শাহজাদপুরে শালিস বৈঠকে বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা

Spread the love

শাহজাদপুর  প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের বড় চানতারা গ্রামে শালিস বৈঠক চলাকালে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটির জের ধরে ইইপি সদস্য জিন্নাহ ফকিরের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের লোকজন চান মোল্লা(৭৫) কে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ হামলা ও মারপিটে চান মোল্লা গ্রুপের আরও ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল রবিবার দুপুরে সোনাতনী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাহ ফকিরের বড় চানতারার বাড়িতে শালিস বৈঠক চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম(৬০), মেয়ে সালমা খাতুন(৪৫),আয়শা খাতুন(২০), সুলতানা খাতুন(৩০) ও শ্যালক ইউসুফ মোল্লা অভিযোগে জানান, বড় চানতারা গ্রামের লিয়াকত ফকিরের ছেলে সোলায়মান ফকিরের(৩৫) সাথে ৯ বছর আগে সুলতানা খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের ঔরসের আব্দুল্লাহ(৬) ও আব্দুল কাদের(৩) নামের দুইটি ছেলে রেখে আরও দুইটি বিয়ে করে ছোট বউকে নিয়ে ঢাকায় থাকে। বড় বউ সুলতানাকে কোনো ভরনপোষণ ও কাপড়চুপড় দেয় না। এবিষয়ে কথা বললে সুলতানাকে মারধর ও নির্যাতন করে। উল্টো বাবার বাড়ি থেকে টাকা পয়সা এনে দিতে মারপিট করে। দিন দিন তার অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা আরও বেরে যাওয়ায় সুলতানা ৭ মাস আগে বাবার বাড়ি এসে আশ্রয় নেয়। ঈদের ১০/১২ দিন আগে সোলায়মান শ্বশুরবাড়ি এসে স্ত্রী সন্তানকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সুলতানা আপষ মিমাংসা ছাড়া এভাবে যেতে রাজি না হওয়ায় সোলায়মান তার বড় ছেলে আব্দুল্লাহকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। ঈদের আগে ছেলেকে ফেরত পেতে অনেক দৌড় ঝাপ করেও ছেলেকে ফেরত পায় না।

এরমধ্যে সুলতানার ভাই সেনাবাহিনীর সৈনিক আব্দুল মজিদ, ভাতিজা সেনাবাহিনীর সৈনিক মিলন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসায় সন্তান ফেরত ও বিষয়টি মিমাংসার জন্য দু’পক্ষের সম্মতিতে সুলতানার স্বামী সোলায়মানের চাচা সোনাতনী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য জিন্নাহ ফকিরের বাড়িতে ওইদিন সকাল ১০টার দিকে শালিস বৈঠক বসে। এ শালিসের শেষের দিকে সুলতানার ভাতিজা সেনাবাহিনীর সৈনিক মিলন মোল্লা শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্তের রায়ের লিখিত চাইলে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ক্ষুব্ধ হয়ে মিলনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পরে। এর জের ধরে জিন্নাহর ছেলে, ভাই, ভাতিজা ও লোকজন দুই সেনাবাহিনীর সৈনিক সহ তাদের পক্ষের ১০/১৫ জনকে বেধরক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় বৃদ্ধ চাম মোল্লা হামলাকারীদের ঠেকাতে গেলে তারা তাকেও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে বৃদ্ধ চান মোল্লা ঘটনাস্থল ইউপি সদস্য জিন্নাহর বাড়ির উঠনে ঢলে পড়ে মারা যায়। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ৫ লাখ টাকায় মিমাংসার চেষ্টা করে। এতে নিহতের স্বজনেরা রাজি না হওয়ায় তারা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ এদিন রাত ১০ টায় ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তারা ঘাতক ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকির সহ সকল আসামীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকির মোবাইল ফোনে জানায়, শালিস বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসিত হওয়ার পরেও সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে এ অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটিছে। এ বিষয়ে স্বাক্ষাতে আপনাকে বিস্তারিত জানাবো। মোবাইল ফোনে এতো কথা বলা যাবে না বলে ফোন কেটে দেয়।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাসার বলেন, এ ঘটনায় সোমবার দুুপুরে নিহতের বড় ছেলে লালন মোল্লা বাদি হয়ে ইউপি সদস্য জিন্নাহ ফকিরকে প্রধান আসামী করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ ছাড়া নিহতের লাশ উদ্ধার করে এদিন সকালে ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আসামীরা সব বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক থাকায় এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আশাকরি অচিরেই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD