তাড়াশে দুই মাসে চুরি ১৯ টি ট্রান্সফরমার – চুরি হলে থানায় জিডি পরিবর্তে নেয় অভিযোগ

Spread the love

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই রাতে ফসলী মাঠের বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র থেকে দুইজন কৃষকের মূল্যবান দুইটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে।সোমবার রাতে উপজেলার তালম ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম ও জন্তিপুর গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ফসলী মাঠ থেকে সর্বশেষ ক্ষুদ্র অগভীর সেচযন্ত্র থেকে সংঘবদ্ধ চোরের দল বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার দুটি চুরি করে নিয়ে যায়।
এ নিয়ে গত দুই মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১৯ জন কৃষকের সেচযন্ত্রের মোট ১৯ টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকার অধিক।
এ দিকে অব্যহৃত চুরির এ ঘটনায় ভুক্তভোগি কৃষকেরা সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে থাকা তাড়াশ জোনাল অফিসে দায়িত্বরতদের দুষছেন। তাঁরা বলছেন, ১৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার কারণে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার বিঘা জমির সেচ কার্যক্রম বন্দ হয়ে যাওয়ায় চলতি রোপা আমন ধানের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।জানা গেছে, এছাড়া গত রবিবার ১৭ আগস্টরাতে উপজেলার তাড়াশ পৌর এলাকার আসানবাড়ি গ্রামের মো. বুলবুল আহম্মাদ ও সাহাবার হোসেনের দুটি, গত ৯ জুলাই তালম ইউনিয়নের পাড়িল বড়াইচড়া গ্রামের কৃষক হায়দার আলী, আব্বাস আলী ও কাদের হোসনের তিনটি, ১৪ জুলাই রাতে একই ইউনিয়নের কুন্দাশন গ্রামের কৃষক মো. সোহরাব হোসেন ও রোকনপুর গ্রামের মো. আলামিন হোসেনের দুটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়। এ ভাবেই গত দুই মাসে দুই মাসে সব মিলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১৯ জন কৃষকের সেচযন্ত্রের মোট ১৯ টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়।
যদিও এসব চুরি ঠেকাতে তাড়াশ থানা পুলিশ বলছেন, তাঁরা চুরি বন্ধে তৎপর তা চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে পল্লী সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর অধীনে থাকা তাড়াশ জোনাল পক্ষ থেকে কৃষকদের সচেতন হতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগি কৃষকদের ভাষ্য, তাড়াশ থানা পুলিশ ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে থাকা জোনাল অফিসে দায়িত্বরতদের গাফিলাতির কারণেই অহরহ ট্রান্সফরমার চুরি ঘটনা ঘটছে।
কারণ হিসেবে কৃষকেরা বলছেন, সংশ্লিট দুটি বিভাগের কাজে গরিমসি, সময় ক্ষেপনসহ নানা কারণে বছর জুড়েই ট্রান্সফরমার চুরির উৎসব চলছে। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার বৈদ্যুতিক সেচ যন্ত্রের মালিকেরা। পাশাপাশি চুরির ফলে তারা আর্থিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান, ভুক্তোভোগী লাউতা গ্রামের কৃষক মো. আশরাফুল ইসলাম।
আবার ভুক্তোভোগী মো. বুলবুল আহাম্মদ, জানান, এ উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌর এলাকার প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ বিদ্যুত চালিত ক্ষুদ্র অগভীর সেচযন্ত্র আছে। যার সবাই অরক্ষিত। পাশাপাশি চুরির ঘটনায় চোরকে আটক, ট্রান্সফরমান উদ্ধারে পুলিশের কার্যাকর কোন ভূমিকা নেই। আরো নেই পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ট্রান্সফরমার সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা। যে কারণে ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়া কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি, ভোগান্তি ষোল আনাই আছে। যেমন- যে সকল কৃষকের ট্রান্সফরমার চুরি হয়, তাদের নিয়ম মেনে আবারও মোটা অংকের টাকা খরচ করে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। আবার তা সেচ যন্ত্রের খুঁটিতে তুলতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম মানতে গিয়ে দীর্ঘ সূত্রিতা, হররানীর সম্মুখীন হতে হয় এমন অভিযোগ তাহের আলী নামের এক ভুক্তভোগি কৃষকদের। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির পর থানায় গেলে সাধারণ ডাইরীও (জিডি) নেওয়া হয় না। বরং ডিউটি অফিসার বেশিভাগ ক্ষেত্রেই বলেন অভিযোগ দেন। দেখবো এমনই অভিযোগ ভুক্তোভোগী একাধিক কৃষকের।যদিও তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান জানান, ট্রান্সফরমার চুরি হলে নিয়মনুযায়ী অভিযোগই হবে। হারিয়ে গেলে সাধারণ ডাইরী (জিডি) হয়।আর তাড়াশ জোনাল অফিসের এজিএম মো. শামসুজ্জামান জানান, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে কৃষকদের সচেতন হতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কৃষকদের হয়রানির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেলারেল ম্যানেজার আবু আশরাফ মো. সালেহ বলেন, পল্লী সমিতির গাফিলাতির বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চুরি তো সারা বছরই হয়। আমরা গ্রাহককে সচেতন হতে বলি। পাশাপাশি থানায় মামলা করতে বলি।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD