গোলাম মোস্তফা : তাড়াশের সমতল আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিকদের হাতে ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত তেমন কোন কাজ থাকে না। এই সময়টায় তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। অভাব-অনটনে তাদের অনেকেই কৃষকের কাছে কম দামে আগাম শ্রম বিক্রি করে দিচ্ছেন। মহাজনের কাছ থেকেও চড়া সুদে ঋণ গ্রহনসহ ধার দেনায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। আর যারা আগাম শ্রম বিক্রি বা ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন না তারা সময়ের সঙ্গে খাপখাইয়ে চলার চেষ্টা করে চলেছেন। বিশেষ করে আদিবাসী নারী শ্রমজীবিদের এই শ্রম শোষণ ঋণ দাসত্ব চলছে বহু যুগ ধরে।
কৃষিশ্রমিক কমলা উরাঁও, কল্পনা উরাঁও, বাসন্তী উরাঁও, পানতি উরাঁও, শোভা উরাঁও, অনিমা উরাঁও, চারু উরাঁও, ঘিয়া উরাঁওসহ অনেকে বলেন, তারা সবাই ভূমিহীন। বাড়িতে সামান্য খাবারের মজুদও নেই। দিন আনি দিন খাই অবস্থা। শ্রাবণ মাসে ক্ষেত লাগানোর পড়ে তাদের হাতে আর তেমন কোন কাজ থাকে না। রোপা আমন ধান পাকতে বাকি তিন মাসের মতো। তাদের বাড়ির পুরুষ সদস্যদের অনেকেই কর্মের সন্ধানে এলাকার বাইরে চলে গেছেন। বাধ্য হয়ে তারা আগামী অগ্রহায়ণ মাসে ধান কাটা ও কৃষকের বাড়িতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন। এ জন্য তারা দিন হাজিরা ২০০-২৫০ টাকায় আগাম শ্রম বিক্রি করছেন। অথচ ভরা মৌসুমে তাদের মজুরি থাকে ৪০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত।
তারা আরও বলেন, তাদের অনেকেই বাঁশ, বিন্নার ফুল, তালপাতা আর খেজুর পাতা দিয়ে পাটি, ঝাঁটা, সাপটা, কুলা, ডালি, টোপা, চালুন খালই ও মাছের ওড়া তৈরি করে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কেউবা খাল, বিল, ডোবা, নালায় মাছ ও কাকড়া ধরে আর শালুক, শামুক, ঝিনুক কুড়িয়ে খাবারের সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা উরাঁও ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিরেন্দ্র নাথ বাঁরো সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তাকে বলেন, তাড়াশে ২০ হাজারের মতো আদিবাসী মানুষের বসবাস। এদের প্রায় সবাই ভূমিহীন। তবে বংশ পরম পরায় আদিবাসী নারীরা কুটির শিল্পের নানা রকম জিনিস তৈরি করতে পারদর্শী। মূলধন হিসেবে সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হলে বছরের এই সময়টাতে তাদের সমস্যায় পড়তে হত না। একই সাথে তাদের শ্রম শোষণ ও ঋণ দাসত্বেরও অবসান ঘটতো।