দুপচাঁচিয়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের নবান্ন উৎসব

Spread the love

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া): ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যময় বাংলার প্রকৃতি। প্রতি ঋতুই নিজ নিজ সাজে সজ্জিত করে তোলে প্রকৃতিকে। গ্রীষ্মের রুদ্ররূপ, বর্ষার বিরহিনী, শরতের স্নিগ্ধময়ী শারদলক্ষ্মী আর হেমন্তের কুয়াশার অবগুণ্ঠনে ঢাকা হৈমন্তিকা বয়ে নিয়ে আসে এক শুভ্র বার্তা। সেই বারতায় নবান্নের বার্তা।

সাড়াটি বছর মাথার ঘাম পায়ে ঝড়িয়ে কৃষকের সোনালি ফসল ঘরে তোলার বার্তা। সেই উৎসবের নাম মাটির সঙ্গে চিরবন্ধনযুক্ত ‘নবান্ন’ উৎসব। নতুন ধানের চালে রাঁধা অন্নই হলো নবান্ন।

‘নবান্ন’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘নতুন অন্ন’। কার্তিকে কৃষকের শূন্য গোলা পূর্ণ করতে অগ্রহায়নের আগমন। বহুল প্রতিক্ষিত আমন ধানই কৃষকের হাসির উৎস। পহেলা অগ্রহায়ণ, গ্রাম বাংলা কৃষকের নবান্ন উৎসব। এ উৎসবটি বিশেষ করে সনাতন ধর্মালম্বীরা জাকজমকভাবে পালন করে। শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরায় নয়, আবহমান বাংলার কৃষককূল এ দিনটি পালন করে থাকেন। নবান্নকে ঘিরে কৃষকের স্বকীয়তা মহামিলনের দিন হিসাবে গন্য করা হয়। শুরু হয় চৌচির মাঠ থেকে সোনালি ধান কাটার পালা। কৃষকের সারা উঠোন সোনারূপী ধানে ভরে যায়। কৃষানীর কুলোয় ধান ঝারার শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী পঞ্জিকা মতে বুধবার (অগ্রহায়ণের প্রথম দিন) হিন্দু ধর্মালম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করেছেন। এ উৎসব পালনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নানা আয়োজন করে থাকে। এদিন প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় আতপ চাল গুলিয়ে আল্পনা আঁকে, উঠান ও ধানের গোলায় গোবর গুলিয়ে লেপ দেয়। সকালে ছোট ছোট ছেলের দল স্নান (গোসল) করে নতুন ধুতি পড়ে বয়স্ক লোকদের সঙ্গে আবাদি জমিতে যায়। সেখান থেকে তিন গোছা ধান কেটে তাতে সিঁদুর, কাজলের টিপ দেয়া, কলাপাতা দিয়ে ঢেকে মাথায় করে বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে আসে। এ সময় গৃহবধূরা শঙ্খ বাজিয়ে উলুধ্বনি দেয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানকে এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ে লোকজন আগকাটা (প্রথম ধান কাটা) বলে থাকেন। তারপর কাটা ধানগাছের গুচ্ছ ঘরের ছাদের তীরে আটকিয়ে রাখা হয়। এটি হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটি ঐতিহ্য।

উপজেলা সদরের কুণ্ডুপাড়ার শিক্ষক সুদেব কুমার কুণ্ডু, কইল গ্রামের স্বপন চন্দ্র শীল, সরঞ্জাবাড়ী গ্রামের কানু মণ্ডল বলেন, নবান্ন উৎসবটি গ্রাম বাংলার অতীত ঐতিহ্যের প্রতীক। লৌকিকতা এ অনুষ্ঠানটিকে শুধু হিন্দু ধর্মালম্বীরাই নন, অন্য ধর্মের লোকেরাও আনন্দের স্বাদ খুঁজে পান।

এদিকে এ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে বড় বড় মাছের আমদানি হয়। সাধ্যমতো লোকজন রকমারী সবজিসহ এ সব মাছ কিনে হরেক রকম সুস্বাদু রান্না তৈরি করে আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নে ধুম পড়ে যায়।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD