অতি সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রচুর প্রতিবেদন হয়েছে, এখনো হচ্ছে চলনবিলে দখল-দূষণ-ভরাট-খনন বিষয়ে। বহু লেখালেখি বলাবলি সত্বেও বন্ধ হচ্ছে না, থামছে না এই আত্মঘাতী সর্বনাশা প্রবনতা।বিশেষ করে শুস্ক মওসুম শুরু হওযার সাথে সাথে এর দাপট-দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে। ফসলী জমি খাচ্ছে,রাস্তাঘাট গিলছে, খাল-বিল-জলা-নালা সব গ্রাস করে চলেছে । ধ্বংস করছে পরিবেশ। বিপন্ন হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ।এর পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ যখন বন্যা-দুর্যোগ বাড়তে থাকবে। গোটা জনপদে দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে মহা বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা উরিয়ে দেয়া যায় না। খরা-বৃষ্টিতে ধুলা কাদার দূষণে অতিষ্ট হচ্ছে মানুষ। মাটির ড্রাম ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মানুষ আহত-নিহত হওয়ার মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নয়, হত্যাযজ্ঞ চলেছে। কিন্তু এতসব সত্বেও এটা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না কেন । এর কারণ হলো , এর শেকড় অত্যন্ত গভীরে আবার বিস্তৃত বটে। সরকারী-বেসরকারী ও এক শ্রেণির রাজনৈতিক কেউকেটাসহ বিভিন্ন মহল এর সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা অর্থ-স্বার্থের ভাগ পাচ্ছে এখান থেকে, সেটাই মূখ্য। তাছাড়া দলীয় আনুকুল্য এবং স্বজনপ্রীতির ছোঁয়া তো আছেই। ফলে দায়িত্বশীল কারোই টনক নড়ছে না। প্রশাসনের পক্ষে ভ্রাম্যমান আদালতের নামে কালেভদ্রে একটু উঁকি দিয়ে আর সামান্য সরু গোছের নালা রাখার মাধ্যমে পানি নিস্কাশনের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখে তাদের মহান দায়িত্বের যবনিকা ঘটে। এতে স্থায়ী ও কার্যকর কোনো প্রতিকার মেলে না। এ যাবতের এ ধরনের তৎপরতা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে- উত্তাল গণজোয়ার এবং গণপ্রতিরোধ ছাড়া এই পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড হতে কাউকে বিরত রাখা যাবে না। আইন তাদের নিকট নস্যি। মানুষের জীবনজীবিকার হুমকি ও তাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তাদের স্বার্থান্ধ বিবেকে এতটুকু নাড়া দেয় না। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন একান্ত জরুরী। খনন ভরাট-দখল দূষণকারীদেরকে সামাজিক শক্তি প্রদর্শন না করলে তারা বিরত হবে না। মানুষ এর বিপক্ষে সোচ্চার হলে ও সংগ্রাম করলে আইন ও বিচার তাদের পক্ষে যাবে। তখন এই দুস্কর্মের হোতারা রেহাই পাবে না। কারণ, জনগণের সম্মিলিত আন্দোলনের কাছে কোন প্রভাব ও দূর্বৃত্তপনা টিকে থাকতে পারে না। ওদিকে শান্তি প্রিয় নীরহ মানুষ এখনও জেগে জেগে দেখছে। তারা বুঝতে পারছে না এর ক্ষতির প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। এর ভয়াবহ পরিণতি স্থায়ী রূপ পেয়ে গেলে তা আর নিরসন করা সম্ভব হবে না। এটা সমাজ জীবনে দুর্যোগ তথা মহা প্রলয় ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই এখুনি সময়। সবাইকে জোটবদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে দুস্কর্মকারীদেরকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতি গ্রামে ইউনিয়নে ও উপজেলা পর্যায়ে ভরাট-দখল-খনন বিরোধী সমিতি গঠন ও কর্মপ্লান গ্রহণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। কতিপয় স্বার্থান্ধ মানুষের জন্য গোটা সমাজ দুর্ভোগ ও দুর্দশা পোহাবে তা হতে পারে না। সংঘবদ্ধ গণ আন্দোলনের পেছনে সরকারী প্রশাসন তথা সকল মহল থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কেননা , আমরা দেখেছি, গুরুদাসপুরের সংগ্রামী সাংসদ নিজে এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন যা গোটা চলনবিলে প্রশংসিত হয়েছে। এভাবেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে একযোগে আন্দোলন ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে।