তাড়াশ উপজেলায় সর্বহারা দমনের দায়িত্ব র‌্যাবকে দিন

Spread the love

আমরা শৈশব-কৈশোর থেকেই চলনবিল তথা তাড়াশে দুস্য-তস্করের কথা শুনে আসছি। সেকালে ওই ডাকাতি-সন্ত্রাস চলতো জলপথে নৌকাতে বেশী। বড় হয়ে পড়েছি, এই ত্রাসের পরিভাষা থেকে পরবর্তীতে  তড়াশ বা তাড়াশ নামের উৎপত্তি। সেজন্য তখনকার দিনে এটাকে নির্বাসন দ্বীপ বা পানিশমেন্ট জোন হিসেবে বিবেচনা করা হত। তাই সহজে এখানে কেউ চাকুরী বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসতে চাইতো না। পাকিস্তান আমল জুড়েই তাড়াশে সর্বহারা নামের চরমপন্থী বাহিনীর উপদ্রব কায়েম ছিল।স্থানীয় জনজীবনে নিরাপত্তা ও জানমাল হরণকারী সর্বহারা নামধারী ওই জঙ্গীপনা এখনও চলছেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের তৎপড়তা তুলনামূলক কমে গেলেও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। তার প্রমাণ মিলল গত সপ্তাহে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমের খবরে।

জানা গেছে, তাড়াশের উত্তরাঞ্চলীয় দেশীগ্রাম ও তালম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে  অতি সম্প্রতি তাদের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। কেবল আনাগোনা নয়। শুরু হয়েছে জোড়জবরদস্তি ও হুমকি ধামকির মাধ্যমে চাঁদাবাজি। সাথে নানা রকম ভীতি প্রদর্শন। অন্ধকারের ওই জীবেরা রাতের বেলাই বেশী হানা দেয় সাধারণ মানুষের বাড়ীতে। ব্যাহত: তারা পূর্ব বাংলা সর্বহারা দর্শন ফলালেও মূলত: তাদের লক্ষ্য অর্থ-সম্পদ লুট করা। ব্যক্তিগত কিংবা গোষ্ঠিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতলবও লুকায়িত থাকতে পারে তাদের মধ্যে। এক সময় সর্বহারাদের উপদ্রব ঠেকাতে তাড়াশের রানীরহাটে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপিত হয়। যা ছিল ঐ অঞ্চলের জণগনের দীর্ঘ দিনের দাবি। কিন্তু সেই সর্বহারাদের হামলা ও অস্ত্র লুটের প্রেক্ষাপটে উক্ত পুলিশ ফাঁড়ি প্রত্যাহার করা হয় অনেক বছর পূর্বে। এরপর এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও আজো রানীরহাটে পুলিশ ফাঁড়ি পূন:স্থাপিত হয়নি। অথচ এটা করা জরুরী প্রয়োজন। কেননা, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আলোকিত যুগে কোন অন্ধকার মিশে থাকা হিং¯্র প্রাণীর অস্তিত্ব সমাজে বিদ্যমান থাকতে পারেনা-তা সবাই বিশ্বাস করে। সর্বহারা নামধারী বিপথগামী বা সাময়িক ভ্রষ্টাচারী এসব লোকদের বেশীরভাগ তরুণ ও যুবক। তারা অধিকাংশই একই এলাকার অর্থাৎ স্থানীয় বটে। এদের মধ্যে অনেকেই  আবার স্থানীয় একটি বিশেষ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বলে জানা যায়। ধারণা করা হয়, এরা মতবাদগত বিভ্রান্তি ও চরম বেকারত্বের কারণে হতাশার শিকার। যুগ যুগ ধরে সামাজিক শোষন বঞ্চনার বিরূপ প্রতিশোধকামীতা মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে হয়তো সর্বহারার ছদ্মাবরনে। সাধারণ দৃষ্টিকোনে কোন বিশেষ রাজনৈতিক উস্কানি বা ফন্দি ফিকির এদের মধ্যে আছে কিনা তা গোয়েন্দা অনুসন্ধান সাপেক্ষ। তবে লক্ষনীয় , তথাকথিত সর্বহারা লেবাসে এই সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিঘœকারী  দুষ্টকীটের সংক্রমণ তাড়াশে বহু আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। এরা কখনো আন্ডার গ্রাউন্ডে লুকিয়ে থাকে। আবার কখনো রাতের অন্ধকারে তৎপড় হয়ে ওঠে।এর বিস্তৃতি ও পরিসর বর্তমানে অবশ্য সংকুচিত হয়ে এলেও এই সমাজ বিধ্বংসী প্রবণতা একেবারে  হ্রাস পায়নি। সুযোগ সময় বুঝে এরা আচমকা জানান দেয়। জনজীবনে অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার ঝর তুলে। পূর্বে তারা খুনখারাবি করলেও ইদানিং সেটা কম। কিন্তু তাদের যন্ত্রনাদায়ক  পদচারণা ও বিচরণ সমাজজীবনে আজকের দিনে অকল্পনীয় ও অসহনীয়। নিভৃত প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ নীরিহ মানুষ শংকা-আশংকা,আতংক ও সন্ত্রস্থ জীবন যাপন করবে একটা ভয়ার্ত পরিবেশে – তা এই প্রগতির যুগে মেনে নেয়া যায় না। এর সমুচিত প্রতিকার এবং প্রতিবিধান কঠিন নয়। তাদের চারণ ক্ষেত্র যেমনি বিশাল নয়-শক্তিতেও নয় অদম্য ও অপ্রতিরোধ্য।  কেননা, রাষ্ট্র সক্রিয় হলে তাদের রুখে দেওয়া অতি বাস্তব ও সহজ। দেশে গত দশক ধরে জঙ্গীপনার বাড়বৃদ্ধি ঘটেছিল। যার মূলটা ছিল সাম্প্রদায়িক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মৌলবাদের চেতনায় উৎসারিত। কিন্তু সরকারের আন্তরিতায় ও ব্যাপক জনসমর্থনে সেটা বহুলাংশে এখন নি¤œগামী। আর এই জঙ্গী দমনে দেশে সবচেয়ে বেশী কৃতিত্ব দেখিয়েছে এলিট বাহিনী র‌্যাব। তাই তাড়াশবাসী মনে করে যে, র‌্যাব সমগ্র বাংলাদেশের সন্ত্রাস জঙ্গীপনা দমনে যেখানে প্রশংসনীয় সাফল্য দেখিয়েছে, তাদেরকে তাড়াশের সর্বহারা তথা চরমপন্থীদের নির্মূলেও দায়িত্ব দিয়ে  নিয়োজিত করা গেলে ফল হবে অবশ্যই অত্যন্ত সহায়ক ও ইতিবাচক। এক্ষেত্রে  স্থানীয় সরকারি প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহীনীসহ আপামর জনতা তাদের পাশে থাকবে। প্রথমে কথিত সর্বহারা সদস্যদের ক্ষমার উদারতা দেখিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেয়া ভাল। তাদের আত্মসমর্পণের আল্টিমেটামও দেয়া যেতে পারে সুপথে ফিরে আসতে। তাতেও কাজ না হলে র‌্যাব তাদের কৌশল অনুযায়ী সর্বাত্মক অভিযান চালালে তাড়াশের সর্বহারা চিরতরে মুছে দেওয়া অসম্ভব নয়। কারণ আমরা জনজীবনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। আর তা এজন্য যে সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা মানব জীবনের বড় কাম্য এবং  উন্নয়ন-অগ্রগতির পূর্ব শর্ত।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD