বেআইনি জলের কারবার

Spread the love

অনলাইন ডেস্কঃ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে তিনতলা বাড়ি।  বড় লোহার গেট। সেখানেই দীর্ঘ দিন ধরে চলছিল বেআইনি পানীয় জল তৈরির কারবার।

শনিবার আমডাঙা থানার সন্তোষপুর এলাকায় ওই কারখানায়  অভিযান চালায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (ডিইবি)। ইন্সপেক্টর অভিজিৎ হাইতের নেতৃত্বে  দলের সঙ্গে ছিল আমডাঙা থানার পুলিশও।

ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, সারি সারি সাজানো পানীয় জল-ভর্তি জার। খালিও অনেকগুলি। রয়েছে যন্ত্রপাতি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল তুলে ট্যাঙ্কে জমা করা হয়। রয়েছে প্রচুর ট্যাপকল। সেই সব ট্যাপ কলের থেকে জল পাত্রে রেখে তাতে ওষুধ-সহ নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে মিনারেল ওয়াটার হিসাবে বিক্রি হয়। ডিইবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাজের জন্য সংস্থার সরকারি অনুমতি ছিল না।  বেআইনি ভাবে চলছিল কারবার। জানা গিয়েছে, কেবলমাত্র স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল। পানীয় জলের ব্যবসা করতে হলে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন অনুমতি প্রয়োজন, যা ওই সংস্থার ছিল না।

এ দিন ডিইবি সংস্থার দুই কর্মীকে পাকড়াও করেছে। পরে ডিইবি-র অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম, অভিজিৎ  বেরা ও বাবলু কোনালি। কারখানাটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংস্থার মালিক সন্দীপ বাগ পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪৯টি জল-ভর্তি জার উদ্ধার হয়েছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেআইনি পানীয় জল কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আমডাঙার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘‘এইচ টু ও লাইফ’’ নামে ওই সংস্থা থেকে আটক করা জল পরীক্ষার জন্য সরকারি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। আমডাঙা ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় সংস্থাটি কারবার ফেঁদে বসেছিল। স্থানীয় এলাকায় ২০ লিটার জল ২০ টাকায়, এবং দূরত্ব বেশি হলে ২০ লিটার জল ৩০ বিক্রি করা হত। ওই জলে আর্সেনিক আছে কিনা, তা নিয়ে এখন উঠছে প্রশ্ন। আদৌ জল পরিস্রুত মিনারেল ওয়াটার কিনা, তা নিয়েই সংশয় দানা বেঁধেছে।

বাসিন্দারা জানালেন, ওই ঘরের ভিতর কী প্রক্রিয়ায় পানীয় জল তৈরি হত, তা কাউকে কখনও দেখতে দেওয়া হয়নি। সংস্থার কর্তারা এলাকায় প্রভাব বাড়ানোর জন্য নানা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকেন। ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজো করা হয়।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এমন বেআইনি পানীয় জলের কারবারের হদিস এই প্রথম নয়। কিছু দিন আগেও জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ বাগদা থেকে একটি কারখানার হদিস পেয়েছিল। সেখানেও মূল সড়কের থেকে একটু ভিতরে ইটের দেওয়ার দেওয়া গোপন জায়গায় কারখানাটি চলত। একই রকম ভাবে পাইপের মাধ্যমে মাটির তলা থেকে জল তোলা হত। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বোতলে ভরে তা বাজারে বিক্রি করা হত বলে জানতে পারে পুলিশ।

পুলিশ ও ডিইবি সূত্রে জানা গিয়েছে, পানীয় জলের ব্যবসা করতে হলে জল দূষণ বা জীবাণুমুক্ত কিনা, তা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকে হয়। জল পরীক্ষার জন্য একজন কেমিস্ট রাখা বাধ্যতামূলক। তিনিই জল পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেবেন। কিন্তু আমডাঙার কারখানায় কোনও কেমিস্ট ছিলেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, হাবরা মছলন্দপুর বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকাতেও ওই রকম বহু পানীয় জলের কারবার চলছে। সে সবও পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD