উল্লাপাড়া প্রতিনিধি
ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সিরাজগঞ্জের দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হাই কোর্ট স্থগিত করেছে বলে আবেদনকারীরা জানিয়েছেন।গত সোমবার [৬ ডিসেম্বর] বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের দ্বৈত বেঞ্চ পৃথক দুটি রিট আবেদনে এই আদেশ দেয়।
উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদের ফলাফলের গেজেট ৪ মাস এবং দুর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।দুর্গানগরের গেজেট প্রকাশ স্থগিতের আদেশের কপি হাতে পেলেও বাঙ্গালা ইউনিয়নের বিষয়ে আদেশের কপি এখনও পাননি বলে উল্লাপড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান।তবে রিট আবেদনকারী দুই প্রার্থী স্থগিতের আদেশ হওয়ার কথা জানান।গত ২৮ নভেম্বর এই দুই ইউনিয়নে নির্বাচন হয়। দুই ইউপিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিজয়ী হন বলে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ঘোষণা করা হয়। পরে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
বাঙ্গালা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু হানিফ ও দুর্গানগর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তারেকুল ইসলাম এই দুই পৃথক রিট আবেদন করেন।আবু হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, বাঙ্গালা ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কর্তব্যরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের দেওয়া ফলাফল অনুযায়ী মোটরসাইকেল প্রতীকে ৭ হাজার ১২৮ ভোট পেয়ে তিনি প্রথম হন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সোহেল রানা নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কেফায়েত উল্লাহ ঘোড়া প্রতীকে ৫ হাজার ৮২১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।“অথচ প্রিজাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রগুলো থেকে ফলাফল উপজেলা সদরের হলরুমে স্থাপিত কল্টোল রুমে নিয়ে গেলে সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়।”তিনি বলেন, “কারচুপির মাধ্যমে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ৯ হাজার ৭১৮ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আর আমার মোটরসাইকেল প্রতীকের ভোট কমিয়ে ৫ হাজার ১৪ ভোট দেখানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, অবৈধ ফলাফলের গেজেট স্থগিত এবং ভোট পুনরায় গণনা চেয়ে রোববার [৫ ডিসেম্বর] উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে আদালত বাঙ্গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ চার মাসের জন্য স্থগিত রাখতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে।আরেক রিট আবেদনকারী তারেকুল ইসলাম বলেন, দুর্গানগর ইউনিয়নে ১৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসারদের দেওয়া ফলাফল অনুযায়ী অটোরিকশা প্রতীকে ৮ হাজার ৪৫৩ ভোট পেয়ে তিনি প্রথম হয়েছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ রানা মোটরসাইকেল প্রতীকে ৭ হাজার ৯৭৭ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আফসার আলী নৌকা প্রতীকে ৭ হাজার ৫৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।“অথচ প্রিজাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রগুলো থেকে ফলাফল উপজেলা সদরের হল রুমে স্থাপিত কল্টোল রুমে নিয়ে গেলে সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষার পর নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়।”তিনি বলেন, “কারচুপির মাধ্যমে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে তৃতীয় স্থানে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ৯ হাজার ২১৬ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আর আমার অটোরিকশা প্রতীকের ভোট কমিয়ে ৭ হাজার ৯৫১ দেখানো হয়।”তিনি জানান, ‘অবৈধ’ ফলাফলের গেজেট স্থগিত ও পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে বৃহস্পতিবার [২ ডিসেম্বর] উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলে দুর্গানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, “দুর্গানগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিতে উচ্চ আদালতের আদেশের কপি হাতে পেয়েছি; বাঙ্গালা ইউনিয়নের কপি এখনও পাইনি। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই, পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন ও উচ্চ আদালত।”তবে ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগের প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি