লেখক: মোঃ আঃ রাজ্জাক রাজু
সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের জীবন নিঃশব্দ অথচ দীপ্তিময়। তাঁরা উচ্চারণ করেন না, বরং তাঁদের জীবনই হয়ে ওঠে ভাষ্য; তাঁদের চলনে, ভাবনায়, সেবায় ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের আধ্যাত্মিক আলো, যা মানুষকে ভাবায়, বদলায়। পীরজাদা মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ তেমনই একজন আলোকিত পথিকৃৎ—একজন আলেম, গবেষক, দাঈ, শিক্ষক, সমাজসেবক ও হৃদয়ছোঁয়া মানুষ।
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৮ সালের ১৯ মে, বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের লাঙ্গলমোড়া গ্রামে, নানাবাড়ি আবুল কাশেম মিঞার বাড়িতে। পিতা আলহাজ খোন্দকার ক্বারী মাওলানা মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ—একাধারে চিকিৎসক ও দ্বীনদার আলেম। মাতা ফরিদা ইয়াসমিন ছিলেন একজন শিক্ষিতা, ধর্মভীরু এবং সমাজসেবায় নিবেদিতপ্রাণ নারী।
চিরস্মরণীয় এক বেদনাবিধুর অধ্যায়—২০১১ সালের চব্বিশ সেপ্টেম্বর ছোট ভাই আতাউল্লাহ খোন্দকারের জন্মের কিছুক্ষণ পরেই মা ইন্তেকাল করেন। এই শোক তাঁর হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছে, কিন্তু সেই বেদনা তাঁকে গড়েছে আত্মপ্রত্যয়ে, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধে।
দাদা মরহুম খোন্দকার আবদুর রহমান (রহ.) ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ও ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। বড় বোন উম্মে হানি সোমা একজন বিবাহিতা ও সমাজসচেতন নারী। ছোট ভাই আতাউল্লাহ বর্তমানে বগুড়া জামিল মাদ্রাসার কিতাব বিভাগে অধ্যয়নরত।
শৈশব কেটেছে সীমাবাড়ীতে, পিতার চিকিৎসা ও ইলমী কেন্দ্রের আন্তরিক পরিবেশে। এখানেই গড়ে ওঠে ইলম ও দ্বীনের প্রতি গভীর অনুরাগ। শিক্ষাজীবনের শুরু সীমাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর স্থানীয় কওমি কিতাব বিভাগে প্রাথমিক ইলম শিক্ষা গ্রহণ করেন। দাখিল ও আলিমে বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ফাজিল সম্পন্ন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
দ্বীনি ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি অংশগ্রহণ করেন নানা প্রশিক্ষণে—কুরআন তালিম ফাউন্ডেশন (ঝিনাইদহ), ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীনে ঈমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি (রাজশাহী), নাদিয়াতুল কুরআন ফাউন্ডেশন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ও শায়খুল কুরআন আল্লামা কারী বেলায়েত হোসাইন (রহ.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রধান মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (কাজলার পাড়, ঢাকা)।
চাকরি জীবনে ছিলেন চান্দাইকোনা কলেজ জামে মসজিদের খতিব হিসেবে ৪ বছর এবং মাইলমারী জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে প্রায় ৫ বছর। এছাড়াও তিনি নায়েবে মোহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন চড়িয়ার বিল বাজারের মাদরাসাতু আছ হাবির রসুল সা মাদরাসায়। বর্তমানে কর্মরত আছেন নারিশ এগ্রো লিমিটেডের এগ্রো বায়ো সলিউশন বিভাগে। পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করছেন:
মারকাযুদ দাওয়াহ উচ্চতর গবেষণা ও সেবা কেন্দ্র
খোন্দকার আহমদ আল আমিন চিকিৎসা ও পরামর্শ কেন্দ্র
খোন্দকার আহমদ এন্টারপ্রাইজ
ও
আইডিয়াল নূরানী মডেল মাদ্রাসা
সামাজিক সংগঠনে তিনি সক্রিয়:
উপদেষ্টা, শেখ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি পাঠাগার (বেটখৈর);
সাবেক সচিব দাওয়াহ ও সদস্য : কুরআন মজলিস বাংলাদেশ (বগুড়া জেলা);
বিভাগীয় সমন্বয়ক, সুবর্ণ স্বেচ্ছাসেবক কমিটি ও সুবর্ণ রেড ড্রপ (রাজশাহী বিভাগ);
সদস্য, বগুড়া অনলাইন রক্তদান সংগঠন।
একজন সক্রিয় কলাম লেখক হিসেবেও পরিচিত তিনি। লিখেন—
দৈনিক: করতোয়া, নয়া দিগন্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন
মাসিক: মদীনা, আল কারীম, সৃষ্টির সেবা, মুসলিম নারী
অনলাইন ও স্থানীয়: সপ্তাহিক চলন বিল বার্তা, বিভিন্ন ইসলামি মিডিয়া ও নিউজ পোর্টালে
গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
রুহের বিনাশ নেই, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়, আত্মার ব্যাধি ও তার প্রতিকার , জেনা থেকে বাঁচার উপায়, তাওবার গুরুত্ব সহ সমাজের সচেতনতা মূলক প্রবন্ধ—যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এক শিক্ষিত, ধার্মিক ও উদারমনের নারী—জাকিয়া আমিনুল ঝরনার সঙ্গে (বিবাহ: ১৫ জুলাই ২০১০)। তাঁদের একমাত্র পুত্র আহমদ আল আমিন, জন্ম ২৬ নভেম্বর ২০১৪, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর অধ্যয়নরত।
বংশপরম্পরায় তিনি একজন আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী। তাঁর পূর্বপুরুষ হাজী ক্বসীমুদ্দীন (রহ.) ছিলেন ধুনট উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা, যাঁর নামে “হাজী ক্বসীমুদ্দীন জামে মসজিদ” এলাকাবাসীর শ্রদ্ধার প্রতীক।
এই মনীষী এখনো সুস্থ ও সক্রিয়ভাবে দ্বীন, সমাজ ও মানবতার খেদমতে নিয়োজিত। তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোর দিশা দেখায়। আমরা দোয়া করি—মহান আল্লাহ তাঁকে সুস্থতা, দীর্ঘ হায়াত এবং কল্যাণে পূর্ণ রাখুন। তিনি যেন আমৃত্যু আল্লাহর পথে অবিচল থাকেন, সকলের নিকট দোয়া কামনা করছি, আমিন।
লেখক মোঃ আঃ রাজ্জাক রাজু সম্পাদক সাপ্তাহিক চলন বিল বার্তা
—
