নীরবতার শহরে হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর

Spread the love
লেখা: মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ
ভূমিকা:
“আলোঝলমল শহরগুলো সবসময় সব গল্প বলে না।
কিছু গল্প চাপা পড়ে দেয়ালের আড়ালে, ঘরভর্তি হাসির নীচে—
কিছু কান্না কখনো শব্দ পায় না।”
এই পৃথিবীতে এমন কিছু সত্য লুকিয়ে থাকে, যা শুধু সাহসী হৃদয়ের কানেই পৌঁছে। বাহিনীর বাহিরের ঝলমলে পোশাক আর সম্মানের আড়ালে কত অপমান, কত নির্যাতন চাপা পড়ে আছে— তা খুব কম মানুষ জানে।
আজকের রাতের গল্প সেই অজানা সত্যের— এক নির্ভীক স্বীকারোক্তির গল্প।
মূল গল্পঃ
প্রথম অধ্যায়: হঠাৎ দেখা
তারাবীর নামাজ শেষ করে নির্জন রাস্তা ধরে ফিরছিলাম।
রাত প্রায় সাড়ে দশটা। বাতাসে ছিল ঈদের আগমনী আলোড়ন, কিন্তু কোথায় যেন এক চাপা নীরবতা।
হঠাৎ রাস্তার মোড়ে দেখা হলো সদ্য পরিচিত নৌবাহিনীর এক অফিসার ভাইয়ের সাথে।
তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এলেন, যেন বহুদিনের চেনা।
“ভাই, সময় আছে? একটু কথা বলবো?”
কণ্ঠে এক অদ্ভুত আকুতি।
আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম।
কিন্তু তার দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল, যেটা উপেক্ষা করা গেল না।
চুপচাপ হাঁটা ধরলাম তার সাথে।
দ্বিতীয় অধ্যায়: হাসির আড়ালে চাপা কান্না
তার বাসায় ঢুকে দেখলাম— নবদম্পতির ছোট্ট সাজানো সংসার।
ঘরের প্রতিটি কোণায় যেন ভালোবাসার পরশ।
চা এল, গল্প শুরু হলো সহজ কিছু বিষয় নিয়ে— সংসার, দায়িত্ব, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
হঠাৎ, অদ্ভুত একটা নীরবতা ভর করলো তার মুখে।
চোখের কোনায় ছায়া নেমে এলো।
মৃদু কণ্ঠে বললেন—
“ভাই, বাহিনীর ভেতরের কিছু কথা জানেন? বাহিরের চকচকে দেয়ালের আড়ালে যে কত নোংরা অন্ধকার জমে আছে…”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
তিনি কথা চালিয়ে গেলেন—
 “নতুন নারী সদস্য এলে কিছুদিনের মধ্যেই বিশেষ নজর পড়ে তাদের ওপর। সিনিয়রদের ব্যক্তিগত কক্ষে ডাকা হয় নানা অজুহাতে— ‘ওয়ার্ক ব্রিফিং’, ‘স্পেশাল ট্রেনিং’…”
আমি জিজ্ঞেস করলাম—
“তারপর?”
তার গলা কেঁপে উঠল, চোখে মেঘ জমল।
“তারপর ভেতরের গল্পটা হয় নীরব লাঞ্ছনার। প্রাণবন্ত মেয়েরা ঘরে ঢুকে যায়, আর ফেরা হয় নিঃশেষ দৃষ্টি আর চেপে রাখা কান্না নিয়ে।”
তৃতীয় অধ্যায়: প্রতিবাদের শূন্যতা
আমি শিউরে উঠলাম।
“ভাই, কেউ প্রতিবাদ করে না? মামলা করে না?”
তিনি ম্লান হাসলেন।
“ভাই, যারা অপরাধ করে, তারাই এখানে আইনের প্রহরী। মুখ খুললেই চাকরি শেষ, সম্মান শেষ। তদবির, ব্ল্যাকমেইল, চরিত্রহনন— সবকিছু ওঁত পেতে থাকে। তাই অধিকাংশই নীরবে সহ্য করে।”
তার কণ্ঠে ছিল বিষন্ন অভিজ্ঞতার ভার।
“আপনি ভাবতে পারবেন না ভাই, বাহিনীর ভেতরে কিছু মেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে… কিন্তু তাদের মৃত্যুকে ‘ডিপ্রেশন’ বলে চালিয়ে দেয়া হয়।”
আমার চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এলো।
শত শত নামহীন কণ্ঠস্বর যেন ঘুরে বেড়াচ্ছিল আমার কানে।
চতুর্থ অধ্যায়: সমাধানের আলো
আমি থেমে থাকতে পারলাম না।
 “ভাই, তাহলে এর কোনো পথ নেই? কোনো প্রতিকার নেই?”
তিনি গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন—
 “পথ আছে ভাই, একটাই পথ— ইসলামী শরিয়াহ। ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যু। বিচারের ভয়ে যদি অপরাধী কাঁপে, তখনই সমাজে নারীর ইজ্জত নিরাপদ হবে। আজকের তথাকথিত সভ্যতা আসলে দুর্বল ন্যায়বিচারের মুখোশ। ইসলামic আইনেই আছে প্রকৃত ন্যায়বিচার।”
তার চোখে জ্বলছিল এক কঠিন দৃঢ়তা।
শব্দে ছিল অপরিসীম বেদনা আর বিশুদ্ধ বিশ্বাস।
উপসংহারঃ
সেই রাতের কথা এখনো ভুলতে পারি না।
বাসায় ফেরার পথে মনে হচ্ছিল চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
রাস্তার আলো ঝাপসা হয়ে আসছিল আমার চোখের জলে।
মনে হচ্ছিল, অদৃশ্য কারো ফিসফিসানি কানে বাজছে—
“আমরা কি কখনো মুক্তি পাবো না?”
আকাশ নীরব ছিল।
বাতাসে কান্নার গন্ধ ছিল।
আর আমি চুপচাপ ভেতরে ভেতরে দোয়া করছিলাম—
“হে আল্লাহ! আমাদের নারীদের ইজ্জত রক্ষা করো। সত্যিকারের ন্যায়বিচার ফিরিয়ে দাও এই পৃথিবীতে।”
(শেষ)
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD