জাহাঙ্গীর আলম
৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আগুন। পাবনার চাটমোহরেও এর উত্তাপ এসে পড়ে। ২২ ফেব্রুয়ারি ঘটনার প্রতিবাদে চাটমোহরের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে। নেমে পড়ে রাজপথে। ওই দিনই পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সে সময়ের ছাত্র নেতা কামাল লোহানী, আঃ মতিন, রনেশ মৈত্র, আব্দুল আজিজ, আশরাফ আলী চাটমোহরে আসেন ছাত্রদের সংগঠিত করতে। সাংগঠনিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনকে আরো বেগমান করার জন্য চাটমোহর হাইস্কুলে কমিটি গঠন করেন। হাইস্কুলের কদম তলায় সেই দিনের সভায় সভাপতিত্বে করেন বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা বাবু গৌরচন্দ্র সরকার। সভায় অন্যান্যদের উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল লতিফ সরকার, ওমর আলী, ইছাহক আলী, দীপু, ক্ষিরদ সরকার মহরম আলী, আঃ হামিদ সরকার, আঃ রহিম সরকার, হাবিবুর রহমান, মমতাজ খতিব, হবিবর, আবুল হোসেন, হাবিবুর রহমান, মমতাজ খতিব, হবিবর, আবুল হোসেন, আব্দুল সালাম প্রমুখ। এরা সবাই তখন স্কুলের ৯ম, ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
সভায় ১১সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ছাত্ররা বালুচর খেলার মাঠে এলে কলেজ ছাত্র ও চাটমোহরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মিছিলে যোগ দেন। বালুচর খেলার মাঠে ময়েন উদ্দিনের সভাপতিত্বে একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা ভাষা শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার শপথ নেয়। একই সাথে ক্লাস বর্জনের কর্মসূচী ঘোষনা করেন। এই সভার পর মিছিল নিয়ে ছাত্ররা থানা মোড়ে আরেকটি পথসভা করে। পরে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র নেতারা ট্রেনযোগে ভাঙ্গুড়া চলে যান।২৩ ফেব্রুয়ারি চাটমোহর হাইস্কুলের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে স্কুলের সামনে সমবেত হয়। সেখান থেকে মিছিল বের হওয়ার সময় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, চাটমোহর থানার তৎকালীন ওসি পুলিশসহ মিছিলে বাধা দেয়। মিছিলে অংশগ্রহণ কারী আঃ রহিম সরকার, আঃ হামিদ সরকার, গৌরচন্দ্র সরকার, মমতাজ খতিব, হাবিবুর রহমান, মহরম, আঃ সালাম ও আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদের অবশ্য বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি চাটমোহর হাইস্কুলের কদম তলায় শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এবং ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে একটি মিছিল থানার মোড়ে এলে আবুল হোসেন ২৮ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচী ঘোষনা করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি আগের রাতে মথুরাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবুল হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে পাবনা জেল হাজতে পাঠানো হয়। পাবনা জেল হাজতে ১ মাস যাবৎ এবং রাজশাহীতে ৮ দিন আটক করে রাখার পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সে সময় জেল হাজতে ছিলেন অমূল্য লাহিড়ী, কামাল লোহানী, রনেশ মৈত্র, আঃ মতিন (ভাষা মতিন), আমজাদ হোসেন, মাহবুবুল আলম, আঃ মমিন তালুকদার, আমিনুল ইসলাম বাদশা, গোলাম কিবরিয়া, উকিল প্রমুখ। জেল থেকে বেড়িয়ে এসে স্কুলে আবুল হোসেনকে বন্ড দিয়ে আবার নতুন করে লেখাপড়া করতে বলা হয়।
ঘৃনা আর অভিমানে তিনি ফিরে যাননি সেই স্কুল। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণকারী আবুল হোসেন, আঃ হামিদ সরকার, মহরম হোসেন, ওমর আলী, এ্যাডভোকেট গৌরচন্দ্র সরকারসহ অনেকেই মারা গেছেন। ৫২’র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে চাটমোহরের মানুষের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জল। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্ররা তীব্র উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চাটমোহর শহর। ভাষার দাবীতে এখানকার ছাত্রদের যে ভূমিকা ছিল তা স্মরণীয় হয়ে আছে।