সরিষা আবাদ নিয়ে শঙ্কা

Spread the love
 
সাড়ে ৭শ বিঘা আবাদি জমিতে আটকে আছে পানি
ডাঃ আমজাদ হোসেন মিলন
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রায় সাড়ে ৭শ বিঘা আবাদি জমিতে বন্যার পানি আটকে আছে। ফলে সরিষা ফসলের আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রায় ২০ বছর পর পানি বের হওয়ার ব্যক্তিগত খালটি ভরাটে এবারে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের পাশাপাশি নাগরৌহা, চরপাড়া, পংরৌহা, ভদ্রকোল, বাখুয়া গ্রাম এলাকার আবাদি মাঠের  জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বিঘা হবে বলে হিসাব মেলে। ইউনিয়ন ৩টি হলো- সদর উল্লাপাড়া, কয়ড়া ও পুর্ণিমাগাতী। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে পরিচিত নাগরৌহার সুলফিগাড়ী, লালি, চরপাড়া খাপাল, ভদ্রকোলে দোপাচড়া, ভদ্রকোল জোলা, পংরৌহার সরিষাদহ, বাখুয়ার কার্তিকের ধরের নিচু ও উচু মাঠে জমির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার বিঘা বলে জানা যায়।
অতিতে বিশাল এ মাঠে সহজে বন্যার পানি ঢুকতো আবার বের হয়ে যেতো। একইভাবে বৃষ্টির পানি বের হতো অতি সহজে। একাধিক সরকারি নালা ও খাল হয়ে পানি বের হয়ে বের হয়ে যেতো বলে জানা যায়। নালা ও খালগুলো হলো- শৈলাগাড়ী খাল, কয়ড়া নালা, বুড়ির বিল খাল।
বিগত ২০০০ সালে নাগরৌহার শৈলাগাড়ীর (আসান কাটা) এলাকায় কচুয়া নদী (বিলসুর্য) থেকে ভেংড়ী গ্রামের মো. আজিজল হকের ব্যক্তিগত প্রায় ২০ শতক জমিতে একটি খাল কাটা হয়। স্থানীয় একটি ইটভাটা মালিক বর্ষা মৌসুমে তার ইটভাটায় সহজে নৌকা চলাচলে এ জমি লিজ নিয়ে খালটি খনন করেন। এ খালটি হয়ে পুরো এলাকার বন্যা ও বৃষ্টির পানির সহজে বের হতো। ৩টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বিঘার পুরো মাঠেই মৌসুম কালে সরিষা ও ইরি ধান ফসলসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ হতে থাকে।
এদিকে ব্যক্তিগত খালটি  হয়ে পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকায় অন্য খাল ও নালাগুলো ভরাট করে সরকারি সড়কপথ ও অনেকেই অবৈধ দখলে নিয়ে ভরাট করে ফেলেছে বলে জানা যায়। গত মাস সাতেক আগে ব্যক্তিগত খালটির জমির মালিক আজিজল হক তা ভরাট করে ফেলেছেন। এ বিষয়ে আজিজল হকের বক্তব্যে তিনি জমিটি ১০ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিলেন। সেখানে ২০ বছর চলছে। লিজের মেয়াদ পার হওয়ার পর একাধিবার জানানো হলেও নতুন করে কোন লিজ চুক্তি হয়নি। তিনি নিজ দরকারে খালটি ভরাট করেছেন।
এদিকে খালটি ভরাট করে ফেলায় সে সময় এলাকার কৃষকেরা আশংকা করেছিলেন তাদের মাঠ থেকে সহজে পানি বের হবেনা। বন্যা ও বৃষ্টির পানি শুকনো ম্যেসুমে জমে থাকবে। সরিষা ফসলের আবাদ হয়তো করা যাবে না। এখন অনেকটাই তাই হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নাগরৌহার সুলফিগাড়ী, লালি, সরিষাদহর আগাড়ী, কার্তিকের ধরে কমবেশি পরিমাণ পানি জমে আছে। বুড়ীর বিল হয়ে পানি বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকদের কথায় পানি বের হওয়ার পথ না থাকায় নিচু মাঠ গুলোয় পানি আটকে আছে। বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা জানায় সরিষা আবাদের পুরো সময় হয়ে এসেছে। মাঠে এখনো পানি আটকে আছে। আবহাওয়ায় কড়া রোদ তাপ হলে হয়তো পানি কিছুটা কমবে। উচু জমিগুলোয় সরিষা আবাদ করা গেলেও তা নাবি হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে স্থানীয় কৃষকেরা খালটি ভরাট পর পরই তাদের মাঠে জলাবদ্ধতার আশংকা করে এবং পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ বরাবরের লিখিত আবেদন জানায়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে একাধিকবার সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখে আসা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার সুবর্না ইয়াসমিন সুমী জানান, ব্যক্তিগত জমির খালটি ভরাট করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ১০ ফুট গভীরে আড়াই থেকে তিনশ ফুট পাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা পাইপ বসানো হলে সহজেই পানি নিস্কাশন হবে। বিষয়টি উপজেলা সেচ কমিটিকে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD