বৎসর, উপজেলা ছাত্রলীগের ১৪ বৎসর এবং মহিলা আওয়ামীলীগের ১০ বৎসর সম্মেলন হয় নাই। মিলন সেগুলির কাউন্সিল করে দলকে সুসংগঠিত করেন।
এখানে বিশেষ উল্লেখ্য, রায়গঞ্জ পৌরসভা হওয়ার পর থেকে মেয়র হয়েছে বিএনপি জামাতের।এবারে মিলনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই উপজেলায় ১৭ ইউনিয়নের মধ্যে ১৫ টিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছে।
জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পর তার সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্রঃ
জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ২টি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নের কাজে হাত দেন সাংসদ মিলন। এর মধ্যে রয়েছে তাড়াশ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস সেন্টার ভবণ নির্মাণ, ৪ তলা বিশিষ্ট তাড়াশ থানা ভবণ নির্মাণ, তাড়াশে পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম এর অফিস স্থাপন, আবহাওয়া অফিস, উপজেলা কমপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম, তাড়াশ এবং রায়গঞ্জ উপজেলায় ২টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, চলনবিলের মাঝে তাড়াশ হতে নাদোসৈয়দপুর ৮.৫ কিঃকিঃ নতুন রাস্তা নির্মাণ সহ এলাকার রাস্থা ঘাট, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শশ্মানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং ১১ নভেম্বর ৭১ যুদ্ধের স্থান তাড়াশের নওগাঁতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দয়া পরবশ হয়ে ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে দিয়েছেন। রায়গঞ্জ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস সেন্টার ভবন নির্মান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল উন্নতিকরণ, ব্রম্মগাছা ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপনের অনুমোদন, পৌরভবণ নির্মানসহ এলাকার রাস্তা ঘাট, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শশ্মানে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ কর্মসুচীর আওতায় তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৭৫% বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং ২০১৮ সালের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশাবাদী। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পদ ও অন্যান্য পদসমূহঃ
সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির ১নম্বর সদস্য ও তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরি কমিটির ১নম্বর সদস্য। এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা সমপ্রীতি মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাড়াশ উপজেলা কমান্ডের প্রধান উপদেষ্টা।
লেখক ঃ তরুণ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী।