নাটোরে প্রাকৃতিক জলাধার ও পুকুর ভরাটের চলছে মহাৎসব

Spread the love

আবুল কালাম আজাদ

নাটোর রাজ-রাজন্যের উর্ববর ভূমি। এই নাটোর সবুজ প্রকৃতিক সৌন্দর্যের সমারহ ও নদি-নালা, খাল-বিল,পুকুর, জলাশয়ে সমৃদ্ধ। সেই নাটোরেই প্রাকৃতিক জলাধার ও পুকুর ভরাটের মহাৎসব চলছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের তোয়াক্কা না করেই নাটোর- বগুড়া মহাসড়কের পাশের প্রাকৃতিক জলাশয়, খাল, নয়নজুলি ভরাট করা হচ্ছে। অবৈধভাবে নাটোর পৌর পুকুরও ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন চিঠি চালাচালি ও দায় এড়ানো বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। প্রতিকার অধরাই থাকছে!

সরজমিনে দেখা যায়, বগুড়া (জাহাঙ্গীরাবাদ) নাটোর জাতীয় মহাসড়কের ছোট হরিশপুর সড়কের উভয় পাশে, নাটোর সদর উপজেলার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে (মহাসড়ক সংলগ্ন) থেকে শুরু করে ভাটো দারা, উত্তরা গণভবন এর প্রবেশ পথ, বঙ্গবন্ধু ম্যুড়ালের পার্শ্বস্থ জলাধার, ডাল সড়কনামক স্থানের খাল, সিংড়া উপজেলার খেজুরতলা ও আমতলায় পুকুর এবং জলাশয়, বন্দরে প্রাকৃতিক জলাধার, সেরকোল কফিলের ব্রীজের নিচু মরাগাঙ্গীনা নদী এবং খাল অবাধে ভরাট করা হচ্ছে। কেউ কেউ পাকা স্থাপনা তৈরি করে মার্কেট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। মরাগাঙ্গীনা নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও নাটোর পৌর এলাকার মধ্যে কালেক্টরেট স্কুলের সামনে আজাদের পুকুর, হরিশপুর চেয়ারম্যান রোডে সাবেক কাউন্সিলর ফারহাদ হোসেন এর ভাগ্নী জামাই ও তার পার্টনার টিটু এবং তেবাড়িয়া উত্তর পাড়া, পাল পাড়া, লালবাজার, চৌকির পাড়, কাঁঠালবাড়িয়াসহ পৌরসভার বিভিন্ন পুকুর এবং প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করা হচ্ছে।
এসব দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও নিরব ভূমিকায়। চিঠি চালাচালি ও দায় এড়ানো বক্তব্য ছাড়া সমাধানের পথে হাঁটছে না প্রশাসন।
স্থানীয় কৃষক ও আওয়ামী-লীগ নেতা রাজ্জাক বলেন, সড়র বিভাগ থেকে লীজ নেয়ার নাম করে প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা আবাদের জন্য পানি পাচ্ছেন না। তিনিও এটির ভুক্তভোগী। অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পান নি। নাটোর কালেক্টর স্কুলের অধ্যক্ষ জিএম ইসরাফিল ইসলাম ও অভিবাবক সাইফুল ইসলাম জানান, কালেক্টর স্কুলের সামনে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জায়গা ভরাট করে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। পাশের আরেকটি পুকুর ভরাট করে প্লান অনুমোদন নিয়েছে। এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় নি। অভিযোগ খন্ডনের জন্য পৌর সভায় ডেকে এক রকম হয়রানিই করা হয়েছে। মেয়র না থাকায় শুনানিই হয় নি। এখন পুরোদমে ভবন নির্মাণ কাজ চলছে।
নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত পুকুর ভরাট করতেও প্রশাসনের অনুমোদন লাগবে। কিন্তু এ বিষয়েও নজরদারি না থাকায় সেটা মানা হচ্ছে না। এতে সরকারি ও ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের খেলায় মেতেছেন কিছু অসাধু স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী। নাটোর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার আক্তার হামিদ খান বলেন, গত ১ বছরে নাটোর শহরে ৫৪টি দূর্ঘটনা ঘটেছে। শহরের ভেতরে বা বাইরে পানি সংরক্ষণের জায়গাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করলে মৎস্য আহরণে ভাটা পড়ে। এতে শুধু মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয় না, বাড়িতে আগুন লাগলেও পানির সংকট হয়। পুকুর ভরাট চলতে থাকলে মৎস্য আহরণ কমে যাবে। চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইমরান বলেন, জলাধার ভরাট হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক তার সার্ভেয়ার ও তহশীলদারকে নিয়ে গত রোববার বন্দর আমতলা নামক স্থানে অভিযান করে ওই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। যেহেতু সড়ক বিভাগের জায়গা তার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তাদের জানানো হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়গুলোতে তারা নজরদারি বাড়াবেন। নাটোর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ আকন্দ বলেন, মহাসড়কের পার্শ্বে লীজ দেয়ার কোন সুযোগ নাই। এমন কি ব্যক্তিগত জায়গা হলেও মহাসড়ক থেকে ৩০ ফিট দূরে স্থাপনা করতে হবে আইনে সেটাই আছে। এছাড়াও অবৈধ-অনুমোহীনভাবে সংযোগ সড়ক নির্মান ও সড়কের পাশে জলাধার ভরাট বন্ধের জন্য বিভাগীয় অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও অবৈধ দখলদার ব্যক্তিকে অবগত করার জন্য গত ১১ এপ্রিল চিঠি দেয়া হয়েছে।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, পুকুর খনন এবং বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নাই। তবে পৌর এলাকার মধ্যে হলে অনুমতি লাগে। রাষ্টের প্রচলিত আইন ও পৌর আইন যদি কেউ অমান্য করে তাহলে ইউএনও এবং এ্যাসিল্যান্ড এর সহায়তায় প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।নাটোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুকুমার শাহা বলছেন, গত এক বছরে তাদের অফিসে কোন অভিযোগ আসে নি। তবে জলাশয় ও পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আর এসব কারণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারি এসব জলাধার সংরক্ষণে তাদের ভূমিকা নিয়ে কোন কথা বলেন নি এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে নাটোরে নতুন যোগদান করেছেন। তবে বিষয়টি তার নজরে আছে। তিনি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD