মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন আগষ্ট ২০২৩

Spread the love

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ,৩১ আগষ্ট, ২০২৩

 বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট, ২০২৩ সময়কালে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ মাসেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অব্যাহত রয়েছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন, তাদের পরিচয়ে অপহরণ, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা, পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা বন্ধ হয় নাই। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটছে এবং তা উদ্বেগজনক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে  সাংবাদিকসহ অন্যদেরও পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি, শারীরিক নির্যাতন ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। কারা-হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা ও সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বন্ধ হয়নি বরং উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনার ধারাবহিকতা রয়েই গেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। পাশাপাশি মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিচার ও ভূক্তভোগীদের জন্য সুবিচারের দাবি জানাচ্ছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধ/ গোলাগুলি 

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট ২০২৩ এ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন একজন। এ ঘটনায় অপর পাঁচ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গুরুতরভাবে আহত হন।২ আগষ্ট কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী মো. জাফরকে ধরতে বিজিবির একটি দল অভিযানে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় লোকজন ইট পাটকেল ছুড়লে বিজিবি পাল্টা গুলি চালায়। এতে পথচারী এক রোহিঙ্গাসহ ৬ জন আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ রফিককে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কক্সবাজারে পাঠানো হয়। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইয়াবা উদ্ধারের অভিযানে বিজিবি ওপর হামলা, পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটেছে।

 পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া /অপহরণ/নিখোঁজ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার ৬টি ঘটনায় ১৫ জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৯ জন বিএনপি নেতাকর্মী, ২ জন জামাত শিবিরের কর্মী ও ৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তুলে নেয়ার পর তাদেরকে কোন না কোন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

৩ আগষ্ট আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে বাসায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ উড়াল সড়ক থেকে বিএনপির বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া না গেলেও পরে ডিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সালাহউদ্দিনকে যাত্রাবাড়ী থানাতে দায়ের করা চারটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ায় ডিবি তাঁকে গ্রেফতার করেছে।

৬ আগষ্ট হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের দুই নেতাকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেই তুলে নিয়ে ৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় হাতিরঝিল পশ্চিম থানার আমির ইউসুফ আলী মোল্লা এবং শিবির সভাপতি মাকসুদ আলমকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা বেগুনবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

১৮ আগষ্ট ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আর রিয়াদ ও মমিনুল ইসলাম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ বিল্লাহ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহাদত হোসেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরকে সাদা পোশাকে পুলিশ তুলে নেয়। পরবর্তীতে দুইদিন পর তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে দুজনকে অস্ত্র মামলায় দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। অপরদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় ছাত্রদলের চার নেতার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

১৮ আগষ্ট খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম (৪০), লুইস সৌরভ সরকার (৩০), মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), শর্মিষ্ঠা মণ্ডল (২৬) ও নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪) কে সিআইডি পরিচয়ে তাঁদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ২১ আগষ্ট সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে সিআইডি বলেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকায় পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৯ আগষ্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন দলীয় কার্যালয় থেকে বের হন। মোটরসাইকেল যোগে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে আশপাশে অবস্থান করা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে। অপরদিকে ডিবি পুলিশ তুলে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

২৯ আগষ্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশের সদস্যরা রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছকে তুলে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ডিবি স্বীকার না করলেও এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লালবাগ বিভাগের একটি দল গউছকে আটক করেছে।

এমএসএফ মনে করে, অপহরণ ও নিখোঁজের নামে অপতৎপরতাগুলো গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লংঘন, যা ঠেকানোর দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এ নিয়ে নাগরিক জীবনে চরম উৎকন্ঠা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত আস্থাহীনতা বেড়ে যাচ্ছে।

 আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু

 আগষ্ট ২০২৩ এ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। এমএসএফ মনে করে প্রতিটি হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক।

২২ আগষ্ট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কোর্ট হাজতখানায় মইনুল ইসলাম (২৩) নামের এক আসামির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি মইনুল একজন মাদকসেবি, সোমবার রাতে পাকুড়িয়া এলাকা থেকে ৪ গ্রাম হেরোইনসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা করে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। কোর্ট হাজতখানা সুস্থ অবস্থায় আসামি গ্রহণ করেছে। হাজতখানা থেকে অসুস্থ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মইনুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মইনুলের মৃত্যুর বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সুরতহাল প্রতিবেদনে আত্মহত্যার আলামত উল্লেখ থাকলেও হাসপাতালের মৃত্যু সনদে চিকিৎসক হৃদরোগে আসামির মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

 আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন ও গ্রেফতার এড়াতে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃত্যু

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী, আগষ্ট ২০২৩ মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনসহ গ্রেফতার এড়াতে ধাওয়া খেয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।এমএসএফ মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে অপতৎপরতা চলছে তা বেআইনী, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লংঘন ও ন্যায়বিচারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনেরই নামান্তর এবং আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।

পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃ্ত্যু

৯ আগষ্ট মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাষী বালিগাঁও এলাকায় পুলিশের তাড়া খেয়ে খালে ঝাঁপ দেয় আব্দুল কুদ্দুস (৪২) নামের এক মাদক কারবারি। পুলিশসহ স্থানীয়রা ডাকাডাকি করলেও ওঠেননি এবং একপর্যায়ে পানিতে ডুব দিয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের কর্মীরা কুদ্দুসকে খুঁজে পেতে উদ্ধার অভিযান চালালেও এখনো তাকে উদ্ধার করা যায় নাই।

২৫ আগষ্ট জামালপুর সদর উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের রৌমারি বিল এলাকায় জুয়ার আসরে পুলিশের অভিযানের কথা শুনে রিপনসহ ৬ জন দৌড়ে ঝিনাই নদীতে ঝাঁপ দেয়। ৫ জন সাঁতরে তীরে উঠে গেলেও রিপন ফিরতে পারেননি। পরে ঝিনাই নদী থেকে রিপনের মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন অবশ্য বলেন, অভিযানের সময় পানিতে ঝাঁপ দিয়ে কারও মৃত্যুর খবর জানেন না।

 পুলিশী নির্যাতন ও অন্যান্য

৯ আগষ্ট দুপুরে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সামনে আব্দুর রব মোল্যা নামের এক ফাস্টফুড বিক্রেতা প্রকাশ্যে ও থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় এএসআই শিমন, এসআই ইব্রাহিম ও তাদের সঙ্গে থাকা সাব্বির নামে এক ব্যক্তির হাতে চরমভাবে নির্যাতনের শিকার হন।

১৩ আগষ্ট ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আবদুল খালেক হাওলাদার এ অভিযোগ করেন যে ১০ আগষ্ট রাত ৯টার দিকে একটি হোটেলে নাশতা করছিলেন ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন ওরফে সায়মন (২৮) । এ সময় হোটেলের মালিককে তিন ব্যক্তি গালিগালাজ করছিলেন। রুহুল আমিন তাঁদের নিষেধ করায় ওই তিন ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁকে চরমভাবে শারীরিক নির্যাতন করে একটি পা ভেঙে ফেলেন। পরবর্তীতে পুলিশের থানা হেফাজতে দুই দফায় নির্যাতন করে তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়।

