জিটিবি নিউজ ডেস্ক : টাঙ্গাইল, গাজীপুর, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া কুষ্টিয়া ও ভোলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। বৃহস্পতিবার পৃথক দুর্ঘটনায় হতাহতের এসব ঘটনা ঘটে। যদিও এই বড় অংকের প্রাণহানীর একদিন আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন এবারের ঈদে দুর্ঘটনায় ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত বছরের থেকে এবার দুর্ঘটনা ঘটেছে কম। গতবছর প্রাণহানি ঘটেছিল ৯০ জনের। যেসব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটত সেখানে অনেক কমে গেছে।’
গত বুধবার সচিবালয়ে ঈদে ঘরমুখী এবং কর্মস্থল ফেরত মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে গঠিত মনিটরিং টিমের কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার ঘরমুখো মানুষের যাত্রা এবং কর্মস্থলে ফিরে আসা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ছিল অধিক স্বস্তির। আগেই বলেছিলাম দেশের সড়ক-মহাসড়ক যানজটের কারণ হবে না। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নিবিড় মনিটরিংয়ে মানুষ নিরাপদে ঈদ উদযাপন করে ফিরে আসতে পারায় আমরা আনন্দিত। এর একদিন পরেই ঘটে এই ভয়াবহ পৃথক ঘটনা। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে ৯জন ও গাজীপুরে ৮জন করে, সিলেটে ৩জন ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় দুইজন নিহত হয়েছেন। কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০ জন ও ভোলায় সাতজন আহত হয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
টাঙ্গাইল : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে গেছে। এতে নয় যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পুলিশের গোড়াই থানার সার্জেন্ট জামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাঐখোলা নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ছয় যাত্রী নিহত হন। পরে আরও দুই যাত্রী মারা যান। এ ঘটনায় বাসের অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে তিনি তাদের সঠিক সংখ্যা ও পরিচয় জানাতে পারেননি। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় জেলার ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছিল। দুর্ঘটনার পর করটিয়া-মির্জাপুর সড়েকের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রশাসন যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজীপুর : গাজীপুরের হায়দরাবাদ এলাকায় ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার আট যাত্রী নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী, তিন শিশু ও চার পুরুষ রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন নরসিংদী সদরের জিতারামপুর গ্রামের করিম মিয়ার ছেলে শাহ আলম (৩৬), তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম (৩০), আল-আমিন (২৭) ও চুন্নু মিয়া (২৮)।অটোরিকশার চালক ও তিন শিশুর পরিচয় পাওয়া যায়নি। শিশু তিনটির বয়স আনুমানিক ৮ ও ৫ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, শিশু তিনটি শাহ আলম ও পিয়ারা বেগম দম্পতির। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে হায়দরাবাদ এলাকায় অননুমোদিত রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় ঢাকা থেকে জয়দেবপুরগামী ডেমু ট্রেন। এতে অটোরিকশাটি ট্রেনের সামনের অংশে আটকে যায়। চালক ট্রেনটি থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রেনটি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে থামে। পরে স্থানীয়রা অটোরিকশাটি ট্রেনের সামনে থেকে টেনে আলাদা করেন। আধা কিলোমিটারজুড়ে রেল লাইনের পাশে নিহতদের মরদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে। আর অটোরিকশার চালকের মরদেহ অটোরিকশায় আটকে থাকে। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হাসান বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার সকল যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। জয়দেবপুর রেলওয়ে ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দাদন মিয়া বলেন, জয়দেবপুর জংশন ফাঁড়ি পুলিশ, জয়দেবপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করেন। পরে সেগুলো গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান হয়। নিহত আল-আমীনের চাচা শুক্কুর আলী বলেন, শাহ আলম ও পিয়ারা বেগম দম্পতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের খাইলকুর এলাকায় ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করত। ঈদের ছুটি শেষে তারা গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর জিতরামপুর থেকে অটোরিকশাযোগে খাইলকুরে আসছিল। আসার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন।
সিলেট : জেলার ওসমানীনগর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত যাত্রী। উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুপুর ৩টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাসটির উদ্ধার অভিযান চলছিল। ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরসালিন জানান, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে প্রথমে চারজনের নিহতের কথা বলা হলেও পরে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলার সরাইল উপজেলায় বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইসলামাবাদ নামক স্থানে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকার দরবেশ আলী (৩৭) ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মগর এলাকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইনজামামুল হক (২৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। তাদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকালে সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ইসলামবাদে পৌঁছলে একটি অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও তিনজন। তাদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি আহতদের নাম জানাতে পারেননি।
কুষ্টিয়া : জেলার খোকসায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাত্রীবাহী পদ্মা-গড়াই বাসের চালকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া বাজারের পাশে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রীবাহী বাস পদ্মা-গড়াই (বগুড়া মেট্রো-জ-১১-০১৩৮) কুষ্টিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার দিকে যাওয়ার সময় শিমুলিয়া বাজারের কাছে আসলে গাড়ির চাকা ফেটে যায়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে বাসটির ধাক্কা লাগে। এ সময় চালকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। অধিকাংশ বাস যাত্রী হলেও বাসের ধাক্কায় কয়েকজন পথচারীও আহত হন। খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী দাউদ জানান, বাস দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দু’জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ভোলা প্রতিনিধি : জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায় একটি ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে সাতজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন বাসযাত্রী ইসমাইল (৩৯), জসিম উদ্দিন (২৫), আকরাম হোসেন (৪০), তানহা (১৫), মাইনুর বেগম (৪৫), সলেমান মিয়া (৬০) ও ট্রাকচালক আফজাল হোসেন (৩৫)। আহত যাত্রীরা চরফ্যাশন ও ভোলা সদর উপজেলার বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চরফ্যাশন থেকে যাত্রী নিয়ে ভোলার উদ্দেশে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস সীমান্ত সুপার সার্ভিসটি বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে
চলন্ত গাড়িতে সন্তান জন্ম দিলেন মা
জিটিবি নিউজ ডেস্ক : রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামে গাড়ি আটকে। এদিকে, প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন মহিলা। হাসপাতাল আসতে তখন বাকি বেশ কিছুটা সময় বাকি। এমন সময় সেই মহিলা ও তাঁর স্বামী সিদ্ধান্ত নিলেন গাড়ির মধ্যেই ভূমিষ্ঠ নেবে তাঁদের সন্তান।লিসা পেটিজন নামের সেই সাহসী মহিলা চলন্ত গাড়িতেই তাঁর সন্তানের জন্ম দিলেন। লিসার স্বামী জনাথন পুরো ঘটনা ভিডিও করে রাখলেন। ৪ মিনিটের সেই ভিডিও-তে জনাথন গাড়ি চালাচ্ছেন, আর তাঁর স্ত্রী গাড়ির সামনে বসে সন্তানের জন্ম দিলেন। সদ্যোজাতর ওজন হল সাড়ে চার কিলোগ্রাম। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আনন্দে জনাথন বললেন, ‘আমরা পেরেছি, হাই-ফাইভ বেবি।’জনাথন বললেন, ”আমরা কখনই ভয় পাইনি। বিপদের কিছু ছিল না, বুঝেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই চলন্ত গাড়িতেই আমাদের যা করার করতে হবে। তবে আমার স্ত্রী-র মানসিক জোরটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।”