আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ আন্তজার্তিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে মায়ানমার আবারো সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিস্ফোরক পোঁতা শুরু করেছে। সীমান্তের জিরো লাইনের আশপাশে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে এসব বিস্ফোরক মাটিতে পুঁতে রাখছে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিজিবি প্রায় সময় অভিযান চালিয়ে এসব বিস্ফোরক উদ্ধার করলেও মায়ানমার কর্তপক্ষ পুনরায় এসব বিস্ফোরক একই জায়গায় পুঁতে রাখছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন আতঙ্ক উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
মঙ্গলবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবি সদস্যরা এ ধরনের ১৪টি বিস্ফোরক উদ্ধার করে। বিস্ফোরকগুলো এলাকায় মাইন বলা হলেও নিরাপত্তা বাহিনী এগুলোকে হাল্কা বিস্ফোরক আই ই ডি বা ইমপ্রোভাইস্ড এক্সপ্লুসিভ ডিভাইস বলে থাকে। বোতল, প্লাস্টিকের পাইপ বা বাঁশের মধ্যে বিস্ফোরক ডুকিয়ে এগুলো হাতেই তৈরি করা হয়। বিস্ফোরণের জন্য এতে ব্যাটারি ও সার্কিট ব্যবহার করা হয়। সীমান্তে মানুষ বা বন্যহাতি পারাপার ও জিরো লাইনের পাশে কাটা তারের চুরি ঠেকাতে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব বিস্ফোরক পুঁতে রাখছে বলে স্থানিয়রা জানিয়েছে।
তবে বিজিবি বলছে এটি পুরোপুরি সীমান্ত আইন লংঘন। সীমান্তের জিরো লাইনের আশপাশে কোনো বিস্ফোরক রাখা যায় না।
বিজিবি রামু ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, সীমান্তের ৪৬ নাম্বার পিলারের কাছে মায়ানমার বেশ কিছু বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছে খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায় ও ১৪টি আই ই ডি উদ্ধার করে। এগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ব্যাটালিয়ন হেডকোয়াটারে নিয়ে আসা হয়। বিস্ফোরকগুলোতে পায়ের আঘাত লাগলেই সেগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মায়ানমার সীমান্তের ৪৫ নং পিলার থেকে ৬০ নং পিলার পর্যন্ত এলাকায় বিস্ফোরকগুলো পুঁতে রাখছে। এই এলাকাটুকু বান্দরবানের রুমা থানছি সীমান্ত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা আশারতলী পর্যন্ত পরেছে। এর বেশিরভাগ সীমান্তই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
এর আগেও মায়ানমার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ফাত্রাঝিড়ি রেজু আমতলি, চাকঢালা, আশারতলী দোছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বিস্ফোরক পুঁতেছে। ২০০১ সালের দিকে মায়ানমার সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি গ্রুপের তৎপরতা ঠেকাতে ব্যাপকভাবে বিস্ফোরক পোতা শুরু করে। পরে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ জানালে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর এই তৎপরতা বন্ধ হয়। সীমান্তে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরকের ঘটনা ঘটলে সে সময় সীমান্ত জরিপ কাজও বন্ধ হয়ে যায়। সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেই বিস্ফোরকের আঘাতে পঙ্গু ও আহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমার সীমান্তে হঠাত করেই সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় মায়ানমার জিরো লাইন বরাবর বিস্ফোরকগুলো পুঁতে রাখছে। সীমান্তে সন্ত্রাসী দলগুলোর তৎপরতা ঠেকাতেই মায়ানমার এসব বিস্ফোরকগুলো পুঁতে রাখছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা। আগে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিস্ফোরক পোতা হলেও এখন তা বান্দরবানের থানছি আলীকদম সীমান্তে পুতা শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা জনিয়েছেন, রাতের আঁধারে মায়ানমারের বিভিন্ন এলাকার লোকজনদের দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিস্ফোরকগুলো পুঁতে রাখছে মাটিতে। সীমান্তে চুরি করে গাছ কাটা ও কাটা তার সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক কাঠুরিয়াই বিস্ফোরকের আঘাতে আহত হচ্ছে।
আশারতলী এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিজিবির সদস্যরা লোকজনদের সীমান্তে না যাওয়ার জন্য প্রায় সময়ই বারণ করছে। প্রশাসন থেকেও বলা হয়। কিন্তু কাঠ ও সীমান্তের কাটাতারের লোভে লোকজনদের যাওয়া আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় সীমান্তে যাওয়া আসা এখন অনেকাংশে কমেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে বিস্ফোরক পুঁতে রাখার বিষয়ে মায়ানমারকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আগামি বৈঠকগুলোতে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে বিজিবি সব সময়েই সতর্ক রয়েছে।