মাদারীপুরের শিবচরে হোটেলের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম রাসেলকে স্থানীয় শাকিল, ওসমান, বাবুল, আশিক ও প্রিন্সসহ ৬-৭ জন যুবক একটি পরিত্যক্ত ঘরে আটকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাতভর নির্যাতন করে। এ ঘটনায় রেজাউল করিম রাসেল থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযোগের সত্যতাও পায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাবে পুলিশ উলটো নির্যাতিত রাসেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত, মামলা ও সমাবেশে যোগদানে বাধা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। প্রতিদিনই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকছে। ফলে এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে হামলা-মামলা ও সংঘাতের ঘটনা চলেছে। বেড়েছে সহিংসতা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাও।  গায়েবি মামলায়  অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে, যার মুখ্য উদ্দেশ্য আপাতভাবে মনে হচ্ছে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সংগঠকদের ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা, যাতে তারা সভা-সমাবেশ করতে না পারে। কোনো সহিংসতা ঘটলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে মামলা করছে এবং অজ্ঞাতনামা অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করছে। আবার সেই অজ্ঞাতনামাদের স্থলে সুবিধামতো ক্ষমতাসীনদের হাতে আক্রান্ত নেতাকর্মীদের নাম বসিয়ে হয়রানি করার দৃষ্টান্ত পাওয়া যাচ্ছে। এইসব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের রাজনীতি করার যে সাংবিধানিক অধিকার তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে যা রাজনৈতিক অঙ্গনকে বিপন্ন করছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট ২০২৩ এ ২৮ টি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে । পুলিশ বাদী হয়ে ২৫ টি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা ৩ টি মামলা করেছে । ২৮টি রাজনৈতিক মামলার মধ্যে ১৪টি বিএনপির, ১০টি জামায়েত ইসলামী বাংলদেশ ও ৪টি মামলা বিএনপি ও জামায়েত ইসলামী বাংলদেশ বিরুদ্ধে যুক্তভাবে করা হয়েছে। এর মধ্যে জামায়েত ইসলামী বাংলদেশের বিরুদ্ধে করা ১ টি মামলায় আসামি করা হয়েছে বগুড়া থেকে ঢাকায় ইলেকট্রনিক সামগ্রী কিনতে আসা  ২ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক  হয়রানিমূলক ২৮টি মামলায় ৪২২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে । যাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে  ৭৬৭ জনের এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩৪৫৯ জনকে। এ সকল মামলার মধ্যে সংবাদমাধ্যমে ৫টি মামলার  সম্পুর্ণ  তথ্য পাওয়া যায়নি।

আগষ্ট মাসে গণমাধ্যমে সূত্র অনুযায়ী, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ৩৪ টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৫৮৩ জন। তাদের মধ্যে ৫৭৯ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৪ জন গুলিবিদ্ধ। নিহতদের মধ্যে ৩ জন ক্ষমতাসীন দলের কর্মী এবং ১ জন বিএনপির কর্মী।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট ২০২৩ মাসে কারা হেফাজতে মোট ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ১১ জন। এ মাসে ১৩ জন হাজতি ও ৮ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে। ৬ আগষ্ট কক্সবাজার জেলা কারাগারে জাফর আলম (২৩) নামের এক রোহিঙ্গা হাজতির মৃত্যু হয়। বিচারের নামে সুবেদার শাহাদাত হাত-পা বেঁধে দুই বন্দিকে নির্মমভাবে পেটান। এ সময় লাঠির আঘাত অণ্ডকোষে লেগে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জাফর আলম। কারা কর্তৃপক্ষ বলেন, দুই রোহিঙ্গা হাজতি নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হলে কারারক্ষী শাহাদাত পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে যান। এ সময় রক্ষীর মারধরে হয়তো বা রোহিঙ্গা জাফর সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারেন। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ জন, টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১৭ বছরের এক কিশোর, কুষ্টিয়া জেলা ২ জন, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ১ জন, কক্সবাজার জেলা কারাগারে ১ জন, মাগুরা জেলা কারাগারে ১ জন, পটুয়াখালী জেলা কারাগারে ১জন, লালমনিরহাট জেলা কারাগারে ১ জন, দিনাজপুর জেলা কারাগারে ১ জন ও রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জনের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, সকল কারাবন্দিকে বাহিরের হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।এমএসএফ মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার/অপব্যবহার

দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার সকল পেশাজীবী সংগঠনের আলোচনার, দাবি উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন ও কিছু ধারার সংশোধনী এনে জামিনযোগ্য ও কিছু সাজার মেয়াদ কমিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংশোধিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা গেছে  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দমনমূলক বিধিগুলো রয়ে গেছে। বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে তুলনায় দেখা গেছে, এই অনুচ্ছেদে একটি ছাড়া সব অপরাধের বিষয় একই আছে। শুধু একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে—অপরাধের ধরণে নয়, শাস্তির ক্ষেত্রে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা সাইবার নিরাপত্তায় ৪২ ধারা হিসেবে একই রয়েছে। এ ধারায় পুলিশ কর্মকর্তা কোনো অফিসে তল্লাশি, কম্পিউটার বা এ-জাতীয় যেকোনো যন্ত্র জব্দ, কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি; এমনকি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করতে পারবে। সাইবার নিরাপত্তা  আইনে সাংবাদিকসহ মুক্তচিন্তার মানুষকে তাঁর মতামত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করা, ভয় দেখানো, হয়রানি, নির্বিচার গ্রেফতার ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এই আইনটি ব্যবহার করা হতে পারে। যেহেতু অনুমোদিত আইনের অনেক ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে, সেহেতু সেসব ধারায় আগের আইনে আটক ব্যক্তিরা ন্যায়সংগতভাবেই জামিন পাওয়ার অধিকার রাখে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৫ টি মামলা হয়েছে । ৪টি মামলায় একজন কিশোরসহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তির অভিযোগে, এবং ১ টি মামলায় বরগুনায় ২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রকাশিত সংবাদের জন্য। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ১ জন কিশোর, ১ জন বিএনপি কর্মী ও ২ জন সাধারণ যুবক। এছাড়া ৩০ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিনসহ আরো তিনজনের বিরুদ্ধে উপজেলা মহিলা লীগের নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল শত্রুতার জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন যা প্রকাশিত হয় ২৬ আগষ্ট। ৩১ জুলাই বিকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে হাবিব বিন মিজান (২৮) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়, পরে তার বিরুদ্ধে সেইদিন রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন  ক্ষমতাসীন দলের কর্মী। এ ছাড়া ২০২১ সালের ১৪ জুন রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনালে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত । এর মাধ্যমে মামলার বিচারকাজ শুরু হলো।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন

 সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্চিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার সামিল। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকেরা নানাভাবে হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যা ছিল উদ্বেগজনক।

দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট মাসে ৪০ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রকাশিত সংবাদের জন্য ২ সাংবাদিকের নামে বরগুনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, ১ জন সাংবাদিকের নামে মানহানির মামলা করা হয়েছে যিনি দৈনিক যুগান্তরের কক্সবাজার প্রতিনিধি, জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা নিয়ে কক্সবাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ সাংবাদিককে পুলিশের কাজে বাঁধা ও  বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট দুইটি মামলায় আসামি করা হয়েছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাযাকে কেন্দ্র করে  বগুড়ায় ২ জন সাংবাদিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে। এছাড়াও ১ জন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী দৌলতদিয়ার, শায়েস্তাগঞ্জ ট্রেনে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে মোট  ১৯ জন সাংবাদিক স্বার্থান্বেসী মহলের দ্বারা আক্রমণে আহত হয়েছেন, ১১ জন সাংবাদিককে হয়রানি করা হয়েছে।

যেভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ।

 অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার

আগষ্ট, ২০২৩ মাসের অত্যন্ত উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অব্যহত থেকেই যাচ্ছে। দুই-একটি ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট, ২০২৩  সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১ জন শিশু, ১ জন কিশোর, ৩ জন নারী ও ১৩ জন যুবক, ৩ জন মাঝ বয়সী ও ৩ জন বৃদ্ধসহ  মোট ২৪ জনের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে যা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ, গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। এসব অজ্ঞাতনামা লাশ বেশীর ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, ব্রীজের নীচে, ও পরিত্যক্ত এলাকায়, বিল বা ফসলী ক্ষেতে, মাথা বিচ্ছিন্ন ও আঘাতের চিহ্ন সম্বলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৯ বছরের শিশু একজন, ১২ বছরের এক কিশোর, ২৪ থেকে ৪০ বছরের যুবক ১৩ জন, যুবতী নারী তিন জন, মাঝ বয়সী ৪০-৫০ বয়সের ৩ জন ও ষাটউর্দ্ধ ৩ জন রয়েছে।

