সড়ক দুর্ঘটনা একটি সামাজিক সমস্যা

Spread the love

হাদিউল হৃদয়

সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম দুঃখজনক সমস্যা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। নিরাপদ জীবনযাপনের জন্যে একটা সার্বক্ষণিক হুমকি সড়ক দুর্ঘটনা। আমাদের দেশে প্রতিদিনই সংঘটিত হচ্ছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, নির্বিবাদে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার খবর। সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দরজায়। তাই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে তো বাড়ছেই।

প্রতিটি দুর্ঘটনা আমাদের মনে কষ্টের রেখাপাত টানে। কারণ , প্রতিটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। মর্মান্তিক এসব দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের ও পেশার মানুষ। এ সকল দুর্ঘটনার ফলে আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রিয়জন, কাছের মানুষ, আপনজন, মেধাবী বন্ধু। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, রাস্তায় বেরুলেই সকলের মনে একটা ভীতি কাজ করে। অনেকে এটাও ভেবে থাকেন, বাসা থেকে বের হয়েছেন, সুস্থভাবে ফিরতে পারবেন কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ বাড়ী থেকে বের হলে ফেরার আশা নিয়ে সংশয় থাকে। এ পরিস্থিতি আধুনিক সভ্য সমাজে মানায় না । এটা নিরাপদ ও নিশ্চিত জীবন ব্যবস্থার অন্তরায়।

 

এত কিছুর পরও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। তাছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা প্রায় নেই। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকদের বেপোরোয়া গাড়ি চালানো, যথাযথ কাগজপত্র না থাকা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, রাস্তাঘাটের-দুরাবস্থা, পরিবহণ মালিকদের দৌরাত্ম্য ও নৈরাজ্য, পথচারীর নিয়ম না মানা সর্বোপরি পরিবহণ খাতে দুর্নীতি  ইত্যাদির প্রতিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি আরো বেশী জোরদার  রাখলে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো সম্ভব।

বর্তমান রাস্তাঘাটের দুরাবস্থার প্রকৃত উদাহরণ ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটসহ সারাদেশের সড়ক ব্যবস্থা। রাস্তাগুলোর দুর্দশার  দরুণ যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নষ্ট হচ্ছে অসংখ্য যানবাহন। দেশের অধিকাংশ সড়ক বর্তমানে ভাঙ্গাচোরা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন অগনিত মানুষ যাতায়াত করে চলছেন এবং ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন। ঢাকার সাথে দেশের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রাস্তা। দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা, যাতায়াত, মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন সংস্কারের অপেক্ষায় থাকলেও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে নাই। আসে নাই বললে একেবারেই ভুল হবে, অবশ্যই এসেছে, বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যমে। কখনো রাস্তাপথ  জোড়াতালির দায়সারাগোছের তথাকথিত মেরামত করা হয় যা প্রকারান্তরে কারচুপি আর লুটের মহোৎসব বললে কম বলা হয়। দেশে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এই প্রকট সমস্যার প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন হলেও দেখা যাচ্ছে “অবস্থা যথা পূর্বং তথা পরং”।

কারণ ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটে না। সড়ক দুর্ঘটনার বহুবিধ কারণ অনুসন্ধানে পাওয়া যায়Ñ (১) চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো। (২) ত্রুটিযুক্ত যানবাহন রাস্তায় নামানো। (৩) যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালানো। (৪) গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা। (৫) দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভারের অপ্রতুলতা। (৬) অধিকাংশ গাড়ির অনুপযুক্ততা বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অধিক ব্যবহার। (৭) নিরাপত্তা আইন ও ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা। (৮) নি¤œ মানের রাস্তা নির্মাণ। (৯) ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা। গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কসমূহে পথচারীদের জন্যে প্রয়োজনীয় ফুটপাত এবং পদচারী সেতু না থাকা। (১০) অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং ইত্যাকার।

সড়ক দুর্ঘটনার ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে মানবসম্পদের বিনাশ। এ ক্ষতি অপূরণীয়। তারপরেই রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতি। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি ডলার বা এক হাজার কোটি টাকা। সমস্যাটা জটিলতর হয় তখনি যখন দেখা যায় ক্ষয়-ক্ষতির প্রায় পুরোটাই বৈদেশিক মুদ্রার। কারণ মোটরগাড়ি, স্পেয়ার পার্টস কিতে কিনতে হয় বিদেশ থেকে। এক গবেষণায় দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রতি কিলোমিটারে সড়ক দুর্ঘটনার হার ব্রিটেনের চেয়ে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে প্রতি দশ হাজার যানবাহনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার প্রায় ১৬৯ জন। যা উন্নত দেশগুলোর তুলনার প্রায় ৩০ গুণ বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে আমাদের সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মানুষ পড়েছে নিরাপত্তাহীন অবস্থায়। প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান জীবন। তাই আমাদের দেশ, জাতি, সর্বোপরি দেশের জনগণের কল্যাণের জন্যে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা আশু প্রয়োজন।  সড়ক দুর্ঘটনা যত জটিল সমস্যাই হোক না কেন আমরা সকলে এর সমাধানে এগিয়ে এলে, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব নয়। এজন্যে সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে হবে। তবেই সড়কপথ হয়ে উঠবে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। নিশ্চিত হবে নাগরিক জীবন।

 

লেখক : সম্পাদক, একটি বাংলাদেশ,

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD