শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা নয়- যেন কানে তালা লেগে গেলো। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ কেবলই ধর্ষণ, নির্যাতন,খুন,অপহরণ এই নেতিবাচক খবরে টিভি চ্যানেলগুলো সরগরম, সংবাদপত্র সরব। মনে হয়- চোখ রাখা যায় না টিভিতে, না খবরের কাগজে। ধর্মের মর্মকথা অনুযায়ী মানব সৃষ্টি আল্লাহর প্রেমের বহি:প্রকাশ। আর সেই মানব সৃষ্টির প্রথম নজির আদম। পরবর্তীতে তার বা পাঁজর থেকে হাওয়ার সৃজন। উদ্দেশ্য আদমের সঙ্গ ও শান্তি প্রদান। মূলত: যে প্রেমানুভূতি থেকে আল্লাহ মানব সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপ একই চেতনাতেই আদমের পাশে হাওয়ার আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। তাতে মনে হয় গোড়াতে মানব সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই আল্লাহর প্রেম ও মানব প্রেম।
সেই মানুষ আজ কত নিষ্ঠুর, কত নির্মম, কত অমানুষ আর কতখানি পশুত্বে নেমে গেছে। এ যেন পশুরও অধম। প্রসঙ্গক্রমে তাড়াশ উপজেলায় বিগত কয়েক বছর ধরেই বিশেষত: নারী- শিশু নির্যাতন হ্রাস না পেয়ে তা উদ্বেগজনক হারে ক্রমবর্ধমান। তার মধ্যে আছে ধর্ষণ,পিটিয়ে আহত করা, প্রতিবন্ধী নারী নির্যাতন সহ বিচিত্র ধরণের নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা যা অবলীলাক্রমে ঘটে চলেছে। এ সবের কোন প্রকার বিরোধিতা, প্রতিবাদ, বিচার, শান্তি ও প্রতিকার নেই। ফলে অদম্য অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলেছে নারীর প্রতি অমানবিক অত্যাচার ও সম্ভ্রম হানির ঘটনা যা সর্বকালেই লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। এই প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি তাড়াশের চলনবিল অধ্যুষিত সগুনা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নওখাদা গ্রামে ঘটে গেল ব্যতিক্রমী এক অদ্ভূত ঘটনা। উক্ত গ্রামের জনৈক গৃহবধুকে গভীর রাতে আকষ্মিক ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে প্রতিবেশী এক নারীলিপ্সু পুরুষ। হয়ত মেয়েটির স্বামী সেদিন বাড়ী ছিল না। তখন গৃহবধু এহেন সংকটময় পরিস্থিতিতে দু:সাহসে ভর করে লম্পটের পুরুষাঙ্গ কেটে দেয় চাকু মেরে। এরপর উক্ত লোককে হাসপাতালে নেয়া হয় বলে খবরে জানা গেছে। এখন এ ঘটনা থেকে সমাজের নারীদের চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায়ত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়। একজন নারী তার নিজ বাড়ীতে শয়ন কক্ষেও তার জীবন ও ইজ্জতের কোন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রতিবেশী নারীকে তারই আরেক প্রতিবেশী পুরুষ ধর্ষণের উদ্দেশ্যে চোরের মত ঘরে ঢুকে পড়েছে। ফলে কোন উপায়ান্তর না দেখে গৃহবধু চাকু দিয়ে এই চরিত্রহীনের পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়েছে। লোকজন এটাকে যেমন কুকুর তেমন মুগুর বলে মনে করে। এমনটি সচরাচর ঘটে না। এ থেকে আজকের সমাজ কোথায় গিয়ে পৌছেছে তা বুঝা যায়। এই নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক অবনতিশীল পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় চিন্তা করতে হবে। দেশে সর্বশেষ নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার দুনিয়া আলোড়ন করা মর্মান্তিক খবর দেখেছে সবাই। এই অশ্লীলতার প্লাবন ও কুকর্মের মহাযজ্ঞ তথা জাহেলিয়াতিপনার শেষ পরিণতি কোথায়। এমন একটি দিন নেই যেদিন দেশে এই ধরনের অসামাজিক ঘটনা না ঘটে। যেন নারী শিশু নির্যাতনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এটা সেকালের আরবের অন্ধকার যুগের কথা স্মরণে এনে দেয়। বাংলাদেশ উন্নয়নে বা অগ্রগতিতে যত বিশ্বখ্যাতি অর্জণ করুক না কেন, যেখানে নারী শিশু তথা সব মানুষ তার জানমাল ও ইজ্জত নিয়ে নিরাপদ নয়, সেখানে সর্বপ্রকার কীর্তি ও সফলতা বিফলতারই নামান্তর। একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এই চালচিত্র মোটেই কাম্য নয়। আলোকিত এই আধূনিক যুগে এদৃশ্য বড় বেমানান। আমরা তাড়াশে পুরুষাঙ্গ ছেদ হওয়া এই দুশ্চরিত্রবান লোকটির যথাযথ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা – শাস্তি চাই যা অন্যরা দেখে একটা শিক্ষা পায়। একই সাথে তাড়াশ উপজেলা প্রসাশনসহ আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সমূহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকরী উদ্যোগ নিবেন বলে এলাকাবাসী আশা করেন। যাতে তাড়াশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা আর না ঘটে। এক্ষেত্রে এলাকার স্থানীয় সরকার , রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজেরও এগিয়ে আসতে হবে। নারী ধর্ষণ সম্পর্কে দেশে বিদ্যমান আইন কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এমতাবস্থায় দেশে নারী সহিংসতা বিরোধী সামাজিক বিপ্লব তথা গণজাগরণ বা গণ আন্দোলন জরুরী। কেননা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও সমাজ ভয়াবহ ধ্বংসের মূখে পতিত হবে তা আমাদের উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না।