নওগাঁ সংবাদদাত : নওগাঁর মান্দায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কুখ্যাত সেই বহুল আলোচিত কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ী গৌড় ঋষী (৪৫) কে অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর পর আটক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে এক অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন নওগা ডিবি’র পুলিশের সদস্যরা। এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
নওগাঁ ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে মাদক দ্রব্য অভিযান পরিচালিত হয়ে আসছে। ঘটনার দিন গোপন সংবাদের উপর ভিত্তি করে তার নেতৃত্বে উপজেলার সতীহাট শ্রীরামপুর মেটেলপাড়া গ্রামের মৃত গতিশ ঋষীর ছেলে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী গৌড় ঋষীকে আটক করা হয়। এ সময় বাড়ী ও বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী চালিয়ে গোপন স্থানে রাখা বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার সহযোগিরা এ সময় অপারেশনের সংবাদ পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। পরে তাকে মান্দা থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশি¬ষ্ট থানায় মাদক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন জানান, মাদক দ্রব্য আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আটক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী গৌড় ঋষীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় উপজেলার অন্যতম মাদক স্পট হিসেবে খ্যাত সতীহাট বাজার এলাকায় মাদক দ্রব্যে গোটা এলাকা ছেয়ে গেছে। এখানে দিন-রাত হিরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও ইয়াবা যত্র-তত্র পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার মাদক সম্রাট হিসেবে খ্যাত মৃত গতিশ ঋষীর ছেলে গৌড় ঋষী। সতীহাট বাজার সংলগ্ন ঋষীপাড়ায় (মেটেলপাড়া) নেতৃত্ব দেন স্বয়ং গৌড় ঋষী। সে আজন্মই মদ, গাঁজা, আফিম, হিরোইন ইয়াবাসহ বহু প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে কৌটি পতি বনে গেছে। তার সহযোগী গ্যাং হিসেবে খ্যাত গোকুল ও জিতেন ধরা পড়েছে।
সম্প্রতি তাদের দলের ১ কেজি হোরইনসহ এক মাদক বিক্রেতা র্যাব-৫ এর হাতে সরাসরি ধরা পড়ে এখনও জেল হাজতে রয়েছে। গৌড় ঋষী পৈত্রিক সুত্রে বাবার দেড় বিঘা জমি হতে অনেকগুলো দামী মোটরবাইক, নওগাঁ জেলা শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স হওয়ায় সুধীজনের মধ্যে নানা প্রশ্নর উদ্রেক হয়েছে মাত্র ৭/৮ বছরে কিভাবে কোটিপতি বনে গেছে। গৌড় ঋষী বাড়ীর রাস্তা সংলগ্ন স্থানে একটি ভাংড়ির দোকান রয়েছে। সেখানে ৫ জন কর্মচারী কাজ করে। তাদের মাসিক বেতন ৬০ হাজার টাকা বলে ঐ সূত্রের দাবী। তার ভাংড়ির দোকান লোক দেখানো মাত্র। ঐ সকল কর্মচারীর দ্বারা নেশা দ্রব্য বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঐ দোকানের কর্মচারী খোকাকে দিয়ে ঐসকল মাদক দ্রব্য রাজশাহী ও নওগাঁর মাদক স্পট গুলোতে নিয়মিতভাবে সরবরাহ করে থাকে। কেই যেন তাদেকে সন্দেহ না করতে পারে তাই মোবাইলের ব্যাটারী খুলে তার মধ্যে ইয়াবা,হিরোইন পুরে সরবরাহ করা হয় । তাদের নিত্য-নতুন অভিনব কৌশলের কাছে প্রশাসন বড় অসহায় ।
এছাড়া থানা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিশেষ যানবাহন ও অসৎ মহিলা ব্যবহার করে থাকে গৌড় ঋষী। বিড়ি সিগারেটসহ বিশেষ ধরনের চানাচুরের প্যাকেটও তারা এ কাজে ব্যবহার করছে। চাহিদা মত মোটরবাইকে করে ও সরবরাহ করা হয়। মাছের খাঁচিতে করে ঢাকা থেকে ইয়াবা ও এখান থেকে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য রাজধানীসহ বিভিন্ন স্পটে সরবরাহ করা হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর অগোচরে তারা এ কাজে কোমলমতি ছিন্নমূল পথ-শিশুদের পর্যন্ত বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ব্যবহার করে। তার হাত এত বেশি লম্বা যে,আইনের লোকজন পুলিশ,বিজিবি,র্যাব সব তার কাছে ফেল। নানা সময়ে বিজিবি ও র্যাব অভিযান চালালেও সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল। একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান করায় তাকে সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী দলীয় লোকজন,ধান্ধাবাজ হলুদ সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে নির্বিঘেœ তার ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর পর সে ধরা পড়ল। ফলে তার এসব কর্মকান্ডে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে পথে বসেছে।
অনেকেই চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন প্রকার অপরাধ জগতে প্রবেশ করেছে। ২০১২ সালে দৈনিক বগুড়া, রাজবার্তা, স্টার নিউজ, মুক্ত সকাল, আমাদের রাজশাহী, সোনার বাংলাসহ বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের টনক নড়ে। গডফাদারদের আড়াল করে রাখলেও ।
সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে মাদকের বেশ কিছু চুনোপুটিরা কিছুদিন চুনোপুটিদের গ্রেফতার করলেও অজ্ঞাত কারণে বড়বড় গডফাদারদের কিছুইতেই যেন গ্রেফতার করতে পারছিল না।। এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এলেও তাদের আশংকা আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে অল্প দিনেই হয়ত আবার জেল থেবে জামিনে বেরিয়ে এসে পুরনো মাদক ব্যবসায় আবার নিয়মিতভাবে জড়িয়ে পড়বে। তাই তারা তার জামিন যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছে তারা।