সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ইসলামী দিকনির্দেশনা

Spread the love
মুফতি খোন্দকার আমিনুল আবদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ

প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।”
(সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)
মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি। বিনোদন বা সময় নষ্ট করার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়নি। তাই সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এ নীতি মানতে হবে। এখানে লেখা, মন্তব্য, শেয়ার, সবকিছু এমন হতে হবে যাতে আল্লাহ খুশি হন এবং মানুষের উপকার হয়।
মৌমাছির মত ব্যবহার
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“মুমিন মৌমাছির মতো। সে যা খায় তা পবিত্র, যা উৎপন্ন করে তা পবিত্র, যেখানে বসে কিছু নষ্ট করে না।”
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩৪৬৯)
মৌমাছি যেমন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং আবর্জনায় বসে না, তেমনি একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো সোস্যাল মিডিয়ায় শুধুমাত্র কল্যাণকর বিষয় গ্রহণ করা। অশ্লীল, বিভ্রান্তিকর ও গুনাহের কনটেন্ট থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য।
সত্য যাচাইয়ের গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা যাচাই করে নেবে, যেন অজ্ঞতাবশত কোন সম্প্রদায়কে আঘাত না করো এবং পরে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত না হও।”
(সূরা আল-হুজুরাত : ৬)
যেকোনো লেখা, ছবি বা সংবাদ শেয়ার করার আগে তা সত্য ও নির্ভরযোগ্য কিনা যাচাই করা জরুরি। ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্যায় সংঘটিত হয়।
সুন্দর ও ভদ্র ভাষার ব্যবহার
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলো।”
(সূরা আল-বাকারাহ : ৮৩)
মন্তব্য বা আলোচনা করার সময় ভদ্রতা বজায় রাখা অপরিহার্য। যদি কারও ভুল সংশোধন করতে হয়, তা ইনবক্সে বা একান্তভাবে করা উচিত। প্রকাশ্যে কারও অপমান করা ইসলামী শিষ্টাচারের পরিপন্থী।
গালি-গালাজ থেকে বিরত থাকা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“মুমিন গালি দেয় না, অভিশাপ দেয় না, অশ্লীল কথা বলে না এবং কুরুচিপূর্ণ কথা বলে না।”
(তিরমিযী, হাদীস : ১৯৭৭)
সোস্যাল মিডিয়ায় কখনো কখনো অপমানজনক মন্তব্য পাওয়া যায়। একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো ধৈর্য ধারণ করা এবং পাল্টা কটু মন্তব্য না করা। এতে তার চরিত্রের মহত্ত্ব প্রকাশ পায়।
হারাম বিষয় এড়িয়ে চলা
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“অশ্লীল কাজের কাছেও যেও না, তা প্রকাশ্য হোক কিংবা গোপন।”
(সূরা আনআ’আম : ১৫১)
অশ্লীল লেখা, ছবি, ভিডিও কিংবা হারাম সম্পর্কিত কোনো বিষয় দেখা, পড়া বা প্রচার করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এসব অন্তরকে কলুষিত করে এবং ঈমানকে দুর্বল করে দেয়। যদি কেউ ভুলক্রমে এতে লিপ্ত হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে ইস্তিগফার করতে হবে।
গোপন বা ভুয়া পরিচয়ে ব্যবহার
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“তিনি জানেন যা কিছু তাদের সামনে আছে এবং যা কিছু তাদের পেছনে আছে।”
(সূরা আল-বাকারাহ : ২৫৫)
মানুষ ভুয়া নামে একাধিক একাউন্ট ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু আল্লাহর কাছে সব কিছুই প্রকাশ্য। তাই গোপন নাম বা পরিচয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
সৎ কাজে ব্যবহার
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“তোমরা নেকি ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো, গোনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না।”
(সূরা আল-মায়িদাহ : ২)
সোস্যাল মিডিয়া এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দ্বীনি দাওয়াহ, কুরআন-হাদীসের শিক্ষা, সমাজ সংস্কারমূলক লেখা, মানুষের কল্যাণের জন্য প্রচার করা যায়। এগুলো ব্যবহার করলে এটি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
প্রতিটি কাজের হিসাব দেওয়া হবে
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ প্রতিদান পাবে। আর যে একটি মন্দ কাজ করবে, তাকে কেবল তার সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়া হবে।”
(সূরা আল-আন’আম : ১৬০)
মানুষ যা কিছু সোস্যাল মিডিয়ায় লিখছে, পোস্ট করছে বা শেয়ার করছে, ফেরেশতারা তা লিপিবদ্ধ করছে। কিয়ামতের দিন এগুলোই আমাদের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষী দেবে।
ধৈর্য ও নীরবতা
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“সৎকাজ ও অসৎকাজ সমান নয়। তুমি মন্দকে প্রতিহত করো উত্তম কাজের মাধ্যমে, তখন দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা আছে সে যেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেছে।”
(সূরা ফুসসিলাত : ৩৪)
কেউ অভদ্র আচরণ করলে তার জবাবে ধৈর্য ধরা এবং নীরব থাকা একজন মুমিনের গুণ। এভাবেই প্রকৃত ইসলামি চরিত্র ফুটে ওঠে।
আল্লাহভীরুতা
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“যেখানেই তোমরা থাকো না কেন, আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন।”
(সূরা হাদীদ : ৪)
সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ ও কাজ আল্লাহ দেখছেন—এই ভয় অন্তরে রাখা জরুরি। এ ভয় মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে রাখে এবং সৎপথে পরিচালিত করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করুন আমীন
লেখক পীরজাদা মুফতি খোন্দকার আমিনুল আবদুল্লাহ
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD