ঢাকা : রাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গত ২৯ জুলাই থেকে বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের ১২২টি দেশ ও অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহাল করেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এ মন্তব্য করেন ৷
মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, ‘যেখানে বারাক ওবামা নাইরোবিতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া এটা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬টি শর্ত পূরণ করা হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬টি শর্তের বেশিরভাগই পূরণ করার পরও জিএসপি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার ধারণা এ শর্তের চেয়েও যদি আমরা বেশি কিছু করি তারপরও তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আশা করবো আমাদের সঙ্গে যেহেতু টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) আছে, এর আওতায় তারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে।’ তবে এ সুবিধা না পাওয়ায় বাংলাদেশের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত দারজা বাভদাজ কুরেতের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড ও রানাপ্লাজা ধসে দেড় হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র, যা ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
জিএসপি ফিরে পেতে ট্রেড ইউনিয়ন বাধা কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন আমি অনেক কথা বলতে চাই না। তৈরি পোশাককে জিএসপি দেয় না, মার্কেট এক্সেস দেয় না। কিন্তু তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিয়ে তারা কথা বলে। তারা প্লাস্টিকের ও সিরামিকের ওপর ঠিকই জিএসপি দিয়েছে। কিন্তু সে কারখানা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে বলতে কোনো দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের উত্থান পৃথিবীর অনেক দেশ পছন্দ করে না। বিশেষ করে যে সমস্ত দেশ মুক্তিযুদ্ধকালীন আমাদের সমর্থন করেনি তাদের কাছে আমরা অপছন্দনীয়, কারণ বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান। যারা এক সময় বলেছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তারা যখন বলে বিস্ময়কর উত্থান, আমরা আরো উপরের দিকে যাই এটা অনেকেই চায় না।’
তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব দেশই বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আফ্রিকান কতগুলো দেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়েছে, তারা এক্সপোর্টই করতে পারে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যে ১২২টি দেশকে জিএসপি দেয়া হয়েছে, তারা আগেও এ সুবিধা পেত। এখানে কোনো নতুন দেশের নাম ইনক্লুড হয়নি। জিএসপি স্থগিতে আমাদের রপ্তানির কোনো ক্ষতি করেনি। জিএসপি স্থগিতের পর প্লাস্টিক ও সিরামিক পণ্যের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।’
বিশেষ দেশের প্রতি বিশেষ নজর না দিয়ে রপ্তানি বাজার বহুমুখিকরণের দিকে নজর দেবে দরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।