সংবাদপত্রের পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার কারণে ভয়ঙ্কর অঘটনের খবর। ইদানীং ‘পরকীয়ার কারণে মৃত্যু’ বাক্যটি মিডিয়ায় বার বার উচ্চারিত হচ্ছে।
পরকীয়ার অদৃশ্য ফাঁদে আটকে আত্মহনন করছে অনেক নারী-পুরুষ। নিষ্পাপ শিশু সন্তানকে হারাতে হচ্ছে মায়ের আদর। পরকীয়ার পথে সন্তান বাধা হওয়ায় সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। কখনো নিজ সন্তানকে টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে বস্তাবন্দী করে রাখা হচ্ছে। এর বলি হয়ে কখনো প্রেমিকাকে নিহত হতে হচ্ছে প্রেমিকের হাতে। ২ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় পরকীয়ার কারণে নিজ স্বামী ও কন্যাকে হত্যা করেন আরজিনা বেগম। কী নির্মম! পরকীয়াই স্নেহময়ী মা থেকে আরজিনাকে রাক্ষসীতে পরিণত করেছে। পরিবারের বেহেশতি পরিবেশ দূর করে একে পরিণত করছে দোজখে। অশান্তি নেমে আসছে সামাজিক জীবনে। ভেঙে যাচ্ছে পরিবার। পরিবার ভেঙে যাওয়ায় নিরপরাধ শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে বাবা-মায়ের আদর থেকে। যেহেতু এহেন ভয়ঙ্কর প্রবণতা মানুষকে স্বামী-স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার মতো সীমালঙ্ঘনে উৎসাহ দেয় তাই সমাজের পরিবেশ সুস্থ রাখতে ইসলাম একে কঠোর হাতে দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গোটা সমাজের অশান্তির কারণ হওয়ায় বিবাহিত পুরুষ কিংবা নারী যদি ব্যভিচার তথা পরকীয়ায় লিপ্ত হয় তাহলে ইসলাম মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। যেহেতু এর ক্ষতি ভয়ঙ্কর, মারাত্মক ও তীব্র তাই ইসলাম এর জন্য কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছে। দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি উদাসীনতা এর বড় একটা কারণ। ইসলাম নারী-পুরুষ সবাইকে চরিত্র হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। চরিত্র নষ্ট করতে পারে এমন কোনো কাজের কাছেও যেতে নিষেধ করেছে। সূরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না’। কাছেও যেও না মানে কী? যে জিনিস মানুষকে ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যেতেই নিষেধ করেছে। যেসব কাজ করলে মানুষ ব্যভিচারে ধাবিত হয় সেসব কাজ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। যে ফোনালাপ মানুষকে ব্যভিচারে উৎসাহিত করে তাও এ আয়াতের মাধ্যমে হারাম করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরকীয়ার সূত্রপাত হয় ফোনালাপ কিংবা অনলাইন চ্যাটিং থেকে। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। মহিলাদের পুরুষের সঙ্গে, পুরুষদের মহিলাদের সঙ্গে ফোনালাপের ক্ষেত্রে সংযত হলে পরকীয়ার দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যেত। তাই প্রয়োজনে কোনো পুরুষ কোনো মহিলার সঙ্গে কথা বলার সময়ও কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গি পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পবিত্র কোরআনের সূরা আহজাবের ৩২ নম্বর আয়াতে। শুধু মহিলাদেরই নয়, বরং সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহতায়ালা পুরুষদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
লেখক : যুবায়ের আহমাদ, খতিব, বাইতুশ শরিফ মসজিদ বোর্ডবাজার (আবদুল গনি রোড), গাজীপুর।