তাড়াশের রোকনপুর দাখিল মাদ্রাসা- নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

Spread the love

গোলাম মোস্তফা, বিশেষ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রোকনপুর দালিখ মাদ্রাসার নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একটি পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে তা গোপন রাখা হয়েছে। বিশেষ করে এবার পুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টিও চাকরির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয় নাই। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগের আগেই পছন্দ মত নির্দিষ্ট তিন জন চাকরির প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ হিসাবে নিয়েছেন বেশ কয়েক লাখ টাকা নিয়োগ কমিটি। একই সাথে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মনোনয়নের আবেদন করে তাড়াহুড়ো করেছন ডিজির প্রতিনিধি পাওয়ার জন্য ও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য এ নিয়োগ কমিটি।
তালম ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের উত্তর পাড়ার আবুল কালাম নামের এক জন ভ্যানচালক বাবা তার ছেলে রাব্বির নিরাপত্তা পদে চাকরির জন্য রোকনপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আলামিন হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট কে বি এম আব্দুল মান্নানকে ৫টি গরু বেচে টাকা দিয়েছেন চার লাখ। আমাদের বাড়ির পাশের আনার নামে এক ব্যক্তি ১টি কিনেছেন ৭৪ হাজার টাকা দিয়ে। বাকি গরুগুলো হাটে বেচা হয়েছে। আবুল কালামের স্ত্রী ও রাব্বির মা সাজেদা খাতুনের কথায় বেড়িয়ে আসে চাকরি দেওয়ার আগেই আগেই টাকা নেওয়ার সব তথ্য। রাব্বির মা আরো বলেন, ১০ লাখের বেশি টাকা চেয়েছেন আমার ছেলের চাকরির। একটু জমি আছে, বেচে দেব।
অপরদিকে রোকনপুর দালিখ মাদ্রাসার সভাপতি ও তালম ইউনিয়ন যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন কাওছার বলেন, জীবনে কিছু করতে পারিনাই। নিয়োগের টাকা থেকে একটা অংশ আপনাকেও পৌঁছে দেওয়া হবে! এ নিয়ে লেখালিখ হলে নিয়োগ পার করা সম্ভব না।
স্থানীয় ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকরা বলেন, ১৯৭২ সালে রোকনপুর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সভাপতি আলামিন কাওছার ও ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট কে বি এম আব্দুল মান্নানের নানা অনিয়োম ও দুর্নীতির কারণে এ মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোকনপুর মাদ্রাসার সভাপতি আলামিন কাওছার এক জন পঞ্চম শ্রেণি পাশ। মূলত সে সভাপতি হওয়ার পর থেকে শিক্ষার বেহাল দশা। এ মাদ্রাসাতে ১৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন বেতনভুক্ত। কিন্তু অধিকাংশ দিন ১ম শ্রেণি থেকে ১০ শ্রেণিতে ১০ জন ছাত্রছাত্রীও উপস্থিত হয়না। বিশেষ করে তারা ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য রোকনপুর মাদ্রাসার সভাপতি আলামিন কাওছার ও সুপারিনটেনডেন্ট কে বি এম আব্দুল মান্নানের দ্রæত অপসরণের দাবি তুলেছেন।
(১৯ তারিখ) মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে দেখা গেছে, রোকনপুর মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণিতে ক্লাস করছেন ৬ জন ছাত্রছাত্রী। ১০ম শ্রেণির হাফছা নামে এক জনসহ আরো দুই জন ছাত্রী কমন রুমে বসে রয়েছেন। প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য বেঞ্চ মাত্র রয়েছে ৪ থেকে ৫টি করে ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৯ম শ্রেণির ১ জন ছাত্র বলেন, ৯ম শ্রেণিতে ৬ থেকে ৭ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হয়না। আজকে ৬ষ্ট, ৯ম ও ১০ শ্রেণি মিলে ৯ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত আছেন মাদ্রাসাতে।
রোকনপুর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট কে বি এম আব্দুল মান্নান বলেন, নিয়োগ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবনা। মাদ্রাসার সভাপতি আলামিন কাওছারের কাছ থেকে সব জেনে নিন।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে পুন নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচংি মং মারমা বলেন, আগে অভিযোগগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তারপর নিয়োগ।
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আফছার আলী বলেন, চাকরির জন্য যিনি টাকা দিয়েছেন ও যারা টাকা নিয়েছেন প্রমাণসহ আমাকে দেন। আমি এদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়োগ বানিজ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করব।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রসাশন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈম বলেন, বাংলাদেশের কোথাও সিরাজগঞ্জের মত নিয়োগ বানিজ্যে হয়না। অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমান পাঠিয়ে দিন। আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব। #

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD