তাড়াশে জলাবদ্ধতা : পুকুর খননকারীদের ছাড় নয় ,শাস্তি দিন

Spread the love

তাড়াশ উপজেলা ঐতিহাসিক চলনবিলের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় এটা আদিকাল থেকেই কৃষি ও মৎস্য সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে পাকিস্তান আমল থেকেই চলনবিল তথা তাড়াশ অঞ্চল প্রথমে বুনো আমন ধান ও পরে রোপন পদ্ধতির ইরি বোরো চাষে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে।  বর্তমানে তাড়াশ একটি একচেটিয়া কৃষি ফসলি এলাকা ও খাদ্য শস্য উৎপাদনে অনেক উদ্বৃত্ত অবস্থানে রয়েছে। সেই সাথে আঞ্চলিক খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নেও তাড়াশের কৃষি ও কৃষকের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনননের মহোৎসব চলছে বিগত প্রায় এক দশক ধরে। গত কয়েক বছরেই এখানে ৫ হাজারের বেশী পুকুর খনন করা হয়েছে কোন বাধা বিঘ্ন ছাড়াই। সেই পুকুর খনননের হিড়িক তথা মহাযজ্ঞ এখনো থেমে নেই। উপজেলা প্রশাসন কালে কষ্মিনে দু’একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত করে দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাতে না থামে পুকুর খননের হুজুগ, না বন্ধ হয় তথাকথিত মৎস্য চাষের উম্মাদনা। ফলে গত কয়েক বছর হলই প্রধানত জলাবদ্ধতার কারণে বিলের পানি নামছে ধীরগতিতে।এছাড়া আছে সোঁতিজালের প্রতিবন্ধকতা। এমতাবস্থায় তাড়াশের কৃষকগণ প্রায় প্রতিবছরই রবি শস্য চাষেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং রোপা আমন ও ইরিবোরো চাষও ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে তাড়াশ তথা চলনবিলে যে দ্বিতীয় দফা বন্যা হচ্ছে তাতে সদ্য রোপণ করা বিপুল রোপা আমন চারা ডুবে নষ্ট হয়েছে। এখন সামনে আশংকা, এ বন্যা আরো কিছুকাল দীর্ঘায়িত হলে এর সাথে ভরাট খননের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কৃষককে আরো বিপদে ফেলে দিবে। তারা ইতোমধ্যে শাক সবজি ফসলেও মার খেয়েছে। সামনে জলাবদ্ধতা তথা ধীরে ধীরে জল নিষ্কাশনের কারণে এবারে মনে হয় তাদের পক্ষে রবি শস্য চাষ করা সম্ভব হবে না। এছাড়া পরবর্তী ইরিবোরো মওসুমও বিলম্বিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনকে আসন্ন শুকনো মওসুমে পুকুর খনন রুখতে এখন থেকেই পরিকল্পনা মাফিক শক্ত পদক্ষেপে এগোতে হবে। কেননা পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হবে পুকুর খননের পালা। এক্ষেত্রে ইউনিযন পরিষদসহ স্থানীয সরকার প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য, পুকুর খনন প্রতিরোধে প্রশাসন অদ্যাবধি সাফল্যের প্রমাণ কেন রাখতে পারে নাই তার কারণ খুঁজে বের করে সে মোতাবেক সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাড়াশের কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা বড় বাধা। সে কথা অতি সম্প্রতি তাড়াশ  উপজেলা কৃষি অফিসারও গণমাধ্যমের সাথে তার এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া এই জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা  এলাকার কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যে অদূর ভবিষ্যতে মহা বিপদ ডেকে আনবে বলে সবাই মনে করছেন। তাই পুকুর খননকারীদের কোনো ছাড় নয়। বরং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা রুখে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে এটা ভযাবহ রুপ নিবে বলে সবার ধারণা। যা আমাদের কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে বিশাল ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD