অসুখের সুখ

Spread the love
সাইফুল ইসলাম 
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বাড়ি আসছিলাম!   মায়ের কাছে।
 এই জগতে সে-ই আমার সবচেয়ে নিকটতম দায়।
পথে ফুডভিলেজ রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতি।
ওয়াশরুম থেকে এসে টেবিলে চশমা রেখে টিস্যু দিয়ে হাতমুখ মুছছিলাম।  হঠাৎ করেই বাম হাতের ধাক্কা লেগে চশমাটা টেবিল থেকে পরে গেল।
বাম পাশটাই ভাঙলো!
বুকের বাম পাশটা এমনিতেই ক্ষতবিক্ষত।
এবার গেল চশমার বামপাশ ভেঙে।
গত ২০১৬ থেকে চশমা ব্যবহার শুরু করতে হয়েছে। চশমা ব্যবহার আমার কাছে  একদমই অপছন্দনীয় ও বিরক্তিকর।  তবু রিডিং পড়তে সমস্যা হচ্ছিল বলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গেলাম।
ডাক্তার বললেন, শুধু কাছে দেখার কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে দূরে খুব ভাল আছে। চশমা দিচ্ছি,  ব্যবহার করুন।
আমি কিছুটা দুষ্টুমি করে বললাম,  ডাক্তার বিকল্প কিছু নেই !
ডাক্তারও রসিকতা করে বললেন, আছে ।  বয়সটাকে চল্লিশের নীচে নামিয়ে আনুন।  আমি বললাম, তাহলে বয়স কমানোর ডাক্তারের কাছে রেফার করে দিন।
আমার পাশে বসা আমার স্ত্রীর নাম জেনে নিয়ে  তাঁর নাম লিখে  ওনার কাছে রেফার করে দিলেন।   চুড়ান্ত রসিকতা করে বললেন, উনি আপনার বয়স কমিয়ে দিতে পারবেন।
যাই হোক,  চশমা নিলাম।
শুরু হলো জীবনের অপ্রাকৃতিক পথচলা।
গত পাঁচ বছরে  আমার চোখের দৃষ্টিশক্তি কমতে কমতে ভয়ঙ্কর হতে থাকলো।  বেশ কয়েকজন ডাক্তার দেখানো হলো,  চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হলো, ঔষধ ব্যবহার করা হলো  কিন্তু আমার চোখে কমফোর্ট ফিরে পেলাম না।  বছর দেড়েক যাবৎ পথ চলতে চলতে খেয়াল করলাম, একটু দূরে সবকিছু দু’টো দেখি!
মোবাইল স্ক্রিনে জড়িয়ে যাচ্ছিল একটার সাথে আরেকটা লাইন।
এই অস্বস্তি নিয়েই চলছিল জীবন জীবনের গতিতে !!
আমাদের দেশের ডাক্তার সাহেবরা অধিকাংশ রোগের সাময়িক আরামের চিকিৎসা দেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগের কারণ নির্নয়ে যথাযথ মনোযোগ দেন না।
অনেক ডাক্তার তো রুগীর চেহারার দিকে তাকানোর ফুরসতই  পান না । হয়ত দরকারও মনে করেন না।
তাদের  নির্মম আচরণে রুগী ও রুগীর আত্মীয় পরিজন  কিছু জানতে/বুঝতে ডাক্তার সাহেবকে জিগ্যেস করারও  সাহস পান না।  চুপচাপ দূর্বোধ্য চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন নিয়ে অন্তিম অন্ধবিশ্বাসে মুঠো ভর্তি করে ঔষধ সেবন করতে থাকেন !
এবার আসা যাক মূল কথায় !  তো চশমা ছাড়া যেহেতু চলবেনা আমার,   তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বগুড়া গিয়ে চশমা ঠিক করে তারপর গ্রামের বাড়িতে দিনে দিনে পৌঁছে যাব।
আমার বাসটি ছিলো বগুড়াগামী।
তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওখানে গিয়ে চশমা ঠিক করিয়ে নেবো।  যেহেতু আগের চশমাটাও বগুড়া থেকেই  তৈরি করে নেয়া হয়েছিল।
নির্ভরযোগ্য একজন বন্ধু ও কাজিন আছে আমার,  বগুড়ায়।
তাকে ফোন দিলাম।
সে বললো, তুই গাক চক্ষু হাসপাতালে চলে যা।
আমি যদি অফিস ম্যানেজ করে আসতে পারি আসতেছি।
চলে গেলাম গাক চক্ষু হাসপাতালে।
মুগ্ধ হলাম।
মুগ্ধ হলাম প্রতিটি কর্মকর্তা, ডাক্তার,  নার্স ও স্টাফদের অমায়িক ব্যবহারে!
কোথাও আমাকে কিছু করতে হলো না।  দেরি করতে হলোনা।
অনেকগুলো ধাপ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাঁরা আমাকে নিলেন ডাক্তার বদিউজ্জামানের কাছে।
এ যেন অনাদরে পথের ধারে ফুটে থাকা এক সুগন্ধী বনফুল !  ভাগ্যবান পথিক বোঝে এর দাম।
তিনি নানাভাবে বিভিন্ন মেশিনপত্র দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোন কূল কিনারা পেলেন না। তবে দমে যাবার পাত্র যে  তিনি নন সেটা ইতোমধ্যে বুঝতে শুরু করেছি।
ইতোমধ্যে চলে এলেন আমার বন্ধু ও কাজিন রেবেকা সুলতানা।  কে জানে হয়ত তাঁর সম্মানেই আমার মত  আমজনতা  রুগীকে এত সম্মান,  সহযোগিতা,  সহানুভূতি !
ডাক্তার বললেন, আমি  ম্যানুয়াল টেস্ট করতে চাই। উনি অনুমতি নিয়ে শুরু করলেন।
পরীক্ষা শেষে  বললেন, আপাতত আমি কোন চশমা দিবো না।
আপনাদের যদি অনুমতি থাকে তাহলে একটা ব্রেইনের সিটিস্ক্যান করাতে চাই।
আমরা চলে গেলাম পপুলার ডায়াগনস্টিকে সিটিস্ক্যান করাতে।
বেড়িয়ে এলো এক অকলল্পনীয় নিরুপদ্রব বিশাল Pituitary gland এর টিউমার।  ব্রেইন টিউমার !!
কন্ট্রাস্ট সিটি স্ক্যানে পরিস্কার হলো সবকিছু !
ওটার কারণেই  ইতোমধ্যে চোখের সুক্ষ্ম নার্ভগুলো  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাসারন্ধ্র বন্ধ থাকায় অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকমত কাজ করছে না।
মাঝে মাঝে অকারণ Irritation বাড়ছে।
হয়ে গেছি বদমেজাজি !
জরুরি অপারেশনের অপেক্ষায় আমি।
মৃত্যু  নিয়ে আমার কোন ভয় নেই,
 আক্ষেপ করার তো কিছু নেই-ই!!
বরং যেটা সবসময়  পাকাপোক্ত বিশ্বাস আছে সেটা হলো,  আমার প্রতি সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম দয়া, অনুকম্পা, অনুগ্রহ ও রহমত।
চশমা ভেঙে যাওয়া ঘটনা কি ইঙ্গিত বহন করে না কিছু ?
এটা না ভাঙলে কি এত দ্রুত  ধরা পড়তো এতবড় টিউমার?  হয়ত যাওয়াই হতো না ডাক্তারের কাছে।
ছোটবেলার বন্ধু রুবী,  মিজান ভাই, তাদের সন্তান নীলের আন্তরিকতা, মমতা ও ভালবাসার কাছে আমি আজীবন ঋনী, দায়বদ্ধ ।
রুবি,  আজ সারাটা দিন অনাহারে থেকে  আমাকে নিবিড় ভাবে সময় দিয়েছো, সেবা দিয়েছো, সহানুভূতি জানিয়েছো !
ভালবাসার এক ঝলক রশ্মি দিয়ে  বিষাদের ঘন কালো অন্ধকারকে আলোকিত রেখেছো।
বাঁচলেও কোন আনন্দ নেই আমার!
মরলেও কোন ক্ষতি নেই তোমাদের স্বজন !!
বাকীটা সময় কেবল নির্ভেজাল আনন্দ চাই ! । সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে স্বচ্ছভাবে মরতে চাই কিংবা চাই বাঁচতে।
সবার সুখ ও মঙ্গল হো’ক ।
দোয়া চাই সবার কাছে !
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this:

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD