মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ
ভূমিকা: ঈমান ও জীবনচর্চার মূল ভিত্তি
মুসলমান জীবনের মূল ভিত্তি হলো কালেমা তাইয়্যিবা—লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
এটি শুধু একটি বাক্য নয়, বরং মুসলিমের জীবন, চিন্তা ও আচরণের মূলদিশা। এর মাধ্যমে মুসলিম ঘোষণা করে যে, তার সকল ভক্তি, আনুগত্য ও ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত। অন্য কারও সামনে সিজদা করা, ভক্তি প্রকাশ করা বা পূজা করা মুসলমানের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক মুসলমান দুর্গাপূজায় গিয়ে আনন্দ উপভোগ করে, শুভেচ্ছা জানায়, চাঁদা দেয় বা পূজা কমিটির সদস্য হিসেবেও অংশ নেয়। এটি কেবল সামাজিক ভ্রান্তি নয়, বরং ঈমানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহ এক লেকচারে উদাহরণ দিয়ে বলেন—
> “যদি বিএনপির কোনো নেতা আওয়ামী লীগের আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বা চাঁদা প্রদান করেন, তবে কি তার দলীয় পরিচয় অটুট থাকবে? নিশ্চয়ই না।”যদি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে এমন যুক্তি প্রযোজ্য হয়, তাহলে যেখানে আল্লাহর একত্ব অস্বীকার করা হচ্ছে, সেখানে গিয়ে আনন্দ করা বা আর্থিক সহায়তা করা কি মুসলিমের ঈমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? উত্তর স্পষ্ট—না।চিন্তার উদাহরণ: ধরুন, কোনো মুসলিম যুবক পূজায় গিয়ে আনন্দ উপভোগ করে। তার অন্তরে ঈমান থাকলেও, তার আনন্দে কোনও দ্বিধা বা ব্যথা আসে না। এটি প্রমাণ করে—ঈমান কেবল মুখে; অন্তরে নেই।
কুরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন—> “তুমি যখন দেখ, তারা আমার আয়াত নিয়ে বিদ্রুপ করছে, তখন তাদের থেকে সরে পড়বে, যতক্ষণ না তারা অন্য বিষয়ে প্রবেশ করে।”
(সূরা আন‘আম: ৬৮) আরেক স্থানে বলেন—> “যখন শুনবে, আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন তাদের সঙ্গে বসো না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হয়ে যাবে।”
(সূরা নিসা: ১৪০)শিরক ও কুফর যেখানে সংঘটিত হচ্ছে, সেখানে উপস্থিত থাকা মানেই অপরাধে শরিক হওয়া।
হাদীসের শিক্ষারাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন—> “যেখানে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা হচ্ছে, সেখানে উপস্থিত থেকো না; কারণ উপস্থিত থেকে প্রতিরোধ না করলে সকলের উপর অভিশাপ বর্ষিত হয়।”
(মুসনাদে আহমদ, তাবারানী, বাইহাকী)যেখানে সবচেয়ে বড় অপরাধ শিরক সংঘটিত হচ্ছে, সেখানে আনন্দ উপভোগ করা কতটা গুরুতর—এটি সহজেই বোঝা যায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে করণীয়
১. ইসলাম প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীকে তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়েছে।
২. রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৩. মুসলমান হিসেবে সেখানে গিয়ে আনন্দ করা, চাঁদা প্রদান করা বা কমিটিতে যুক্ত হওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।
৪. এটি ঈমানের জন্য হুমকি এবং মানুষকে কুফরি বা মুনাফেকির দিকে ঠেলে দেয়।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা
খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহিমাহুল্লাহ দামেস্কে খ্রিস্টানদের চার্চ ও মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসা করেছিলেন। তিনি মুসলমানদের স্বার্থ নয়, বরং ন্যায্যতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি কখনো বলেননি যে মুসলমানরা চার্চে গিয়ে আনন্দ করবে বা অংশ নেবে।
হৃদয়ের প্রশ্ন
আপনার প্রিয় বাবা-মাকে কেউ অপমান করলে আপনি কি সেখানে আনন্দ করবেন?
যদি না—তাহলে আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং মূর্তির সাথে শরিক করা যে আসরে আনন্দ করা, সেটিও কেন গ্রহণযোগ্য হবে?
রবীন্দ্রনাথের গল্পে যেমন “কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই”, তেমনি পূজায় গিয়ে মুসলমান প্রমাণ করে—সে কখনোই মুসলমান ছিল না; তার ঈমান কেবল মুখে ছিল।
উপসংহার
দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানরা অবশ্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, কিন্তু সেখানে গিয়ে আনন্দ দেখা, শুভেচ্ছা জানানো, আর্থিক সহায়তা করা বা কমিটিতে যুক্ত হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং ঈমান নষ্টকারী কাজ।