ড্রাগ কন্ট্রোলারের প্রতিনিধি ছা়ড়া কাউকে নথিপত্র দেখানো যাবে না, জানিয়ে দিলেন মালিক। মুহূর্তে ফোন। খানিক বাদে হাজির স্বয়ং মহকুমাশাসক।— বৃহস্পতিবার কালনায় ওষুধের দোকানে অভিযানে বেরিয়ে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইলেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের দাবি, কয়েকটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম নজরে পড়েছে।
কী ভাবে চলল অভিযান? বৃহস্পতিবার বিকেলে কালনা মহকুমা হাসপাতালে সামনে দাঁড়াল দু’টি গাড়ি। নামলেন ম্যাজিস্ট্রেট মালবিকা খাটুয়া ও বিকাশ বিশ্বাস। সঙ্গে সিভিল ডিফেন্সের কয়েক জন কর্মী। গাড়ি থেকে নেমেই হাসপাতালের সামনেই একটি ওষুধের দোকানে গেলেন তাঁরা। ততক্ষণে ঝাঁপ বন্ধ করছেন দোকান মালিক। প্রশাসনের কর্তাদের সটান জিজ্ঞাসা, ‘ফার্মাসিস্ট কোথায়?’ এ ছাড়া দোকানে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নাম কেন, ওষুধ কিনলে ‘ক্যাশমেমো’ দেওয়া হয় কি না, এমনই নানা বিষয়ে জানতে চান প্রশাসনের কর্তারা। ও দিকে লাগাতার প্রশ্নের পরে দোকানের ভিতরে ‘লাইসেন্সটা নিয়ে আসি’ বলে ঢুকে পড়লেন দোকান মালিক। হাজির এক কর্মচারী। তিনিও কর্তাদের প্রশ্নের সুদুত্তর দিতে পারলেন না।
এ বার গন্তব্য হাসপাতালের প্রথম দরজার সামনে অন্য একটি ওষুধের দোকান। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটরা দোকানের মালিকের কাছে ব্যবসা সংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে বলেন। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, সেই সময়ে ওই দোকান মালিক জানিয়ে দেন, ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিসারকে ফোন করেছি। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের প্রতিনিধি ছাড়া কাউকে নথি দেখানো যাবে না।’ ম্যাজিস্ট্রেট দু’জন এর পরে জানান, মহকুমাশাসক তাঁদের পাঠিয়েছেন। এর পরেও দোকান মালিক নথি দেখাতে না চাওয়ায় মালবিকাদেবী জানান, তিনি ফোন করেন মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়াকে। মহকুমাশাসক নিজেই ওই দোকানে অভিযান চালাবেন বলে জানান মালবিকাদেবী।
এর পরে ওই দুই ম্যাজিস্ট্রেট হাসপাতাল চত্বর লাগোয়া আরও তিনটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালান। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেখানে গিয়েও দেখা মেলেনি ফার্মাসিস্টদের। ড্রাগ কন্ট্রোলারের প্রতিনিধিদের দোকানে অভিযান চালানোর নমুনা, ক্রেতাদের রসিদ দেওয়ার মতো বিষয়গুলি সম্পর্কেও ওই দোকান মালিকেরা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি বলে প্রশাসনের কর্তাদের অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রের খবর, ফার্মাসিস্ট কোথায় জিজ্ঞেস করায় কোনও দোকানে উত্তর মিলেছে, ‘আজ আসবেন না’। কোথাও বা উত্তর মিলেছে, ‘এই মাত্র বেরিয়ে গেলেন ফার্মাসিস্ট।’ কারও আবার উত্তর, ‘শীতকাল বলে আসতে দেরি হচ্ছে।’ এ সব শুনে ওই দুই ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘এক দিনেই এত কিছু?’
বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মহকুমাশাসক নীতিনবাবু হাসপাতালের প্রথম দরজার উল্টোদিকের দোকানে গিয়ে নথিপত্র খতিয়ে দেখেন। ম্যাজিস্ট্রেটদের কেন নথি দেখানো হয়নি জিজ্ঞেস করলে আগের মতো ফের একই কথা বলেন দোকান মালিক। এর পরে মহকুমাশাসক ফোনে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ড্রাগ কন্ট্রোলার আধিকারিককে ইনস্পেক্টর-সহ দেখা করার নির্দেশ দেন। অভিযান চালিয়ে ওই দোকানে বেশ কিছু অসঙ্গতি পান মহকুমাশাসক। মহকুমাশাসকের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালায় বিদ্যুৎ দফতরও। বিকেল পাঁচটা নাগাদ দোকানটি ‘সিল’ করে দেয় মহকুমা প্রশাসন। এর আগে প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগে আটক করা হয় দোকান মালিককে। শুক্রবার কালনা শহরের সমস্ত ওষুধ দোকানগুলিকে একটি বৈঠকে ডাকা হয়েছে বলে জানান মহকুমাশাসক।