চলনবিল প্রতিনিধি:
নিমগাছি সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌর সদরের ভাদাস মহল্লায় ১৬ বিঘা আয়তনের মাইটাল দিঘী পুকুরে সুফলভোগীদের তালিকা করা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ (সদ্য বদলীকৃত) প্রকল্পের সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তার পছন্দের লোকজন কে সুফলভোগী সদস্য করেছেন মর্মে, দুদক সহ মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মো: আব্দুর রাজ্জাক।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সরকারের মৎস্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিমগাছি সমাজ ভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্প পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৭৭৯ টি সরকারি খাস পুকুর। এসব পুকুরে পাড়ে বসবাসরত দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার কে স্বাবলম্বী করতে সরকার প্রতি সাড়ে ১৬ শতাংশে একজন করে সুফল ভোগী বাছাই করে। এসব সুফলভোগী সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দিয়ে মৎস্য চাষে সহায়তা করা হয়। কিন্তু মাইটাল দীঘি পুকুরের ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি।
এরমধ্যে রয়েছে একই পরিবারের একাধিক সদস্য, অন্যত্র বসবাস করেন এমন ব্যক্তি, পাকাবাড়ি ও ১০ থেকে ৩০ বিঘা সম্পত্তির মালিক, প্রকল্পের নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত সদস্য সহ নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ সমর্থিত এমন ব্যক্তিদেরও সদস্য করা হয়েছে। এমন কি মৃত: ব্যক্তি কেও সদস্য হিসেবে দেখানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক পাশকৃত সুফলভোগী তালিকায় ২৫ নং ক্রমিকের সদস্য মোছা: সেলিনা খাতুনের প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে হয় রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলায়। ২৬ নং ক্রমিকের সদস্য মোছা: সাবানা খাতুনেরও আট বছর আগে বিয়ে হয়েছে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। এ তালিকার ৩৪ নং ক্রমিকের মোছা: মাহিরণ খাতুণ কে সদস্য হিসেবে দেখানো হলেও তিনি গত পাঁচ মাস আগে মারা গেছেন।
এ ছাড়াও তালিকার এক থেকে ১০ নং সদস্যদের রয়েছে পাকাবাড়ি ও ১০ থেকে ৩০ বিঘা পর্যন্ত আবাদী জমি। তাদের অনেকের বাড়িও পুকুড় পাড়ে নয়। অপর দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের নয় জন কে সদস্য করা হয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে।
নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বিঘা জলকরে দুজন করে সদস্য থাকার নিয়ম থাকলেও মাইটাল দীঘিপুকুরের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। ১৬ বিঘা জলকরে ৩২ জন কে সদস্য করার কথা থাকলেও অনিয়ম করে ৫৩ জন কে সদস্য করা হয়েছে ।
আর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন উপজেলা মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী উপজেলা জলমহাল কমিটি সদস্যদের তালিকা পাস করে থাকেন। এ কর্মকর্তা তার ইচ্ছেমতো পছন্দের লোকজনকে তালিকায় নাম উঠিয়েছেন, এমন অভিযোগ উপজেলার অন্যান্য পুকুরের ক্ষেত্রেও রয়েছে। সরকারিভাবে তদন্ত করলেই এ দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র উঠে আসবে।
এ প্রসঙ্গে অভিযোগকারী মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তালিকা প্রণোয়নের সময় তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন, প্রকৃত সদস্যদের তালিকাভূক্ত করার জন্য। কিন্তু মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ তা অমান্য করে গোপনে যোগসাজসে নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিসিআর প্রদান করেন।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদের (সদ্য বদলীকৃত) সাথে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।নিমগাছি সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, অনিয়মের বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।