একজন মানুষের প্রকৃত মানব রূপে রূপান্তর হতে যা দরকার, তা হচ্ছেÑ রুহানি জগৎ থেকে কয়েকটি মঞ্জিলে অবস্থান করে মাতৃগর্ভে এসে আস্তে আস্তে মানব রূপে রূপান্তর হতে থাকে। তারপর সময় হলে এ জগতে অবতরণ করে। রুহানি জগৎ থেকে শুরু করে মাতৃগর্ভ হয়ে জগৎ সংসারে আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তোমার ছিলো না কোন আত্মীয় স্বজন, অর্থ-সম্পদ, দল ও দলীয় পরিচয়। আবার মৃত্যুর পর কবর জগৎ থেকে হাশর ময়দান, মিজান ও পুলসিরাত সেখানেও তুমি একা হয়ে যাবে। তাই দুনিয়ার জগতের আত্মীয়তা, দল সংগঠন তা তোমার কোন কাজেই আসবে না। পূর্বেও যেমন একক ছিলে শেষেও তোমাকে এককভাবেই অবস্থান করতে হবে।
একটি বিষয় বড়ই অস্পষ্ট থেকে যায়। জগতে আসা হয়েছে যথাযথ নিয়মে। কিন্তু কে কখন কাকে রেখে চলে যেতে হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এরই মাঝে গুছিয়ে নিতে হবে ওপারের সম্বল। প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পাঁচ মামলা। যথাÑ মউত, কবর, হাশর, মিজান ও পুলসিরাত। ঐ মামলায় কোনো আইনজীবীর সহায়তার সুযোগ নেই, জামিন নেই। জগতে যত বড় রাজনৈতিক কর্মী হও না কেন, ওখানে তোমার জন্য কোন মন্ত্রীর সুপারিশ করার সুযোগ নেই।
১ম মামলা ‘মউত’। দেহরক্ষী র্যাব-পুলিশ, স্পেশাল ফোর্স, সেনাবাহিনী চারপাশে নজরদারীর মধ্য থেকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। কেউ বুঝতেও পারবেনা গ্রেফতারের অবস্থা কী হবে, শুধু ঐ মামলার আসামী ব্যতীত। ২য় মামলা ‘কবর’। আগুনে জ্বালিয়ে দাও, পানিতে ভাসিয়ে দাও, মাটির নিচে রেখে দাও অথবা কেটে টুকরো টুকরো করে হিং¯্র প্রাণীদের দিয়ে খাইয়ে দাও; তবুও তার আদালতে জবাবদিহিতা করতেই হবে। জবাব সঠিক হলে মেহমানকে আদরে কবরে রাখা হবে। ব্যর্থ হলে কঠিন শাস্তিতে গ্রেফতার করা হবে। পরবর্তী মামলা হাশর পর্যন্ত। বর্ণিত আছে সর্বশেষ মানুষটি যখন ইন্তেকাল করবে সেও কমপক্ষে ৪০ হাজার বছর কবরে অবস্থান করবে। ৩য় মামলা ‘হাশর’। সেখানেও রয়েছে কঠিন পরীক্ষা। হাশরের ময়দানে বিচারের অপেক্ষায় হাজার হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে। ৪র্থ মামলা ‘মিজান’। সেখানে ওজন করা হবে জগতের সকল অর্জন যা জীবিত অবস্থায় সংগ্রহ করেছো।উপস্থিত করা হবে তোমার জীবনের ডায়েরী যাতে লেখা থাকবে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের কাজ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজের ঘরে নিজেই আগুনে জ্বালিয়েছিলে। আত্মপক্ষের লোককে হত্যা করেছিলে দলীয় বিজয়ের জন্য। নিজেদের টাওয়ার/স্তম্ভ নিজেরাই ধ্বংস করে প্রতিপক্ষকে অপরাধী করেছিলে, সব উঠে আসবে ঐ ওজনের পাল্লায়। সেখানে নেকের পাল্লা ভারী হলে সে মামলা থেকে মুক্তি পাবে নইলে অনন্তকালের শাস্তি জাহান্নাম। ৫ম মামলা ‘পুলসিরাত’। নেক আমল থাকলে দ্রুত গতিতে পার হতে পারবে; নইলে জাহান্নামের গর্তে পতিত হতেহবে।
ভাববার বিষয়;
তোমার জীবনী শক্তি কী? রূহের সুরত কেমন, রূহের শক্তি বা ওজন কত? যা কেউ নির্ণয় করতে পারে না। এটি একমাত্র আল্লাহ’র হুকুম মাত্র। তোমার হাত উপরে উঠানোর ইচ্ছা করলে কোন্ শক্তি তা উঠিয়ে দেয়? পা চলতে ইচ্ছে করলেই পা চলে, কার শক্তিতে চলে? তোমার দৃষ্টি, শ্রবণ শক্তি, কথা বলা, ঘ্রাণ শক্তি, জিহবাতে স্বাদ অনুভূতি কার শক্তিতে আসে। তোমার বাহু শক্তি ইচ্ছে করলে প্রয়োগ করতে পারবে না। আল্লাহ পাকের ইচ্ছেই তোমার সবকিছু পরিচালনা করেন। ভুলে যেও না, যার শক্তিতে তোমার মানব পরিচয় তার হুকুমের বাইরে কিছুই করার ক্ষমতা তোমার নেই। তোমার অর্থ-সম্পদ, ক্ষমতা, দলীয় পরিচয় কোনটাই কাজে আসবে না। তোমার দুনিয়ার অস্তিত্ব রক্ষায় যা করবে তা যদি ঐ মহান শক্তির ইচ্ছেমত না হয় অথবা তাঁর বিরোধী হয় তবে রক্ষা পাবে না পাঁচ মামলায় একটিতেও। এমপি, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত কিংবা সেনাপ্রধান যাই হও না কেন, মউতের মামলায় গ্রেফতার হতেই হবে।
হুঁশিয়ার সাবধান , হে মানব । গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই আত্মসমর্পণ করো। দিনে ৫ বার তার আদালতে হাজিরা দাও ।িতনি ক্ষমাশীল ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত হও, ব্যর্থ হলে রক্ষা নেই। তার কাছেই আত্মসমর্পণ করো, যার হাতে আমার বেঁচে থাকা, মৃত্যু, ইহকাল ও পরোকালের সুখ-শান্তি যদি তার নাফরমানি হয় তবে কী হবে? যেহেতু সবাই পাঁচ মামলার আসামী।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও কলামিষ্ট,শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ।