নিয়ম ভেঙে বছর শুরু দুই জেলার

Spread the love

অনলাইন ডেস্কঃ বিকট শব্দে বাজল ডিজে বক্স। দেদার ফাটল বাজি। চড়ুইভাতির সঙ্গেই চলল মদ্যপান। নতুন বছরকে এই ভাবেই বরণ করল হাওড়া ও হুগলির বেশিরভাগ মানুষ।

দুই জেলাতেই প্রশাসন বলেছিল, বর্ষবরণের রাতে এবং নতুন বছরের প্রথম দিনে শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে সজাগ দৃষ্টি নেওয়া হবে। রাস্তায় বাড়তি পুলিশ থাকবে।এছাড়াও ভিড়ের মধ্যে ছড়িয়ে থাকবে সাদা পোশাকের পুরুষ ও মহিলা পুলিশ। রাস্তায় পুলিশ থাকলেও দু’দিনই কোথাও তারস্বরে বেজেছে পেল্লাই ডিজে বক্স, কোথাও ছিল শব্দবাজির দাপট। বছরের শেষ দিন মাঝরাত পেরিয়েও উৎপাত থামেনি। প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন উদাহরণ নেহাতই বিরল।

দুই জেলার শহর এবং গ্রাম—দুই জায়গাতেই শব্দদূষণের দাপট ছিল অব্যাহত। অথচ ডি়জে এবং শব্দবাজি— দুই-ই এ রাজ্যে নিষিদ্ধ। কিন্তু আশ্বাস দিলেও শব্দদানবের বিরুদ্ধে পুলিশ বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কেউই সেভাবে পথে নামেনি। সেই সুযোগে কোথাও রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বাজিতে আগুন দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও পাড়ায় অসুস্থ মানুষ রয়েছেন জেনেও ডিজে বাজানো হয়েছে।

হুগলির উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া থেকে মগরা, পান্ডুয়া থেকে ধনেখালি হয়ে আরামবাগে— সর্বত্রই আনন্দ উপভোগের নামে ডিজে ও শব্দবাজির দাপট দেখা গিয়েছে। শহরাঞ্চলে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের ছাদ থেকেও বাজি ফাটানো হয়েছে। বর্ষবরণের রাত শেষ হতেই নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর থেকেই হুগলির বিভিন্ন পিকনিক স্পটে ভিড় জমতে থাকে।  চন্দননগরের কেএমডিএ পার্ক, সিঙ্গুর, ভদ্রেশ্বরের নিউ দিঘা আর ছুটি পার্কে ভিড় জমান অনেকে। বলাগড়ের সবুজদ্বীপ, আরামবাগে গড়মান্দারণ, আর দ্বারকেশ্বরের চড়ায় তিল ধারনের জায়গা ছিল না। তুলনায় পোলবার সুয়াখাল বিনোদন পার্কে ভিড় কম ছিল। জেলা পরিষদের অধীনে থাকা এই পার্কে পরিকাঠামো বলে এখন প্রায় কিছুই নেই।

     এ দিন হুগলির সরকারি পার্কগুলিতে পুলিশের টহলদারি থাকায় এ দিন অনেকেই খানিক লুকিয়ে মদ্যপান করেছেন। তবে বেসরকারি জায়গায় প্রকাশ্যেই মদ্যপানের আসর বসেছিল। অনেকে সোজা জানিয়ে দেন, সরকারি জায়গায় লুকিয়ে মদ্যপান করতে হচ্ছে। তাই তাঁরা ওখানে যাননি। হুগলির সরস্বতী নদীর পাড়ে এ দিন অনেকেই পিকনিক করতে এসেছিলেন। সেখানে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘‘সরকারি পার্কে যাইনি। ওখানে পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে। পিকনিকে এসে একটু-আধটু না খেলে চলে?’’

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার বলেন, ‘‘পুলিশের নজরদারি ছিল। তবে বিছিন্ন কোনও ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা আরও সতর্ক থাকব।’’ হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তাও জানান, শব্দবাজি ও ডিজে বন্ধে নজরদারি চলেছে।

গ্রামীণ হাওড়ার ছবিটাও ছিল কমবেশি একই রকম। সরকারি পার্কে পুলিশের কিছুটা নজরদারি থাকলেও বেসরকারি জায়গায় প্রকাশ্যে মদ্যপান চলেছে। বছরের প্রথম দিনে উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ হাত অন্তর ডিজে বক্স বাজছে। একই সঙ্গে চলছে মদ্যপান। থার্মোকলের থালা-বাটি দামোদরেই ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই এলাকায় ডিজে না বাজানো, নদীতে বর্জ্য না ফেলার আবেদন জানিয়ে পোস্টার দিয়েছিল। অভিযোগ, সে সব ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকেও একই আবেদন জানিয়ে ব্যানার লাগানো হয়েছিল। ব্যানারটি অক্ষত থাকলেও সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না দেখার জন্য পঞ্চায়েতের কেউ ছিলেন না। বেনিয়মের একই ছবি দেখা গিয়েছে গড়চুমুক, ফুলেশ্বরের মত জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলিতেও।

যদিও নজরদারিতে খামতির অভিযোগ মানেনি পুলিশ। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা দাবি করেছেন, ‘‘সব জায়গায় পুলিশের টহলদারি ছিল। কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা হতে দেওয়া হয়নি।’’

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD