আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার : আর চৌদ্দ বছর পরে স্কুলের বয়স শত বছর পূর্ণ হবে। কিন্ত কপালে তার জীর্ণ দশা লেগেই রইলো। এজন্য প্রবাদে আছে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। যার কথা বলা হচ্ছে তা হলো, এবছর সিরাজগঞ্জ জেলা ও রায়গঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রাইমারী স্কুল নিমগাছি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তা ছাড়া ২০০৭ সালে এই স্কুলটি রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে সরকারী স্বীকৃতি পায়। ১৯৩২ সনে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য তথা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করার লক্ষ্যে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে একমাত্র প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন তৎকালীন বিদ্যোৎসাহী গোকুল চন্দ্র মাহাতো, হাজী আহাম্মদ আলী, মছের খাঁ, সেরাত আলী সরকার, এছহাক আলী সরকার, আজগর আলীসহ বলা চলে সর্বস্তরের মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষিত বা নিরক্ষরমূক্ত করার মানসে। প্রথমে অত্রাঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে মাটির দেয়ালের উপর ছনের ছাউনি দিয়ে ঘর তোলা হয়। বর্তমানে স্কুল ফিল্ডের দক্ষিন দিকের বল খেলার গোলের বার যেখানে ঐ স্থানে। কারণ এলাকার মাটি লাল এবং তা শুকালে খুব শক্ত হয়। ফলে এই মাটির তৈরী দেয়াল ইটের ওয়ালের চেয়ে মজবুত একবারে কম হয় না। দীর্ঘদিন ওই ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চলে। শেষে ১৯৬৫ সনে ডেভেলপমেন্ট স্কীমের আওতায় মাঠের উত্তর পাশে প্রায় আশি ফুট লম্বা ইটের দেয়ালের উপরে টিনসেড নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান কাজ। আগে কাঠের পার্টিসন দিয়ে ক্লাস চলতো এখন তাও নেই। ফলে দেখা যায় এক রুমে দু’জন টিচার দুই ক্লাস নিচ্ছেন । যাদের একজন শিক্ষকের গলার আওয়াজ আর একজনের শিক্ষার্থীরা শুনতে পায়। এতে মনোযাগ হারায় ছাত্র- ছাত্রীরা, শিক্ষাদান কাজ বাঁধার সন্মুখীন হয়। এর মাঝে কয়েকবার ঝড়ে চালা উড়ে যায় যা মেরামত হয় স্থানীয়ভাবে। বারান্দার চালা আজো ঠিক করা হয়নি। পিলারগুলো ভেঙ্গে পড়ে আছে মাঠের মাঝে। চালের কাঠগুলি পঁচে গেছে। টিন খুলে গেছে খানিক অংশের। প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারী বই উৎসব হয় এখানে। আসেন এলাকার মাননীয় এমপি মহোদয়। সাথে আসেন জেলা বা উপজেলার শিক্ষা বিভাগের বড় সাহেবগন। সরকার দলীয় নেতা, পাতি নেতাগন তো থাকেনই। এসে ওয়াদা দেন টিনের সেড ভেংগে দালান করে দেবেন। কিন্ত ঐ পর্যন্তই। ওরা চলে যান, দালান আর হয় না। ভাঙ্গা চালের জলে ভিজে বই- খাতা নষ্ট হয় শিশুদের। ছাত্র- শিক্ষকগন ভেজেন বৃষ্টিতে। তবে উর্ধতন কর্তাদের মন ভেজে না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ তালুকদার জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্র- ছাত্রীর সংখ্যা ৪৫৪ জন ; যার মাঝে ছাত্র ২১৪ ও ছাত্রী ২৪০ জন। এছাড়া শিক্ষক- শিক্ষিকা আছেন ১১ জন, নৈশ প্রহরী ১ জন। আর নিজেদের বিশেষ প্রয়োজনের কারণে একজন আয়া নিয়োগ দেয়া আছে। যার বেতন দেন শিক্ষক- শিক্ষিকা তথা স্কুল পরিচালনা কমিটি। সরকারী বিধি মোতাবেক প্রতি ৩০ জন ছাত্র- ছাত্রীর জন্য একজন টিচার দেবার নিয়ম। সে হিসাবে কমপক্ষে আরও চারজন শিক্ষক স্কুলে দরকার। তবুও জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষাদান কার্যক্রম। কিন্ত কক্ষ সংকটের কারণে একেবারে বেহাল অবস্থায় পড়েছে এই বিদ্যালয়টি। এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত দৌড়াদৌড়ি তিনি কম করেন নি। কিন্ত ফলাফল নঃ যযৌ নঃ তস্থৌ। তিনি আরো জানান, ১৯৭৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত তার স্কুল থেকে প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা ট্যালেন্টপুল বা সাধারণ বৃত্তি পাচ্ছে বিরতিহীনভাবে। এছাড়া প্রত্যেক বছরই পিএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশ করে তার বিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীগন। যেখানে জিপিএ- ৫ পায় ৩০-৩৫ জন। স্কুল ঘরের ভগ্ন দশা কবে দূর হবে এই বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আক্তারুজ্জামানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়গঞ্জ- তাড়াশ এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য নিমগাছি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিল্ডিং নির্মানের জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন মন্ত্রনালয়ে ; যেখানে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে জোর সুপারিস করা হয়েছে দ্রুত পদক্ষেপ নেবার । অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলেই সেখানে দালান নির্মাণ করা হবে।