এমএসএফ মনে করে, শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি কিন্তু পুলিশের সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

১২ আগষ্ট সিরাজগঞ্জে তেবাড়িয়া এলাকায় যমুনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত (৯) এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। সিরাজগঞ্জের চৌহালী নৌ-থানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক আহমেদ বলেন, অজ্ঞতনামা শিশুটির মরদেহ নাগরপুর থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচয় না পেলে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে মরদেহ দাফন করা হবে।

২৫ আগষ্ট চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর সড়ক পাশে একটি বন্ধ গ্যারেজের সামনে থেকে ছুরিকাঘাতে নিহত অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত কিশোরের বয়স আনুমানিক ১২ বছর। তার মাথায় ও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।

 সীমান্তে হত্যা ও পরিস্থিতি

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্তে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না বরং ঘটেই চলেছে। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিতে ১ জন নিহত, ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত, ভারতীয় কয়লা আনতে গিয়ে এক কিশোর নিহত হয়েছেন, ও  সীমান্তেবর্তী এলাকা থেকে এক ভারতীয় নাগরিকের ও একজন বাংলাদেশী নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  অপর একটি ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি এক যুবকের মরদেহ ২ মাস ১৮ দিন পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।এমএসএফ মনে করে, সরকার সীমান্ত হতাহতের প্রতিবাদ ও প্রতিকারে যে ব্যর্থতা দেখাচ্ছে তা জনমনে ক্রমাগত প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।

২২ আগষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ১৯ বিঘি গ্রামের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাবলু হক (৩৬) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছে।

১৪ আগষ্ট ঝিনাইদহের মহেশপুর যাদবপুর ইউনিয়নের লেবুতলা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে গরু আনতে যাওয়ার চেষ্টা করে সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে আশিক হোসেনসহ অজ্ঞাত অপর এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

২২ আগষ্ট লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ ২ মাস ১৮ দিন পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। গত ৪ জুন দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটে পাটগ্রাম ইউনিয়নের শেষ ও জগতবেড় ইউনিয়নের শুরু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ইউছুফ।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা

নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভুমিকা লক্ষ্যণীয় নয়। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট মাসে দেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যেমন: ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা ও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা গত মাসের তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেড়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট মাসে ৩৬১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৫৭টি, গত মাসের তুলনায় ৭টি কম, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৫টি, যা ১টি বেশী, ধর্ষণ ও হত্যা ২টি। এর মধ্যে ৬ জন প্রতিবন্ধি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী গত মাসে ৩২৪টি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল।

উল্লেখ্য যে ধর্ষণের শিকার ৫৭ জনের মধ্যে ১৩ জন শিশু, ২০ জন কিশোরী রয়েছে, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬ জন কিশোরী এবং ধর্ষণ ও হত্যার, ১ জন কিশোরী ও ১ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৩টি, যৌন হয়রানি ২৭টি ও শারীরিক নির্যাতনের ৪৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে ১জন শিশু, ২০ জন কিশোরী ও ৫২ জন নারীসহ মোট ৭৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।

অ্যাসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন নারী। এ মাসে ২ জন কিশোরী অপহরণের শিকার হয়েছেন। অপরদিকে  ২ জন কিশোরী ও ১ জন নারী নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়াও আগষ্ট মাসে ১৩ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮৮ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ২০ জন শিশু ও ১০ জন কিশোরী রয়েছেন। আগষ্ট মাসে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন ৮২ জন। গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত, অভিমান, পরিক্ষায় অকৃতকার্য্য হওয়া ইত্যাদি কারণে এ হত্যাকান্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে। এ মাসে শারীরিক নির্যাতন ও পারিবারিক কলহের বিষয়ে ৮টি ঘটনা সালিশে মীমাংসা ও ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ৪টি ঘটনা সমাজপতিরা আপোষ করেছেন যা প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করে বেআইনি ভাবে সালিশে মীমাংসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

এ মাসেও ৯ জন মৃত নবজাতক শিশুকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে যা অমানবিক ও নিন্দনীয়। এ সমস্ত শিশুদেরকে কি কারণে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিরূপনের চেষ্টা করছে না।

সংখ্যালঘু নির্যাতন

গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের অন্তত ৩টি ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ২টি ঘটনার ১৮ আগষ্ট ঠাকুরগাঁও পৌরসভার পরিষদপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছুরিকাঘাৎ করে ইস্টফান নামের এক যুবককে হত্যা করে। ২৮ আগষ্ট নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর বাঁশপাড়া গ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক পাহান গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করেছে স্থানীয় মাতবররা।

অপর একটি ঘটনায় ২১ আগষ্ট রংপুর সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন বৃদ্ধি, ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন, নতুন নিয়োগসহ ১১দফা দাবিতে হরিজন সম্প্রদায়ের কর্মচারীরা আদায় সংগঠনের ব্যানারে রোববার দুপুরে সিটি করপোরেশনের সামনে বিক্ষোভ করে হরিজনরা। তাদের বিক্ষোভের কারণে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এ ঘটনা নিয়ে হরিজন ও সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা একে অপরের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। উত্তেজনার মাঝে গতকাল দুপুরে হরিজনরা ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে। পরে তারা সিটি করপোরেশন কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে হরিজনদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে সিটি করপোরেশন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 গণপিটুনি

গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগষ্ট, ২০২৩ মাসের উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোকে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড হিসেবেই গণ্য করা যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে অন্তত ১৭টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১২জন নিহত ও ১৪ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। সন্দেহজনক চুরি বা ডাকাতির বা পূর্ব শত্রুতার জেরে সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এমএসএফ মনে করে, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারী অপরাধ। গণপিটুনির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

২ আগষ্ট লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে পূর্ব দুহুলী এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাইজুদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবককে গণপিটুনি হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। ৪ আগষ্ট ঢাকার ধামরাইয়ে চুরির অপবাদে সালিশি বৈঠকে হাছান নামে এক ড্রাইভারকে গণপিটুনি দেয়াসহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে ওই ড্রাইভারের ঝুঁলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। ৫ আগষ্ট গাজীপুর মহানগরীর জিএমপি সদর থানাধীন মজলিশপুর কাজীপাড়া ব্রিজ সেলুঘাটের পশ্চিম এলাকায় ডাকাত সন্দেহে মোল্লা আতাব উদ্দিন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধকে এলাকাবাসী ডাকাত সন্দেহে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২ আগষ্ট টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মিনাবাজার মালেকের ঘোনা নামক স্থানে এলাকায় অপহরণকারীর অভিযোগে দুই অপহরণকারীকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে আজিমুল্লাহ নামে একজন রোহিঙ্গা মারা যান, অপরজন গুরুতর আহত হয়েছেন । ৯ আগষ্ট ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে চুরির অপবাদ দিয়ে বাবু শেখ নামের যুবককে ২ দিন আটক রেখে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। ১৭ আগষ্ট নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় কল্যানপুর শ্মশানঘাট এলাকায় প্রেমের সম্পর্কের জেরে সুফল বিশ্বাস (৩৪) নামে এক যুবককে হাড়ুড়ি ও লোহার রড় দিয়ে গণপিটিয়ে গুরুতর আহত করলে একই দিনে দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা। ২ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আ. আউয়াল (৫০) নামে এক টেক্সটাইল মিলের কেয়ারটেকারকে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে জখম করেছে শ্রমিকেরা। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ আগষ্ট রাতে তার মৃত্যু হয়।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, দি ডেইলি ষ্টার, নিউএইজ, কালের কন্ঠ, যুগান্তর, সংবাদ, জনকন্ঠ, আমাদের সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক মানবজমিন, সমকাল, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, ঢাকা ট্রিবিউন, বিডি নিউজ ২৪, বাংলাদেশ জার্নাল, যায়যায় দিন, জাগো নিউজ ও অন্যান্য জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে উপরোক্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়াও প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই স্থানীয় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে ভেরিফাই করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ১ আগষ্ট ২০২৩ থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

 

 

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD