লুৎফর রহমান, তাড়াশ
সিরাজগঞ্জের তাড়াাশে ‘চলনবিলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ : ঝুঁকি ও বিকল্প পরিকল্পনা শীর্ষক মত বিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরী হলরুমে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে এ মতো বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রহমান মিঞার সভাপতিতে মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু যমুনাতে চলনবিলের পতনমুখ বুড়ি পোতাজিয়ায় এই ক্যাম্পাস নির্মাণের পরিকল্পনা সমর্থনযোগ্য নয়। এই স্থানে বিল ভরাট করে ১০০ একর জমির উপর ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হলে চলনবিল এলাকার তিনটি জেলার দশটি উপজেলার প্রাণ-প্রকৃতি,পরিবেশ ও অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে। শুধু তাই নয়, চলনবিরেলর সাথে সম্পর্কিত ৬টি জেলার ৩৬ টি উপজেলাতেই এর প্রভাব পড়বে। অথচ সিরাজগঞ্জ জেলার অনেক স্থান আছে যেখানে নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবে আবার চলনবিলও রক্ষা পাবে। চলনবিলে একদিকে পদ্মা এবং অন্যদিকে যমুনা। বর্ষাকালে এই দুই বড় নদীর পানি আত্রাই,বড়াল,গুমানী সহ বিভিন্ন নদী ও খালের মাধ্যমে এই বিলে সঞ্চিত হয় এবং বন্যার প্রকোপ হ্রাস পায়। শীতকালে এই বিলের পানি নদী সমূহে গড়ায় এবং এগুলোর প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এই বিলের অভ্যান্তরে রয়েছে ৪৭ টি নদী ,১৬৩ টি বিল,৩০০ টির বেশি খাল,১ লাখ ২০ হাজার পুকুর এবং কয়েকটি বড় বড় পথার। প্রায় ১০৫ প্রজাতির দেশী মাছ,৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ,২৭ প্রজাপতির স্তন্যপায়ী প্রাণী,৭ প্রকারের উভচর প্রাণী,৩৪ প্রজাতির পাখি, অসংখ্য প্রকারের জলজ ও স্থলজ উদ্ভিদ এবং জলজ প্রাণীর উপস্থিতি সহ জীববৈচিত্রময় এই চলনবিল শুধু উত্তরাঞ্চলের জন্য নয়,সারাদেশেরই এক অমূল্য সম্পদ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ চলনবিলের উপর নির্ভর করে। বুড়িপোতাজিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে প্রতিবদ্ধকতার সৃষ্টি হলে যমুরার পানি অবাধে চলনবিলে প্রবেশ করতে পারবে না। এবং গোটা চলনবিল এলাকার বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় ঘটবে। স্থানীয় কৃষি ও উন্মুক্ত মৎস্য চাষ সংকটের সন্মুখীন হবে। উদ্ভিদ ও প্রাণী বৈচিত্র্য বিলোপের সন্মুখিন হবে। মৌসুমী বন্যার ধরণ পরিবর্তীত হবে। চলনবিলে অবাঞ্ছিত জলাবদ্ধতা দেখা দিবে। কৃষিজমি, বসতি এবং অন্যান্য অবকাঠামো দীর্ঘ সময় পানির নীচে ডুবে থাকবে, এবং ফসল চক্র বিপর্যস্ত হবে। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের জন্যও সংকট সৃষ্টি হবে। প্রায় দুই দশক ব্যাপী আন্দোলনের পর চারঘাটের স্লুইস গেটের অপসারণের ফলে বড়াল নদে প্রাণ ফিরে এসেছে। চলনবিলের পুনরুজ্জীনের নতুন সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে যমুনার সাথে চলনবিলের মুখে নতুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে অত্যান্ত বিয়োগান্তক। চলনবিলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রস্তাব বাংলাদেশের ২০০০ সালের জলাশয় রক্ষা আইনে স্পৃহা বিরোধী: ২০১৩ সালের পানি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক: এবং নদ-নদীকে জীবন্ত সত্ত¡া হিসেবে স্বীকৃত দানকারী দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ১৯/২০ সালে প্রদত্ত রায়ে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ কারণে প্রস্তাবিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বুড়ি পোতাজিয়ায় না করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হোক।
উক্ত অনুষ্ঠানে চলনবিল রক্ষায় সংহতি প্রকাশ করে সাপ্তাহিক চলনবিলবার্তার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংবাদিক এম, আতিকুল ইসলাম বুলবুল, পৌর বিএনপির সাবেক আহবায়ক মো: আব্দুল বারিক খন্দকার, সহকারী অধ্যাপক শফিউল হক বাবলু, ফজলুর রহমান, মো: সেলিম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী সাঈদুর রহমান সাঈদ, ভিলেজ ভিশনের পরিচালক শরীফ খন্দকার, ড. খাইরুজ্জামান মুন্নু, সাংবাদিক সনাতন দাশ, চাটমোহর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুদ রানা, ডা: আতিকুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠান শেষে চলনবিল রক্ষায় গণ সাক্ষর সংগ্রহ করা হয়।
3 Attachments • Scanned by Gmail