মো. রফিকুল ইসলাম,বৃপাচান : ঐতিহ্যবাহী মাছের ভান্ডার খ্যাত চলনবিল পানি শূন্য থাকায় এখন মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে । প্রতিবছর এই সময় পানিতে থৈ-থৈ করতো চলনবিল। এই বিলের পানিতে ছিলো হাজারো প্রজাতির ছোট বড় দেশী মাছের অবাধ বিচরণ। চলনবিলের মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতো শত শত জেলে পরিবার । কিন্তু বর্তমান এই বিলে বর্ষাকালে পানি না থাকার কারণে কোন ধরনের দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে চলনবিল অধ্যুসিত এলাকার জেলে পরিবারগুলোতে চরম দুর্দিন চলছে। চলনবিলের জেলে ইলিয়াছ জানান, বর্ষার সয়য় আমাদের পরিবার চালানোর জন্য মাছ ধরা একমাত্র পেশা। আর এখন চলনবিলে পানি না থাকায় মরা খালে পরিণত হয়েছে এই বিল। মাঝে মাঝে কিছু পানি থাকলেও সেখানে কাংখিত কোন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্ষার পানি না এসে যদি এইভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের পরিবার চালানো সম্ভব হবে না। চলনবিলে অঞ্চলে মাছ না থাকার ফলে অনেক জেলে পেশা পরির্বতন করে ইতোমধ্যেই অন্য পেশায় চলে গেছে। এবার বর্ষার কিছু পানি এলেও চলনবিলের ব্যাপকতার তুলনায় কিছুই নয়। বর্তমান অবস্থা এমন যে বিল আছে কিন্তু মাছ নেই ।
স্থানীয়রা বলছেন, এই বিলে প্রতিবছর যেভাবে পানির উৎসমুখ ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাড়ি ঘর র্নিমাণ করার ফলে চলনবিল তার নির্দিষ্ট গতিপথ হারিয়ে ফেলছে। এই সকল অবৈধ ও পরিবেশ বিধ্বংসী দখল না ঠেকাতে পারলে এই অঞ্চলে মাছ উৎপাদন দিন দিন একেবারে শূণ্য কোঠায় নেমে আসবে । এইভাবে চলতে থাকলে আমাদের নামে মাত্র চলনবিল থাকবে কিন্তু মাছ থাকবে না। একদিন মাছে ভাতে বাঙ্গালী এটা নাম সর্বস্ব মাত্র থাকবে কিন্তু বাস্তবতায় কিছুই থাকবে না। চলনবিলে মাছ না থাকার কারণে জেলেরা পরিবার চালানোর জন্য একান্ত বাধ্য হয়ে এখন অল্প পানি থেকে মা মাছকে নিধন করছে। এই মা মাছ নিধন করার ফলশ্রুতিতে এক সময় পানি থাকলেও সেই পানিতে কোন ধরনের মাছ পাওয়া যাবে না। সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও নওগাঁ জেলার মোট ৯টি উপজেলার বৃহত্তর এলাকার বুক জুড়ে রয়েছে দেশের বৃহত্তম এই চলনবিল। আর উপমহাদেশ সেরা এই বিলে প্রতিদিন পুঁটি, টেংরা, কই, মোয়া, শিং, বোয়াইল, চিংড়ি, সোল, টাকি, রুই, কাতলাসহ ছোট বড় অসংখ্য প্রজাতীর দেশী মাছ উৎপাদন হয়। যার উপর এখানকার শত শত জেলেরা তাদের জীবিকা নির্ভর করে । এই বিলের মাছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটানো হয় ।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো হাফিজুর রহমান জানান, চলনবিলে দেশী প্রজাতীর হাজার ধরনের মাছ উৎপাদনের অন্যতমতম গুরুতপূর্ণ স্থান । কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছরে সঠিক সময়ে পানি না আশার কারণে যে পরিমাণ মাছ প্রতিবছর চলনবিলে উৎপাদন হয় সে তুলনায় এবছর উৎপাদন হচ্ছে না। অবশ্য বর্তমানে চলনবিলে যতটুকু পানি আছে তা তুলনায় অনেক কম হলেও এতে দেশী বিভিন্ন ধরনের মা ও পোনা মাছ আছে। এই সকল মা ও পোনা মাছ রক্ষা করার জন্য আমাদের অভিযান সকাল-বিকাল অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, চলনবিলের বিভিন্ন উঁচু জায়গাতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা বিলে পানি আসা ও যাওয়া ক্ষেত্রে বিরাট বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ।
লেখক ঃ টিভি সাংবাদিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট।