অান্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক : ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর জেলায় ঘটে গেল চোখ কপালে তোলার মতো এক ঘটনা। কানপুরের বাসিন্দা ঊর্মিলা যাদব ধাক্কাটা সামলে নিয়েছেন। তিনি গৃহস্থালির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বেশ কষ্টেই সংসার চলে তার। অথচ, এই তো কয়দিন আগে ঊর্মিলা বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজনে পরিণত হলেন। তবে বিষয়টা অনেকটা একদিনের মহারাজা বা মহারানী
হওয়ার মতো। তার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) অ্যাকাউন্টে জমা পড়লো ৯ হাজার ৫৭১ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪৭ রুপি। এ খবর জানতে পেরে তো তার চোখ ছানাবড়া। কিছুতেই তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ব্যাপারটা। এ খবর দিয়ে অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ঊর্মিলা এসবিআইর কানপুর শাখায় ২০০০ রুপি জমা দিয়ে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের জনপ্রিয় ‘জন ধন যোজনা’র অংশ হিসেবে অ্যাকাউন্টটি খোলেন তিনি। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে ঊর্মিলার মোবাইলে দুটি মেসেজ যায়। বার্তা দুটি পড়ে তিনি তো বিস্ময়ে হতবাক, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অবিশ্বাস্য ঘটনায় নড়েচড়ে বসলেন তিনি। প্রথম মেসেজটিতে বলা হলো, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৯ লাখ ৯৯ হাজার রুপি জমা পড়েছে। অপর মেসেজটিতে বলা হলো, তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৯ লাখ ৯৭ হাজার রুপি কেটে নেয়া হয়েছে এবং ব্যালেন্সবাবদ ২০০০ টাকা জমা আছে। ফের একটা ধাক্কা খেলেন তিনি। কই তিনি তো এর মধ্যে কোন লেনদেনই করেননি!
ঊর্মিলা বলছিলেন, আমি নিজেকে মনে মনে জিজ্ঞেস করছিলাম, কিভাবে আমার অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ রুপি এলো আবার চলেও গেলো। কিন্তু, আরও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছিল তার জন্য। ওই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন লালতা প্রসাদ তিওয়ারি নামে এক ভদ্রলোক। তাকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ব্যাংকে পৌঁছান তিনি। এবার অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে গিয়ে হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলো। নিজ কানে শুনলেন এবং নিজ চোখে দেখলেন তার অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৯৫,৭১,১৬,৯৮,৬৪৭ দশমিক ১৪ রুপি। স্বাভাবিকভাবেই, ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাথাতেও কোনভাবে আসছিল না, কিভাবে এটা সম্ভব। কেউ কেউ তো একবারে টাকার অঙ্কটাও হিসাব করতে পারলেন না। তারাও হকচকিয়ে গেলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠ কেরানির দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ভিকে শ্রীবাস্তব ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, এমনটা ঘটেছে নিষ্ক্রিয় একটি অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার প্রক্রিয়া হিসেবে। ঊর্মিলার অ্যাকাউন্টটি বেশ কিছুদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় পড়ে ছিল। হিসাবটি চালু রাখার জন্য তিনি পর্যাপ্ত ব্যালেন্স জমা করেননি। ব্যাংকের কর্মচারীরা বলছিলেন, অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বা হিসাবরক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের পথ হিসেবে এমনটা করা হয়েছে, যাতে তিনি অ্যাকাউন্টটি আর কোনদিন ব্যবহার করতে না পারেন। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাংক হিসাবধারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের টাকা জমা করে, পরে আবার তা কর্তন করে নেয়। অর্থাৎ, পুরো বিষয়টিই করা হয় হিসাবধারীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। কিন্তু, এমনটা করার কি কোন বৈধতা রয়েছে? চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অভিষেক গুপ্ত বলছিলেন, হিসাবধারীর অনুমতি ছাড়া টাকা জমা বা কর্তনের কোন অধিকার বা এখতিয়ার নেই ব্যাংকসমূহের। তিনি বলেন, যা ঘটেছে, তার জন্য দায়ী ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ার যুক্তি কি? প্রথমত কেনইবা তাকে ওই দুটি ভৌতিক মেসেজ দেবে, সেটা মেনে নিতে পারছেন না তিনিও। অভিষেক বলেন, এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত প্রয়োজন। ঊর্মিলার কাছে অবশ্য ব্যাংক যে ২ হাজার রুপি দিয়ে চালু করেছিলেন, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভৌতিক টাকার কোন লোভ তার নেই। ওই টাকাটা হারাতে চান না তিনি। ঊর্মিলা বলেন, এটা কিভাবে ঘটেছে, তা নিয়ে আমি কোন ঝামেলায় বা বাগবিতণ্ডায় যেতে চাই না। আমার উদ্বেগ হচ্ছে ২০০০ রুপি নিয়ে। সেটা নিরাপদে সংরক্ষিত থাকলেই আমি খুশি। যাই হোক, ঊর্মিলার জন্য খুশির খবর হলো, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তার সঞ্চয়ী হিসাবটি পুনরায় চালু করে দিয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে এখন তার ব্যালেন্স বা জমা টাকার পরিমাণ দেখানো হচ্ছে ২ হাজার রুপি।