শিশুসাহিত্যিক নুরুল ইসলাম বাবুল : জীবন ও সাহিত্যকর্ম 

Spread the love
জাকির সেতু 
নুরুল ইসলাম বাবুল এ সময়ের বাংলা শিশুসাহিত্যে একজন সক্রিয় কর্মী । প্রায় আড়াই দশক ধরে তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য লিখে চলেছেন। শিশু-কিশোর সাহিত্যের নানা শাখায় বিশেষ করে ছড়া, কিশোর কবিতা, গল্প, কিশোর উপন্যাস লিখে পরিচিতি লাভ করেছেন একজন নিষ্ঠাবান শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করা দৈনিকের শিশুসাহিত্য পাতাগুলোয় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত কিশোর সাহিত্য পত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’ শিশু একাডেমি’র মাসিক ‘শিশু’  চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর’র ‘নবারুণ’সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর উপস্থিতি ঈর্ষণীয়। সম্প্রতি উনপঞ্চাশ পেরিয়ে পঞ্চাশে পা রাখলেন। তিনি ১৪ আগস্ট ১৯৭৬ সালে পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার বিলচান্দক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাকে জানাই উনপঞ্চাশতম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। নুরুল ইসলাম বাবুল প্রকৃতির বৈচিত্র্যময়, নির্জন অথচ প্রাণময় গ্রামীণ পরিবেশে তাঁর শৈশব ও সৃজনজীবনের শেকড় গেঁথে আছে গভীরভাবে। শৈশবকাল কেটেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সরল অথচ বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতির মাঝখানে। পাখির কিচিরমিচির ডাক, পাথারের বুকে শুয়ে থাকা সবুজ ধানখেতের মায়াবী বিস্তার—এসবই ছিল তাঁর বেড়ে ওঠার প্রাকৃতিক পাঠশালা। গ্রামীণ সকালবেলার কুয়াশা, দুপুরের সোনালি আলো, বর্ষার আকাশে নীল ও ধূসর মেঘের খেলা—সবকিছুই তাঁর কল্পনাশক্তিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই পাথার ও প্রকৃতি আজও তাঁর জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। শিশু বয়স থেকেই তিনি ছিলেন দুরন্তপনা ও কৌতূহলে ভরপুর। পাথার অঞ্চলের গোহালা ও শালিখা নদীর পাড়ে ডুবসাঁতার, কাকডাকা ভোরে পাখি দেখা কিংবা ঝিঁঝিঁ পোকার সুরে হারিয়ে যাওয়া—এসব ছিল তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতি, গ্রামজীবন ও মানুষের সহজ-সরল সম্পর্ক তাঁর মানসপটে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে, যা পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যকর্মে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। শিশুসাহিত্যিক নুরুল ইসলাম বাবুলের প্রতিভা বিকশিত হয়েছে এই প্রকৃতি-লালিত পরিবেশেই। ছোটবেলা থেকেই শব্দের প্রতি তাঁর ছিল অসাধারণ টান। কবিতা, ছড়া ও গল্পের ভুবনে তিনি খুঁজে পেয়েছেন এক অন্যরকম আনন্দ ও মুক্তি। শিশুদের হাসি-কান্না, খেলার উল্লাস, স্বপ্ন ও কল্পনার গল্প—এসব বিষয় তাঁর লেখায় রঙিন হয়ে ফুটে ওঠে।
আজ নুরুল ইসলাম বাবুল শুধু একজন শিশুসাহিত্যিক বা কবি নন—তিনি এক জীবন্ত স্মৃতি, যিনি তাঁর জন্মভূমির গন্ধ, প্রকৃতির ছোঁয়া ও শৈশবের আবেগ নিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য আকাশে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে শিশু-কিশোর সাহিত্য ভান্ডার। তিনি সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রামীণ পরিবেশ ও শিশু-কিশোরদের জন্য সময়োপযোগী ছড়া, প্রবন্ধ ও গল্প। এযাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা২০টি।  প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো- শিশু-কিশোর গল্পগ্রন্থ : স্কুল টিফিন হলে, বুড়ো বটগাছ ভূত ও খুদে গোয়েন্দারা, ব্যাঙরাজার বন্ধু (২০১৯), স্কুলে জাদুঘর এসেছিল। শিশু-কিশোর উপন্যাস : জলপরি স্থলপরি ও আকাশপরির গল্প, স্কুল ছুটির দিনে, বোবা গুপ্তচর, একটু সোনালী ভোরের অপেক্ষায়,  রাসেলের বাবা। শিশুতোষ ছড়া গ্রন্থ : মেঘের মেয়ে মেঘকুমারী, ফড়িংরাজার দেশে, আমার মনের ইচ্ছেপাখি এই অপরূপ রূপের দেশ ইত্যাদি।  বেরিয়েছে কিশোর উপন্যাসসমগ্র  : ছয়টি কিশোর উপন্যাস। সম্প্রতি তিনি ‘স্কুলে জাদুকর এসেছিল’ গ্রন্থের জন্য কিশোর সাহিত্য শাখায় ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার’ লাভ করেছেন।নুরুল ইসলাম বাবুলের ছয়টি কিশোর উপন্যাস সমগ্র পাঠে অফুরন্ত আনন্দ লাভ করা যায় সেই সাথে শিশু-কিশোর মনোবিকাশের ক্ষেত্রেও এটি যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে। স্কুল ছুটির দিনে  গল্প শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তার সর্বশেষ প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ আমাদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করে। এই বইয়ের প্রথম ছড়া ‘এই অপরূপ রুপের দেশ’-এ তিনি লিখেছেন-
‘এই দেশে মাঠে মাঠে ধান আছে
মানুষের মুখে মুখে গান আছে।
তেরোশত নদী ভরা জল আছে
গাছে গাছে কাঁচা পাকা ফল আছে।’
এভাবে গ্রন্থের প্রতিটি ছড়ায় নুরুল ইসলাম বাবুল তুলে ধরেছেন প্রিয় দেশমাতৃকার অপরূপ রূপের বর্ণনা। সূচিবদ্ধ চল্লিশটি ছড়া মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। এখানে ‘ধানের দেশ গানের দেশ’ ছড়ার কিছু অংশ পাঠ করে নেওয়া যায়-
‘চোখ যায় কতদূর
ততদূর
যতদূর
ঢেউ খেলে রোদ্দুর।’
নিজে লেখালেখির সাথে সাথে শিশু-কিশোরদের জন্য ‘হইচই’ নামক ছোটদের পত্রিকা বের করেছেন। এ পর্যন্ত এটার চারটি সংখ্যা বেরিয়েছে। আমরা শিশুসাহিত্যিক নুরুল ইসলাম বাবুলের শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে আশাবাদী। আগামীতে আরও অনেক ভালো ভালো গ্রন্থ তিনি আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য উপহার দিবেন, এই প্রত্যাশা করছি। ব্যক্তিজীবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিন কন্যা নওশিনা, তন্নি, তিনা ও সহধমর্মিণী আমিনা ইসলামকে নিয়ে তার সংসার জীবন সুখময় হোক। দীর্ঘ হোক তার সাহিত্যজীবন- এই কামনা সবসময়।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD