সীরাত সিরিজ (পর্ব – ২০ )

Spread the love
প্রসঙ্গ: গাজওয়ায়ে উহুদ ও গাতফান
মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ ।
গাতফান যু/দ্ধ ও রাসূল (ﷺ) এর মুজিজা
তৃতীয় হিজরিতে দাসুর ইবনু হারিস মুহারিবি নামের এক ব্যক্তি ৪৫০ জন সেনা নিয়ে মদিনায় আক্রমণ করতে আসছে, এমন সংবাদ পেয়ে রাসূল (ﷺ) তাদের প্রতিহত করতে মদিনার বাইরে আসেন। তখন শত্রুসেনারা পাহাড়ের আড়ালে আশ্রয় নেয়। রাসূল (ﷺ) ময়দানে কাউকে না পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে ফিরে যান।
এ সময় একটি ঘটনা ঘটে। বৃষ্টিতে রাসূল (ﷺ) এর জামা ভিজে যায়। তিনি জামাটি শরীর থেকে খুলে একটি গাছের ডালে শুকাতে দেন এবং নিজে সেই গাছের নিচে শুয়ে পড়েন। এদিকে দাসুর পাহাড় থেকে এ দৃশ্য দেখছিল। সে যখন দেখে, রাসূল (ﷺ) নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পড়েছেন, তখন সোজা তাঁর মাথার সামনে এসে তরবারি উচিয়ে ধরে বলে, ‘এবার আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে?’ রাসূল (ﷺ) ভয়হীন কণ্ঠে উত্তর দেন, ‘আল্লাহ।’ রাসূল (ﷺ) এর এই উত্তর দাসুরের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। ফলে তার হাত থেকে তরবারি খসে পড়ে। এবার রাসূল (ﷺ) তরবারি হাতে নিয়ে পালটা প্রশ্ন করেন, ‘বলো তো, এবার আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে?’ সে তখন নিথর দাঁড়িয়ে থাকে। এ ছাড়া তো তার কোনো উপায়ও ছিল না। তার এই অবস্থায় রাসূল (ﷺ) এর মনে করুণা জাগে। তিনি দাসুরকে ক্ষমা করে দেন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দাসুরকে এতটাই আচ্ছন্ন করে যে, দাসুর একাই শুধু ইমান আনেননি; বরং তাঁর পুরো গোত্রে তিনি ইসলামের প্রচারক বনে যান।
যদিও এই রণ প্রস্তুতি যু/দ্ধ পর্যন্ত গড়ায়নি, তবু এটি গাজওয়া হিসেবে বিবেচিত। এই গাজওয়ার নাম গাতফান।
🟩 রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে হাফসা (রা.) ও জায়নাব (রা.) এর বিয়ে
তৃতীয় হিজরির শাবানে উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. এবং রমজানে জায়নাব বিনতু খুজাইমা রা. রাসূল (ﷺ) এর সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবন্ধ হন।(১৪৩)
🟩 গাজওয়ায়ে উহুদ বা উহুদ যু/দ্ধ
উহুদ মদিনা থেকে প্রায় তিন মাইল দূরের একটি পাহাড়ের নাম। সেখানে হারুন আ.- এর কবর রয়েছে। সবার ঐকমত্যে উহুদের যু/দ্ধ তৃতীয় হিজরির শাওয়ালে সংঘটিত হয়। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এর নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। যেমন : ৭, ৯, ১০ ও ১১ শাওয়াল।(১৪৪)
বদর যু/দ্ধে মক্কার মুশরিকদের পরাজয় ও অপমানের গ্লানি এবং সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোকদের হ/ত্যার ফলে দুঃখের বোঝা তাদের বহন করতে হচ্ছিল। এই শোক, ক্ষোভ- দুঃখ নিয়ে যদিও তারা একটি বছর পার করেছে; কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রোধ ও প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধ হচ্ছিল। এমনকি তাদের নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করতেও লোকদের নিষেধ করে দিয়েছিল। এ পর্যায়ে তারা যু/দ্ধ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ৩ হাজার সেনার বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৭০০ বর্ম, ২০০ ঘোড়া এবং ৩ হাজার উট ছিল। এমনকি ১৪ জন মহিলাকে তারা এ জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল যে, এরা তাদের পুরুষদের আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলবে এবং যারা পালাতে চায়, এরা তাদের তিরস্কার ও লজ্জা দেবে।
এদিকে রাসূল (ﷺ) এর চাচা আব্বাস রা. যিনি এ সময় ইসলাম কবুল করে নিয়েছেন, তবে তখনো মক্কাতেই ছিলেন-কুরাইশদের এমন আয়োজন ও যু/দ্ধ প্রস্তুতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং এতে তিনি অত্যন্ত বিচলিতবোধ করেন। এ জন্য তিনি এর বিস্তারিত সংবাদ জানিয়ে চিঠিসহ দ্রুতগামী একজন দূতকে মদিনায় রাসূল (ﷺ) এর কাছে পাঠিয়ে দেন।
