কোথাও ‘ফায়ার প্লেস’ ঘিরে বসে পানভোজনের আয়োজন। আবার কোথাও ‘বার্বিকিউ’। রাত ১২টা বাজা মাত্র আলো, আতসবাজি, ‘ফোম স্প্রে’ করে হুল্লোড়। বর্ষবরণের অনেক পার্টিতে এটাই এখন দস্তুর। ডিজে চালিয়ে কিংবা গায়ক-গায়িকার গানের তালে সেই আগুনের কাছে নাচানাচির ছবিও ফি বছর দেখা যায়। হঠাৎ আগুন লেগে গেলে কী হবে তা নিয়ে এতদিন প্রায় কারও হেলদোল ছিল না। এবার মুম্বইয়ের একটি রেস্তোরাঁয় জন্মদিনের পার্টি চলাকালীন আগুন লেগে ১৪ জনের মৃত্যুর পরে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির পুলিশ-প্রশাসন, দমকল সে জন্য বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে। শিলিগুড়ির বিদায়ী পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘যে কটি জায়গায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সর্বত্র পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার জন্য বলা হয়েছে।’’
দমকলও আসরে নেমেছে। কারণ, শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় মাঝারি এবং বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০টি বর্ষবরণের পার্টি হতে চলেছে। দার্জিলিং পাহাড় ধরলে সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। তাই দমকলের অফিসাররা নানা অনুষ্ঠানস্থল পরির্দশন শুরু করেছেন। দমকলের বিভাগীয় আধিকারিক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সব দমকল কেন্দ্রের অফিসারদের বলে রাখা হয়েছে, কোথাও কোনও গাফিলতি যেন ছাড় না দেওয়া হয়। লাগাতার পরিদর্শনও চলবে।’’
দমকল সূত্রের খবর, শহরের বড় মাপের অনুষ্ঠানের আয়োকজদের তরফে দমকলের কাছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম আগে থেকেই মজুত রাখার আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু, বিধি অনুযায়ী, দমকলের পক্ষে ভিভিআইপির নিরাপত্তা ছাড়া অন্য কোথাও আগাম যাওয়া সম্ভব নয়। এমনকী, সে জন্য যাবতীয় খরচ দিতে কেউ রাজি হলেও দমকলের পক্ষে আগাম কোথাও গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জানান, পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে।
কী করবেন
• পার্টিতে গেলে তার অনুমোদন রয়েছে কি না জেনে নিন। • যথাযথ নিরাপত্তা আছে তো? • অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে কি না দেখে নিন। • মোবাইলে চার্জ রয়েছে কি না, অবশ্যই খেয়াল করবেন। • বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখবেন।
কী করবেন না • মদ্যপ অবস্থায় কখনওই গাড়ি চালাবেন না। • জাঙ্ক ফুড খাবেন না। • আগে থেকে ঢেলে রাখা পানীয় খাবেন না। অচেনা কারও হাত থেকেও পানীয় নেবেন না। • পরিচয়পত্র ছাড়া পার্টিতে যাবেন না। • শরীর খারাপ লাগলেও বসে থাকবেন না। |
শিলিগুড়ির সেবক রোড, হিলকার্ট রোড, ইস্টার্ন বাইপাস, মাটিগাড়ার সিটি সেন্টার, জলপাইগুড়ির কদমতলা ও শহরের উপকম্ঠের কয়েকটি ধাবা, রেস্তোরাঁয় বর্ষশেষে নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এবারও অন্তত ৩৫টি জায়গায় তা হবে বলে দমকল জানতে পেরেছে। রাত ১২টায় বর্ষবরণের সময়ে ‘ফোম’ স্প্রে করার ছবিও অতীতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, পুলিশ ও দমকলের পক্ষ থেকে ফোম স্প্রে করার ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে বার হওয়ার রাস্তা ঠিক আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দমকলের এক কর্তা জানান, যেখানে নাচ হবে তার ধারেকাছে কোনও খোলা আগুন রাখা চলবে না।
শিলিগুড়ির একটি অভিজাত ক্লাবের জেনারেল ম্যানেজার হীরকজ্যোতি মৈত্র বলেন, ‘‘খোলামেলা পরিবেশে আমাদের পার্টির আয়োজন হয়। সেই সঙ্গে একাধিক জলাধার রয়েছে। দমকলের থেকে যথাযথ অনুমতি নিয়েই যাবতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে।’’ জলপাইগুড়ি কদমতলার একটি হোটেলে নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে মেটাল ডোর। হোটেলের ম্যানেজার অরূপ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সুরক্ষা তো বটেই এবার অগ্নিপ্রতিরোধ নিয়েও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রেস্তোরা, হলে জল-বালির ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।’’
(সহ প্রতিবেদন: অনির্বাণ রায়)