গোলাম মোস্তফা : শত বছর যাবত আশায় বুক বেধে থাকে। তবুও তাদের দুঃখ দুর্দশার দিকে আজও কেউ ফিরে তাকায় নি। বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষকালে নৌকাই যাদের একমাত্র ভরষা। বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের বহুবার অবগত করেছেন ভুক্তভোগীরা। জেলার তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ বাজার খেয়াঘাটে গুমানী নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে একটি ব্রিজ তাদের স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে এপার-ওপার হচ্ছেন নদীর দু’পারে বসবাসকারী লোকজন। বিকল্প মাধ্যম না থাকায় অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন তারা। সাঁকোটির দু’পাশে রেলিং নেই। বাঁশের পাটাতন উঁচু-নিচু অবস্থায় রয়েছে। পারাপারের সময় দুলতে থাকে। বেশি লোকজন একসাথে চলাচল করলে মনে হয় ভেঙে পড়বে। পারাপার হতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন বৃদ্ধ নারী-পুরুষ, শিশু, প্রতিবন্ধী,ব্যবসায়ি ও শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী হালিম মন্ডল, আব্দুর রহিম, সোলেমান হোসেন, আবু তাহের, শফিকুল ইসলাম, আতিকুর রহমানসহ অনেকে জানান, বহুকাল ধরে বাঁশের সাঁকোতে চলছে তাদের পারাপার। যাদের বর্ষাকালে একমাত্র অবলম্বন নৌকা। যদি কোন নারীর প্রসব ব্যথা দেখা দেয় বা কোন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয় পড়ে তবে তাকে লোকজন ধরাধরি করে বাঁশের সাঁকো পারাপার করে দিতে হয়। আর বর্ষা মৌসুমে শয্যাশায়ী করে নৌকায় তুলে নদী পার করতে হয়।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, নদীর উত্তরের পারের গ্রামগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ধান ও সবজি উৎপাদন করে স্থানীয় কৃষকরা। নদীতে ব্রিজ না থাকায় ন্যায্যমূল্য পায়না তারা। সবজি আর হাজার হাজার মণ ধান মাথায় নিয়ে বহু কষ্টে দক্ষিণ পারের ধামাইচ বাজার, চাঁচকৈর বাজার, কাছিকাটা বাজার, মসিন্দা বাজার ও সাইকোলা বাজারসহ বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। একটি ব্রিজের অভাবে নদীর দু’পাড়ের ইশ^রপুর, ধামাইচ, হেমনগর, নওখাদা, বিন্নাবাড়ি, চরকুশাবাড়ি, দবিরগঞ্জ, রানী গ্রাম, কাটাবাড়ি, বাহাদুর পাড়াসহ চলনবিলের কমপক্ষে ৩০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ শিক্ষা ক্ষেত্রে ও কৃষি ক্ষেত্রে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। ফলে জীবনমান উন্নয়নেও পিছিয়ে তারা। তারা এও বলেন, ভোটের পর আবারও ভোট আসে। তবে জনপ্রতিনিধিরা কেউই তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন না। তাদের এই দুর্দশা চলছে বৃটিশ আমল থেকেই। এমনকি এমপিরাও আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন নি।
শিক্ষার্থী লিটন আহমেদ, সৌরভ হোসেন, সোহাগ হাসান, ইমরান হাসান, রাকিবুল ইসলাম, ফারজানা খাতুন, আখি খাতুন, সুমাইয়া খাতুন, টুম্পা খাতুন, শিমু পারভিনসহ অনেকে জানান, নদীর এপার-ওপারে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে সবুজ পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ধামাইচ বিলচলন উচ্চ বিদ্যালয়, নওখাদা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা অন্যতম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। প্রতিদিন তারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পারাপার হন। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রায়ই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে যায়। তবে নদীতে পানি কম থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বর্ষাকালেও একই রকম দুর্ভোগ থাকে তাদের। তখন মাঝে মধ্যেই নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে। এভাবে তাদের বিদ্যালয়ে আসতে-যেতে কষ্ট হয়। অনেক বাবা-মা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় তাদের শিশু সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নূর মামুন সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আজিজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তাকে বলেন, ইতোপূর্বে ধামাইচ বাজার খেয়াঘাটে গুমানী নদীর ওপর একটি ব্রিজের জন্য প্রাক্কলিত প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। নদীতে ব্রিজ হলে বহু মানুষের জন দুর্ভোগ কেটে যাবে।
![](http://www.chalonbeelbarta.com/wp-content/uploads/2019/02/Tarash-Sirajganj-2-Pic-02-02-19-1-660x330.jpg)