রাসূল (ﷺ) এ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুজন লোককে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠান। তাঁরা ফিরে এসে তাঁকে সংবাদ দেন যে, কুরাইশরা মদিনার উপকণ্ঠে এসে গেছে। যেহেতু মদিনা শহরে আক্রমণের আশঙ্কা ছিল, তাই শহরের চারদিকেই পাহারার ব্যবস্থ্য করা হয়। সকালে রাসূল (ﷺ) সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর ১ হাজার সেনার এক বাহিনী নিয়ে মদিনার বাইরে চলে আসেন। এ বাহিনীতে মু/নাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ও তার সমমনা ৩০০ মুনাফিকও ছিল। তবে তারা পথিমধ্যেই বাহিনী ছেড়ে ফিরে আসে। ফলে মুসলিমদের সৈন্য সংখ্যা কমে ৭০০ জনে দাঁড়ায়।(১৪৫)
🟩 সেনা বিন্যাস ও সাহাবি-সন্তানদের জি/হা*দি স্পৃহা
মদিনা থেকে বেরোনোর পর মুজাহিদের যখন চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করা হয়, তখন অল্পবয়সি কিশোর মুজাহিদদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ-সকল কিশোরের অন্তরে জি/হা*দের প্রতি আন্তরিকতা ও স্পৃহা ছিল অতুলনীয়। রাফি ইবনু খাদিজ রা. কে যখন বলা হয়, ‘তোমার বয়স কম, তুমি মদিনায় ফিরে যাও।’ তখন তিনি পায়ের গোড়ালিতে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ান, যেন তাঁকে লম্বা ও উঁচু মনে করা হয়। তাঁর আগ্রহ দেখে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাহিনীতে যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া সামুরা ইবনু জুনদুব রা.- যিনি রাফি ইবনু খাদিজ রা. এর সমবয়সি ছিলেন- তিনি যখন এ ঘটনা দেখেন, তখন রাসূল (ﷺ) এর কাছে আবেদন করেন, ‘আমি তো রাফিকে মল্লযু*দ্ধে পরান্ত করে থাকি। তাঁকে যদি যু/দ্ধের জন্য মনোনীত করা হয়, তাহলে তো আমাকে আরও আগেই নেওয়া উচিত!’ তাঁর কথামতো রাফি রা. ও সামুরা রা. কে কুস্তিতে লাগিয়ে দেওয়া হয়। কুস্তিতে সামুরা রা. রাফি ইবনু খাদিজ রা. কে পরাস্ত করেন। ফলে তাঁকেও বাহিনীতে যুক্ত করা হয়।(১৪৬)
যারা বলে, ‘ইসলাম তরবারির জোরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’ তারা কি এসব আত্মত্যাগের ঘটনা দেখেও নিজেদের মিথ্যা কথার কারণে লজ্জিত হবে না?
এরপর উহুদের ময়দানে পৌঁছে রাসূল (ﷺ) মুজাহিদদের বিন্যাস করে কাতারবন্দি করে দাঁড় করান। উহুদ পাহাড়কে পেছনে রেখে যু/দ্ধের কৌশল ঠিক করেন। কেননা, এ দিক দিয়ে শত্রুদের এগিয়ে আসার আশঙ্কা ছিল। ফলে এই কৌশল একদিকে ছিল ঝুঁকিপূর্ণ আবার অন্যদিকে সুবিধাজনক বটে। উহুদের পেছন দিক থেকে এক জায়গা দিয়ে হামলার আশঙ্কা ছিল, এ জন্য রাসূল (ﷺ) সেখানে ৫০ জনের এক তিরন্দাজ বাহিনীকে পাহারার দায়িত্ব দিয়ে কঠোরভাবে তাঁদের নির্দেশ দেন, ‘মুসলিমদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক না কেন, সর্বাবস্থায় তোমরা এখানে অটল থাকবে।’
এরপর যু/দ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘক্ষণ যু/দ্ধের পর মুসলিম বাহিনী কুরাইশদের পিছু হটাতে সক্ষম হয়। এ পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হিসেবে যু/দ্ধ ময়দানে অবস্থান করে; আর কুরাইশরা মনোবল হারিয়ে এদিকে-সেদিক পালাতে থাকে। মুসলিম সেনারা তখন যুদ্ধ ময়দানে গনিমত সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ দৃশ্য দেখে পাহাড়ের ওই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাসূল (ﷺ) যে ৫০ জন সেনাকে পাহারায় নিযুক্ত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ফলে তাঁদের অনেকে মুসলিমদের বিজয় হয়েছে মনে করে নিশ্চিন্ত মনে সেখান থেকে চলে আসেন। তবে তাঁদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়ের রা. বার বার নিষেধ করছিলেন; কিন্তু তাঁরা তাঁদের নেতার কথা মানেননি। তবে এরপরও কয়েকজন সেখানে থেকে যান।
এ জায়গাটি প্রায় ফাঁকা দেখে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা.- যিনি তখনো মুসলমান হননি এবং কুরাইশের পক্ষে যু/দ্ধ করছিলেন- পেছন দিক থেকে আচমকা আক্রমণ করে যু/দ্ধের দৃশ্য। পালটে দেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়ের রা. সহ তাঁর সঙ্গে থাকা অল্প কয়েকজন সাহাবি প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যান, তবে শেষ পর্যন্ত সবাই শাহাদত বরণ করেন।
এবার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. তাঁর বাহিনী নিয়ে মুসলিমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুসলমান ও কা/ফির উভয় বাহিনী তখন যু/দ্ধ ময়দানে এমনভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় যে, মুসলমান মুসলমানের হাতেই নিহত হতে থাকেন।
এ যু/দ্ধে মুসআব ইবনু উমায়ের রা. শহিদ হন। তাঁর চেহারার সঙ্গে রাসূল (ﷺ) এর চেহারার অনেক মিল ছিল। ফলে তাঁর শাহাদাতের পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, রাসূল (ﷺ) শ/হিদ হয়েছেন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, শ/য়তান বা মু/শরিকদের কেউ একজন উচ্চঃস্বরে এ ঘোষণা দেয় যে, ‘মুহাম্মাদ নিহত হয়েছেন। ‘(১৪৭)
এই মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহাবিদের মনোবল ভেঙে যায়। এমনকি বড় বড় অনেক সাহাবিও হতাশ হয়ে যান। তবে অনেকে তখনো অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যু/দ্ধ চালিয়ে যান। বিশৃঙ্খলার কারণে মুসলিমদের হাতে মুসলিমরা শহিদ হতে থাকেন। তবে সবার দৃষ্টি তখন রাসূল (ﷺ) কে খুঁজে ফিরছিল। এরপর কাআব ইবনু মালিক রা. প্রথমে তাঁকে দেখতে পান। তিনি আনন্দের আতিশয্যে চিৎকার দিয়ে ওঠেন, ‘মুবারক হো, রাসূল (ﷺ) নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’
কাআব ইবনু মালিক রা. এর আওয়াজ যখন সাহাবিরা শুনতে পান, তখন সবাই রাসূল (ﷺ) এর কাছে দৌড়ে আসতে থাকেন। এ সময় কা/ফিররা অন্য দিক থেকে সরে এসে এদিকে মনোনিবেশ করে। তারা কয়েকবার রাসূল (ﷺ) এর ওপর আক্রমণ করতে উদ্যত হয়, তবে তিনি নিরাপদই থাকেন। এমনকি কা/ফিররা একবার কঠোর আক্রমণ করলে তিনি সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কে আছে এমন, যে আমার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত?’ তখন জিয়াদ ইবনু সাকান রা. নিজের চার সঙ্গীসহ তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন। তাঁরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত সবাই শ/হিদ হন। জিয়াদ রা. যখন আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান, তখন রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ সাহাবিরা তাঁকে পাঁজাকোলা করে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। তখনো তাঁর প্রাণ বাকি ছিল। জিয়াদ রা. রাসূল (ﷺ) এর পায়ের ওপর নিজের মুখ রাখেন এবং এ অবস্থায়ই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।
টীকা :
(১৪৩) সিরাতে মুগলতাই : ৪৯।
(১৪৪) শারতুল মাওয়াহিব, জুরকানি : ২/২০।
(১৪৫) মুনাফিকদের নেতা আবদুল্লাহ ইবনু উবাই উহুদ যু/দ্ধে মুসলামানদের প্রথম ধোঁকা দিয়েছিল। যু/দ্ধে মুসলিমদের ১ হাজার বাহিনীর মধ্যে ৩০০ জন ছিল তার সঙ্গী। সে কাফেলার সঙ্গে মদিনা থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ মুসলিমদের সঙ্গে ছিল। পরে এ কথা বলে সঙ্গীদের নিয়ে ফিরে যায় যে, আমাদের পরামর্শ ছিল মদিনার ভেতরে থেকে যু/দ্ধ করব, এখন আমাদের পরামর্শ কেন মানা হলো না? আরও বলে যে, এটা যু/দ্ধ নয় বরং আত্মহ*ত্যা। এ ছাড়া সে ও তার সাথিরা যু/দ্ধে যেতে মুসলিমদেরও বাধা দেয়।
আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মুসলমানদের আস্তিনে পালিত প্রথম বড় সাপ। ইসলাম ও মুসলিমদের ধ্বংসের জন্য এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই, যা সে করেনি। যদি আল্লাহর একান্ত সাহায্য না থাকত, তাহলে মুসলিমরা পরস্পরে যু/দ্ধ করেই মারা যেতেন এবং মাত্র কয়েক বছরেই ইসলামের নাম-নিশানা পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যেত। তার মতাদর্শী ই/য়াহুদিরা তার মৃত্যুর পরও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, যারা পরবর্তী শতাব্দীতে মুসলিমদের মধ্যে অসংখ্য আস্তিনের সাপ ঢুকিয়ে দেয়।
আস্তিনের সাপ, ইসমাইল রেহান : ১৬। – অনুবাদক।
(১৪৬) তারিখুত তাবারি : ৩য় খণ্ড।
(১৪৭) শারহুল মাওয়াহিব, জুরকানি : ২/৩০।
লেখা : বই – সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া ﷺ ; পৃষ্ঠা : ৯৩-৯৭
লেখক : মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)
অনুবাদক : ইলিয়াস মশহুদ
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD