ছাওয়াল আমাক বেইচি থুইয়্যা চলি গেছে, ভাতকাপুড় দেয়না

Spread the love

বৃদ্ধার আকুতি

গুরুদাসপুর  প্রতিনিধি.
নিঃসন্তান হওয়ায় বোনের ছেলেকে লালনপালন করে নিজের ছেলে হিসেবে মানুষ করেন আনোয়ারা বেগম। ষাটোর্ধ্ব বিধবা হয়েও ৫ বছর আগে সেই ছেলেকে বিয়ে দেন তিনি। ছেলে-বউকে নিয়ে একসাথেই থাকতেন। কিন্তু তার জমানো ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনা জমি কৌশলে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেন ছেলে শহিদুল ইসলাম ভুট্টু (৩০)। তিনমাস আগে বৃদ্ধা আনোয়ারাকে বসবাসরত অবস্থায় রেখেই তার জায়গাজমি অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে শ্বশুরবাড়ি চলে যান ভুট্টু। বর্তমানে থাকার জায়গা আর ভরনপোষণ না দেয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসহায় ওই বৃদ্ধা।
ভুক্তভোগী আনোয়ারা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার শিকারপুর-বাহাদুরপাড়া নদীর উত্তরপাড়ের মৃত আবেদ আলীর মেয়ে এবং সেকেন্দার আলীর স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর ভুট্টুকে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকতেন তিনি। স্বামীর অংশের ৪০ হাজার টাকাসহ ছাগল ও হাঁসমুরগি বিক্রি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জমিয়েছিলেন। বাবা-মা মারা গেলে জমানো টাকা দিয়েই ভুট্টুর সাথে জমি কিনেন আনোয়ারা বেগম। শালিসে ভুট্টু স্বীকারোক্তি দিলেও বৃদ্ধার জমি বা টাকা ফেরত দেননি। বর্তমানে এলাকাবাসীর মানবিক সহায়তায় বেঁচে আছেন আনোয়ারা। বিচার চেয়ে থানায় ও ইউএনও অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। তারা দিনমজুরি করেন।
বৃদ্ধা আনোয়ারা দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, “স্বামীর বাড়ির খানিক ভ‚ঁই পাইছিনাম। সেই ভ‚ঁই বেইচি বোনের ছেলেক নিয়্যা থাকার জাইগা কিনি। এখুন ছাওয়াল আমাক বেইচি থুইয়্যা চলি গেছে, ভাত-কাপুড় দেয়না। আমার থাকার ঠিঁ নাই, আমি বাড়ি চাই।”
স্থানীয় আরিফ মন্ডল, হালিম মোল্লা, সাইদুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী, জিয়াউর রহমানসহ অনেকে বলেন- “বৃদ্ধাকে একা ফেলে হাঁসমারী তেলপাম্প সংলগ্ন শ্বশুর রব্বেলের বাড়িতে থাকেন ভুট্টু। শ্বশুরের যোগসাজসেই ভুট্টু প্রতারণার মাধ্যমে আনোয়ারাকে তার জায়গাজমি থেকে বঞ্চিত করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের শালিসে ভুট্টু তিনলাখ টাকা দিতে রাজি হলেও প্রসব করার কথা বলে পালিয়ে যায়। এদিকে জমির ক্রেতা ওই বৃদ্ধাকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি এখন কোথায় যাবেন, কেউ নেই দেখাশোনার। অতিদ্রæত ভুট্টু ও তার শ্বশুরকে আইনের আওতায় এনে তার বাসস্থান এবং ভরনপোষণের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।”
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ভুট্টুর স্ত্রী তানিয়া খাতুন মুঠোফোনে জানান, আমার স্বামী ওই বৃদ্ধার কোনো টাকা পয়সা নেয়নি। আমরা ঋণ করে জায়গা কিনেছিলাম। কিন্তু সেখানে ওই মহিলার অত্যাচারে থাকতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে আসছি।গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. দুলাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD