তাড়াশের নওগাঁয় সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Spread the love

তাড়াশের নওগাঁয় সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শাহজাহান আলী ঃ সিরাজগঞ্জ-৩ রায়গঞ্জ- তাড়াশ
আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ
এমপিকে নিয়ে গত ২মে মঙ্গলবার উপজেলা কৃষকলীগের সম্মেলন
প্রস্তুত কমিটির সাংবাদিক সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভায় একটি
মহল উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও সম্মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করে। ওই বক্তব্যের
প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার নওগাঁ শাহ শরীফ জিন্দানী (র)
মাজার চত্বরে নওগাঁ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের
উদ্যোগে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৪নং ওয়ার্ড
আওয়ামী লীগের সভাপতি তারা মিয়া খন্দকারের সভাপতিত্বে
জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই
ওয়ার্ডের কার্যকরী কমিটির সদস্য মোঃ আব্দুল কুদ্দুস।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২মে উপজেলা
কৃষকলীগের একটি সংবাদ সম্মেলন সিরাজগঞ্জ-৩ রায়গঞ্জ-তাড়াশ
আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ
এমপিকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল ফেসবুক সহ বিভিন্ন
ভাবে অসম্মানজনক কথাবার্তা বলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের
ফায়দা লোটার চেষ্ঠা করছে। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ
জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সততা ও নিষ্টার
সাথে এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক
কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। সরকারের উন্নয়ন মুলক
কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত ও এমপিকে সামাজিক ভাবে
হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল অযাচিতভাবে দোষারোপ করে
আসছেন। আমি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন
উন্নয়ন মুলক তথ্য তুলে ধরার জন্য এবং গত ২মে জাতীয় সংসদ
সদস্যকে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও সম্মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের তীব্র
প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত
ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
মোজাম্মেল হক মাসুদ, মোঃ খলিলুর রহমান, কার্যকরী কমিটির
সদস্য ও সগুনা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান টিএম আব্দুল্লাহেল
বাকী, আব্দুল বাকী, নওগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ

সম্পাদক আব্দুল হাই সরকার, মাধাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, নওগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী
লীগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ জনতার
একাংশ।

উল্লাপাড়ায় অবৈধ চায়না জাল পুড়িয়ে ধ্বংস
তাড়াশের কাটাখালে চায়না জালের ছড়াছড়ি
শাহজাহান আলী ঃ উল্লাপাড়ায় অবৈধ চায়না জাল পুড়িয়ে ধ্বংস। তাড়াশে সারা বছর চায়না জালসহ নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরে বেহালতবিয়তে। তাড়াশে মৎস্য কর্মকর্তার সাথে জেলেরা সমন্নয় করেই সারা বছর চায়নাজাল দিয়ে মাছ ধরেন বলে গোপন একটি সুত্র জানিয়েছেন। সরকারীভাবে জেলেদের পুর্নবাসনে সহায়তা করা হলে অবস্থা সহনীয় পর্যায়ে থাকতো। অপরদিকে পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহরের জেলেরা চলনবিলে ঢুকে বড় বড় বেড় জাল ফেলে মৎস্য সম্পদ লুণ্ঠন করে। প্রশাসন মাঠে থাকলে জনসাধারন সহায়তা করবে। তাড়াশের চলনবিলের মৎস্য সম্পদ প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে ধবংশের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। নদ-নদী খাল বিলে মাছের প্রজ্জনের এই সময়ে মা ও (ছা) পোনা মাছ রক্ষা করতে পারলেই মাছের অভাব হবে না। কিন্ত অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই সময়েই জেলেরা পোনা মাছ ধরার পুর্ব পরিকল্পনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। বেড় জাল, চায়না,কারেন্ট ইত্যাদি জাল তৈরি করছে। তাড়াশের কাটাখালে সারা বছর নিষিদ্ধ চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরলেও দেখার কেউ নেই। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল আটক করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ মে) উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতায় সকালের দিকে করতোয়া নদীর ঘাটিনা এলাকা থেকে সাতবারিয়া অবধি অভিযান চালিয়ে চল্লিশ পিচ চায়না দুয়ারী জাল ও কারেন্ট জাল ১০ পিচ আটক করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ উজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন চায়না দুয়ারী জাল ও কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। করতোয়া নদীর ঘাটিনার সাতবারিয়া এলাকায় অনেকেই অবৈধ এসব জাল দিয়ে মাছ ধরে আসছিলেন বলে অভিযোগ মেলে।
সিরাজগঞ্জে বিএনপি-যুবদল সম্পাদকসহ ৬ নেতা কারাগারে
শাহজাহান আলী ঃ মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদসহ বিএনপির ৬ নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২ মে) সকালে বিএনপির ৪৬ নেতাকর্মী উচ্চ আদালতের জামিনের পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের ৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে প্রেরণকৃত নেতারা হলেন, সিরাজগঞ্জ সদর থানা যুবদলের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আহমেদ, কালিয়া হরিপুর ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য সোহেল ও নোমান। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতার দায়ের করা মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। এ মামলায় সর্বমোট আসামি ১৯৩ জন। এর মধ্যে আজ ৪৬ জনের হাজিরা ছিল। সবাই আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে আদালত এই ছয়জনের জামিন না মঞ্জুর করে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।তিনি আরও বলেন, এই মামলায় বিএনপির নেতাদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের দ্রুত মুক্তির দাবি করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রয়ারি সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া বাজারে ১৩টি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম ও কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে বিএনপির ৯৮৬ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। #
চিনি ১৪০ টাকা কেজি ক্রমাগত বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
শাহজাহান আলী ঃ চিনির বর্তমান বাজার ১৪০ টাকা কেজি। ক্রমাগত বিদ্যুতের দাম বেড়েই চলেছে। ঈদের সময় চিনির চাহিদা বাড়ে প্রতি বছর এটা স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্ত ঈদের পর আর তেমন চাহিদা থাকে না। এখন চিনির মুল্য বৃদ্ধির কারণ কি জনমনে সব্রা প্রশ্ন। সার তেল গ্যাসের অবস্থাও ক্রমাগত বৃদ্ধিতে জন জীবন দুর্ভিসহ হয়ে উঠেছে। বাজারে এখন চিনির স্বাদ পাল্টে যাচ্ছে। মিষ্টতা চলে গিয়ে চিনি এখন তিতা লাগে। বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় হাত দেয়া যাচ্ছে না চিনিতে। হাতে তাপ লাগে, ফোসকা পড়ে। খরাকবলিত এ বৈশাখে এমনিতে আবহাওয়া উত্তপ্ত। মানুষের গায়ের ঘাম দরদরিয়ে পড়ছে। এ সময় বাজারে সব নিত্যপণ্যের দরও কেবলই বাড়ছে। ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আর পণ্যমূল্যের উল্লম্ফনের মধ্যে সমন্বয় করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। কিন্তু চিনি কেন স্বাদ হারাচ্ছে তার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, চিনির ঘাটতি নেই। স্টকে যথেষ্ট মজুদ আছে এবং বাজারে সরবরাহও ঠিক আছে। তবু যে সরকারের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে তার কারণ কী?ঢাকার বাজারে ১০ দিনের ব্যবধানে খোলা চিনির দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর বাজারে খোলা চিনির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। এখন বাজারে খোলা চিনি কিছুটা পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি মিলছে না। চিনিকল মালিকরা সরবরাহে সঙ্কট নেই বললেও বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ-সঙ্কটে বাজারে চিনির দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি বলেও দাবি করেন অনেকে। কথাটি বাস্তবসম্মত নয়। তার প্রমাণ, সরকারি পর্যায়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য তুরস্কের কোম্পানি থেকে যে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি কেনা হচ্ছে সেখানে প্রতি টনের দাম পড়ছে ৪৮৫ ডলার। এ দর আমাদের সরকারি প্রাক্কলনের চেয়েও প্রতি টনে ২০২.৬১ ডলার কম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হলে কোনো প্রতিষ্ঠান লোকসান দিয়ে বাংলাদেশে চিনি সরবরাহ করবে এটি বিশ^াস করার কারণ নেই। এর মানে হলো, আন্তর্জাতিক বাজারের চিনির প্রকৃত দাম এবং সরকারের ভাষ্যের মধ্যে সঙ্গতির অভাব রয়েছে।৪৮৫ ডলার প্রতি টন চিনি টিসিবির গুদাম পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজির দাম পড়বে প্রায় ৮৩ টাকা। খুচরা পর্যায়ে সে চিনি ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ক্রেতার সাশ্রয় হতে পারে প্রতি কেজিতে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। (প্রতি কেজির বর্তমান দর ১৪০ টাকা ধরে)।দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টনের মতো। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবির বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় চিনি কেনার লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৩৮ হাজার টন। এখন ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় সাড়ে ১২ হাজার টন কেনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকিটা সংগ্রহ করা হবে। ঈদের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চিনির দাম বেড়েছে। ঈদের সময় চিনির চাহিদা বাড়ে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু ঈদের পর তো বাড়তি চাহিদা কমে গেছে। সেই সাথে সরবরাহও যথেষ্ট। তাহলে এখন কেন দাম বাড়ছে তার কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না মন্ত্রী ।দেশে একসময় চিনিশিল্প ছিল অন্যতম প্রধান শিল্প খাত। সরকারি চিনিকলই ছিল প্রায় ২০টি। দেশের মোট চাহিদার অনেকটাই মিলগুলো পূরণ করতে পারত। কিন্তু সরকারি খাতের অদক্ষ পরিচালনায় সব মিল লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বেশির ভাগ মিল বন্ধ হয়েছে। অনেকগুলো লোকসানে জর্জরিত। সরকারের ভ্রান্ত নীতিও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। আখচাষিদের স্বার্থ রক্ষা করে যেমন নীতি প্রণয়ন করা যায়নি, তেমনি মিলগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে পাটশিল্পের মতো চিনিশিল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

চলনবিলে পুকুর সংস্কারের নামে সারা বছর চলে ফসলি জমির মাটি বিক্রি
শাহজাহান তাড়াশ সিরাজগঞ্জ ঃ সিরাজগঞ্জ নাটোর পাবনার কৃষিপ্রধান এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে পুকুর কাটা ও পুকুর সংস্কারের অজুহাতে প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে ফসলি জমি কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। সেই মাটি চলে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন ইটভাটায়। ড্রাম ট্রাকসহ অনেক বড় বড় হাইলোডেড ট্রাকে করে মাটি বহন করার ফলে আঞ্চলিক রাস্তা ও হাইওয়ে সড়ক পথও এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। ট্রাকের মাটি রাস্তায় পড়ে রোদে শুকিয়ে ধুলাবালুতে একাকার হচ্ছে অথবা বৃষ্টিতে ভিজে কর্দমাক্ত হয়ে সড়ক পথে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে তাড়াশে ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির জন্য সকল রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামীণ রাস্তা গুলো মাটি বিক্রির ড্রাম ট্রাকের যাতায়াতে নষ্ট হয়ে চলাচলের সম্পুন্ন অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাড়াশ উপজেলার ঘরগ্রাম নওগা মাগুড়া হামকুড়িয়া গ্রামে সারা বছর চলে ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির কাজ। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন কাজ হয় নাই। চলনবিলের তাড়াশ চাটমোহর ভাঙ্গুড়া ফরিদপুর উপজেলায় পেঁয়াজ, ধান, পাটসহ সমৃদ্ধ কৃষি উন্নয়নমুখী এলাকা। এ সব উপজেলায় ব্যাপক ফসল উৎপন্ন হয়। ইদানীং দেখা যাচ্ছে দু-তিন ফসলি জমির মাটিও বিক্রি করে দিয়ে সেখানে কাটা হচ্ছে পুকুর। চলনবিলে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। ফসলের মাঠে গড়ে উঠছে নতুন বসতি, ইটভাটা, পুকুর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়েই বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজে ফসলি জমিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি জমি সুরক্ষা আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এভাবে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে আবাদি জমি, কমে যাচ্ছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন।
সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের (এসআরডিআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষি জমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্যক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতি বছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ কাজেই প্রতি বছর তিন হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে কৃষি জমিকে কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কৃষি জমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। আইনটি শুধু নামেমাত্র আছে, যথাযথ প্রয়োগে নেই।
কৃষকের আয়ের উৎস কৃষি জমি তাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তিন ফসলি জমিতেই গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলা ও ১১টি থানা মিলে বৈধ ও অবৈধ মিলে ১৯৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৪০টি। আর অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি। বেড়া উপজেলায় ১৬টি ভাটার মধ্যে বৈধ আছে মাত্র ৪টি ইটভাটা। পাবনা সদর উপজেলায় ৭১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ইটভাটা ১৫টি। ঈশ^রদীতে ৫০টি ভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ৫টি। আটঘরিয়া উপজেলায় বৈধ ইটভাটা রয়েছে মাত্র ১টি। চাটমোহরে ৬টি ভাটার মধ্যে ৪টি বৈধ। সুজানগরে ১৭টি ভাটার মধ্যে ৯টি বৈধ। ভাঙ্গুড়ায় ৭টির মধ্যে বৈধ ভাটা আছে ২টি। ফরিদপুর ও সাঁথিয়া উপজেলাতে ১১টি করে মোট ২২টি ইটভাটা থাকলেও একটিরও কোনো বৈধতা নেই। অন্য দিকে ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্য মতে এ জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা রয়েছে। ধাপে ধাপে বিভিন্ন সেক্টরে টাকা দিয়ে অবৈধ ইটভাটাগুলো দিব্যি চালানো হচ্ছে।
ইটভাটা মালিকদের দেয়া তথ্যে জেলায় বর্তমানে ২৮০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা স্থাপনে যদি ১০ বিঘা করে জমি লাগে, সেই হিসাবে ২৮০টি ইটভাটা স্থাপনে দুই হাজার ৮০০ বিঘা জমি ব্যবহার করা হয়েছে। আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হ্রাস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। এ ছাড়া ইট তৈরির প্রধান উপকরণ মাটির জোগান দিতে প্রতি বছর ৩০০-৪০০ বিঘা তিন ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, দুই হাজার ৩৭১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পাবনা জেলায় প্রায় ৩১ লাখ মানুষের বাস। জেলায় পাঁচ বছর আগে আবাদি জমি ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর। এখন তা কমে এক লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৭ দশমিক ২৯ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকরা ভাটার আশপাশের জমি ক্রয় করেন অথবা আশপাশের জমির উপরিভাগের মাটি ক্রয় করে সেই মাটি কেটে নিয়ে যান। এভাবে কৃষি জমির ‘টপ সয়েল’ কেটে নেয়ায় কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা। ইটভাটার কারণে দূষিত হচ্ছে বাতাস ও পরিবেশ। ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছ, গাছের ফল-মূল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ সর্দি-কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটায় ইট পোড়ানো কয়লা থেকে নির্গত হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বন-মনোক্সাইড।
পাবনা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মতিন জানান, কৃষি জমি বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে প্রধানত কয়েকটি কারণে। আর তা হলো- কৃষকের দূরদর্শিতার অভাব, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, ভূমিখেকো ও অসাধু ইটভাটা মালিকদের আগ্রাসন। তিনি বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন অনুযায়ী কৃষি জমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, ইটভাটা এবং অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এ আইন অমান্য করলে কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে যাদের ৩ থেকে ৫ শতক কৃষি জমি আছে, তারা অপরিহার্য ক্ষেত্রে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে আইনের বিধান অনুযায়ী ভূমি জোনিং মানচিত্র অনুযায়ী তা করতে পারবেন।সার্বজনিন জনসচেতনতার পাশাপাশি সরকারের প্রয়োজনীয় সুদৃষ্টি না থাকলে প্রতি বছর আবাদি জমি কমে কৃষি কার্যক্রম ধবংশের দিকে চলে যাবে

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD